আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলাদেশটাকে বুঝতে পারি না
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/02/15/photo-1487130352.jpg)
১৯৩৬ সালে কলকাতার ফাইন আর্ট পাবলিশিং হাউস থেকে প্রকাশিত হয় আমার উপন্যাস জীবনের জটিলতা। এ সময়ই প্রকাশিত তাঁর বেশ কিছু গল্প। জুলাই মাসে (শ্রাবণ ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) ‘উত্তরা’ পত্রিকায় ‘ওমিলনাইন’ ও ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় ‘সাহিত্যিকের বৌ’, সেপ্টেম্বর মাসে (আশ্বিন ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় ‘অন্ধ’, অক্টোবর মাসে (কার্তিক ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকায় ‘চাকরি’, নভেম্বর মাসে (অগ্রহায়ণ ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) ‘মাথার রহস্য’ এবং ডিসেম্বর মাসে (পৌষ ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) ‘অগ্রগতি’ পত্রিকায় ‘দিক পরিবর্তন’। এ সময়টায় আমি আবার পরিবারের অন্যদের সঙ্গে থাকা শুরু করি। কলকাতার বেলগাছিয়ার একটি ঘরে ছিল আমার বাস। তবে পরিবারে থেকেও দাদা-বৌদিদের সঙ্গে ছিল আমার মতের চরম অমিল। বলতে গেলে কোনো বিষয়েই আমার ঙ্গে তাদের বনিবনা হতো না। সারাক্ষণ কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। এর মধ্যেই লেখালেখি চালিয়ে যেতাম আমি। ১৯৩৭ সালের এপ্রিল মাসে গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স থেকে প্রকাশিত হয় আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ প্রাগৈতিহাসিক। এর আগে সেই বছরের জানুয়ারি মাসে (মাঘ ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) বঙ্গশ্রী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করে আমার আরেক উপন্যাস অমৃতস্য পুত্রাঃ। মোট বারো কিস্তিতে শেষ হয় এ উপন্যাসটি। এ সময় বঙ্গশ্রী পত্রিকায় জানুয়ারি মাসে (মাঘ ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) ‘দিনের পর দিন’, অগ্রগতি পত্রিকায় মার্চ মাসে (চৈত্র ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) ‘সিঁড়ি’, মে মাসে (জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ) ‘হাত’, জুলাই মাসে (শ্রাবণ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ) ‘পরিচয়’ এবং সেপ্টেম্বর মাসে (ভাদ্র ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ) ‘অবগুণ্ঠিত’ গল্পগুলো প্রকাশিত হয় আমার।
শুধু লেখালেখি করে পেট চালানো দায় হয়ে পড়ায় আমি এ সময়টায় আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হই। যোগদান করি জীবনের প্রথম চাকরিতে। মেট্রোপলিটন প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস লিমিটেড পরিচালিত মাসিক ও সাপ্তাহিক বঙ্গশ্রী পত্রিকায় মাসিক ৬৫ টাকা বেতনে আমি নিযুক্ত হই সহকারী সম্পাদক হিসেবে। সেই সময় ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন কিরণকুমার রায়। সেই বছরের শেষ দিকে টালিগঞ্জের দিগম্বরীতলায় বাবার কেনা বাড়িতে বাবা ও অন্য তিন ভাইয়ের একান্নবর্তী সংসারে বসবাস করতে শুরু করি আমি। পরবর্তী ১১ বছর ওই এক বাড়িতেই কাটে আমার। এ সময় আমার জীবনে এক বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে যায়। রাশিয়ান লেখক নিকোলাই ইভানোভিচ বুখারিনের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ এবং এল. লিয়েনতিয়েভের মার্কসীয় অর্থনীতি বই দুটি ভীষণ নাড়া আমার ভেতর। এতকালের ফ্রয়েড দর্শনের ভিত নড়ে যায়। সমাজতন্ত্রের প্রবোক্তা কার্ল মার্ক্সের বিশ্বনন্দিত মতবাদ মার্কসীয় মতাদর্শে উজ্জীবিত হই আমি। এর ফলে আমার লেখায় এর প্রভাব পড়ে ব্যাপক। তবে লেখালেখির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় আমার মৃগীরোগ। একটা সময় এ রোগের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। চিকিৎসকের পরমর্শ অনুযায়ী তো চলেই, সেই সাথে ডাক্তারি প্রেসক্রিপশনে যেসকল ওষুধ লেখা থাকে তার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাই আমি। ডাক্তারের দেওয়া স্নায়ু অবশকারী ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করার লক্ষ্যে নিজেই চিকিৎসাবিদ্যার বই ঘেঁটে পথ খোঁজার চেষ্টা করি। এতে হিতে বিপরীত হয়। বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে আমি নিজের জন্য যে ওষুধের ব্যবস্থা করি তাতে অ্যালকোহলের পরিমাণ থাকে মাত্রাতিরিক্ত। নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তৈরি এ ওষুধ দিনের পর দিন সেবনের ফলে একটা সময় অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ি আমি। তখন প্রতিনিয়ত মদ খাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয় আমার।
১৯৩৮ সাল। আমার মৃগীরোগের চিকিৎসার ভার নেন সেসময়ের প্রখ্যাত ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুয়ায়ী শারীরিক ও মানসিক স্থিতিশীলতার জন্য আয়োজন করা হয় আমার বিয়ের। পাত্রী খুঁজতে ফিরতে হয় আবার সেই ফেলে আসা আমাদের আদি বাসভূমি বিক্রমপুরে। সেই বছরের মে মাসে ( বৈশাখ ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ) বিক্রমপুরের পঞ্চসার গ্রামের প্রয়াত সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে কমলা দেবীর সাথে বিয়ে হয় আমার। আমার শ্বশুরমশাই, অর্থাৎ কমলার বাবা একসময় ছিলেন ময়মনসিংহের সরকারি গুরুট্রেনিং বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর্থিকভাবে তেমন স্বচ্ছল না হলেও, বংশমর্যাদা ছিল বেশ। গ্রামে আমার শ্বশুরের বেশ নামডাকও ছিল। শুরু হলো আমার সংসার ধর্ম পালন। তবে আমি যে খুব একটা সাংসারিক মানুষ ছিলাম না, তা বুঝতে কমলার বেশি দিন লাগেনি। তাই তো বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি ইস্তফা দিই বঙ্গশ্রী পত্রিকার চাকরি। বঙ্গশ্রী কটন মিলের মালিক সচ্চিদানন্দ বাবুর সঙ্গে আমার মতের কোনোভাবেই মিলছিল না। সহকারী সম্পাদকের পদে একটা নিশ্চিত আর্থিক রোজগার ছিল বটে, তবে মান খুইয়ে, আপস করে আমি কোথাও থাকতে পারিনি। চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে শুরু করি ব্যবসা। তবে ব্যবসা করতে হলে যে ধরনের মাথা লাগে তা আমার ছিল না। তাই ছোট ভাই সুবোধকুমারকে সাথে রাখি। তারই সহায়তায় গড়ে তুলি উদয়াচল প্রিটিং অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস নামে একটি ছাপাখানা ও প্রকাশনা সংস্থা। এদিকে এ বছরের জানুয়ারি মাস (মাঘ ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ) থেকে ‘পরিচয়’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে আমার অহিংসা উপন্যাসটি। এটি শেষ করতে আমার প্রায় দুই বছর সময় লেগে যায়। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে এর ইতি টানি। ১৯৩৯ সালের আগস্ট মাসে গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স থেকে প্রকাশিত হয় আমার চতুর্থ গল্পগ্রন্থ সরীসৃপ। সেপ্টেম্বর মাসে শারদীয় ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় বের হয় আমার একটি সম্পূর্ণ উপন্যাস সহরতলী। মূলত পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় সম্পূর্ণ উপন্যাস ছাপানোর ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। আমার উপন্যাসটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই রীতি চালু হয়। অক্টোবর মাসে (কার্তিক ১৩৪৬ বঙ্গাব্দ) থেকে মাসিক ‘পত্রিকা’য় এই শহরতলী উপন্যাসটির দ্বিতীয় পর্বের প্রকাশ শুরু হয়, যা শেষ হয় পরবর্তী আশ্বিনে এসে।
১৯৪০ সালের শুরুর দিকে আমি নিজের প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশ করি আমার পঞ্চম গল্পগ্রন্থ বৌ। তবে দুঃখজনক হলো, এই বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে বন্ধ হয় যায় নিজের গড়া প্রতিষ্ঠানটি। আর্থিক লোকসান, তত্ত্বাবধানের অভাব, ব্যবসা প্রসারের অনভিজ্ঞতা ছিল এর জন্য দায়ী। তাই এ বছরের জুলাই মাসে গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স থেকে প্রকাশ করতে হয় আমার সহরতলী (প্রথম পর্ব) বইটি। ১৯৪১ সালে এই প্রতিষ্ঠানটিই বই আকারে প্রকাশ করে আমার সহরতলী উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব। একই বছর ডি.এম. লাইব্রেরি থেকে আমার অহিংসা এবং ফাইন আর্ট পাবলিশিং হাউস থেকে ধরাবাঁধা জীবন উপন্যাস দুটি প্রকাশিত হয়। বই আকারে প্রকাশের আগে সেপ্টেম্বর মাসে (আশ্বিন ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ‘নর-নারী’ পত্রিকায় সম্পূর্ণ ছাপা হয় এই ধরাবাঁধা জীবন উপন্যাসটি। এদিকে এপ্রিল মাস (বৈশাখ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) থেকে ‘প্রবর্তন’ পত্রিকায় আদায়ের ইতিহাস উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে অগ্রহায়ণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত পাঁচ কিস্তি প্রকাশ হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। তবে বৈশাখ ১৩৫০ বঙ্গাব্দে এসে উপন্যাসটি পুনঃপ্রকাশ করা শুরু হলে তা পরের বৈশাখে এসে শেষ হয়। ১৯৪২ সালের মে মাসে (জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৯ বঙ্গাব্দ) ডি.এম. লাইব্রেরি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে আমার চতুষ্কোণ উপন্যাস। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকা তাদের শারদীয় সংখ্যা প্রকাশ করে আমার আরেকটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস সহরবাসের ইতিকথা।
১৯৪৩ সালে এসে আমার জীবনে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়। মানবেন্দ্র রায়ের র্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক দলের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে আমি সেসময় ভারত সরকারের ন্যাশনাল ওয়ার ফ্রন্টের প্রাদেশিক সংগঠক (প্রভিন্সিয়াল অরগানাইজার) হিসেবে যোগ দিই। সেই সাথে বেঙ্গল দপ্তরে প্রকাশনা সহকারী (পাবলিসিটি অ্যাসিস্ট্যান্ট) পদে নিযুক্ত হই। এই বছরের শেষ ভাগ পর্যন্ত এ চাকরি করি আমি। এই চাকরির সুবাদে গ্রামবাংলার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরার সুযোগ হয় আমার। সেই সাথে অল ইন্ডিয়া রেডিও’র কলকাতা কেন্দ্র থেকে যুদ্ধ বিষয়ে প্রচারণাসহ নানা রকম বেতার অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগও ঘটে। এই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে (আশ্বিন ১৩৫০ বঙ্গাব্দ) ‘যুগান্তর’ পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় ছাপা হয় আমার প্রতিবিম্ব উপন্যাসটি। লেখাটি ওই বছরেই বই আকারেও প্রকাশ পায়। আর তারই সূত্রে আমার যোগাযোগ ঘটে ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের সাথে। একসময় এই সংঘের সাংগঠনিক কার্যক্রমেরও জড়িয়ে পড়ি আমি। এদিকে সুনীলকুমার ধর সম্পাদিত ‘নতুন জীবন’ পত্রিকার প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা (পৌষ ১৩৫০ বঙ্গাব্দ, ডিসেম্বর ১৯৪৩ সাল) থেকে প্রকাশিত হয়ে দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যায় (বৈশাখ ১৩৫২ বঙ্গাব্দ) বারো কিস্তিতে এসে শেষ হয় আমার খুনি উপন্যাসটি। এই লেখাটি সেসময় বই আকারে প্রকাশ পায়নি। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি তাদের মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্রর ১১ তম খণ্ডে সংকলিত করে আমার এ অগ্রন্থিত উপন্যাসটি।
১৯৪৪ সালের ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতিমণ্ডলীয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করি আমি। এরপর ২৫ থেকে ২৭ আগস্ট যোগাদান করি ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ববঙ্গ প্রগতি লেখক ও শিল্পী সম্মেলনে এবং সাধারণ অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্বভার দেওয়া হয় আমাকে। এসময় সংঘ থেকে ‘কেন লিখি’ নামে একটি সংকলন বের হয়। সংকলনটি সম্পাদনা করেছেন হিরণকুমার সান্যাল ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়। এটিতে ‘বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাশিল্পীদের জবানবন্দী’- এই ঘোষণা থাকলেও এতে কথাসাহিত্যিকদের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেছিলেন অনেক কবিও। আমি ছাড়াও এ সংকলনটিতে লিখেছেন : ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অন্নদাশঙ্কর রায়, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, শাহাদাৎ হোসেন, গোপাল হালদার, জীবনানন্দ দাশ, সরোজ বসু, শচীন সেনগুপ্ত, আবুল মনসুর আহমদ, অমিয় চক্রবর্তী, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার, প্রেমেন্দ্র মিত্র ও বিষ্ণু দে। যাই হোক, এই বছরেই আমি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য লাভ করি এবং মৃত্যুর দিন পর্যন্ত আমি পার্টি ও এর সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখি। বছরে মাঝামাঝি, মানে আগস্ট মাসে ‘রূপমঞ্চ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ভয়ঙ্কর নামে আমার একটি নাটিকা। সেপ্টেম্বর মাসে ‘নতুন জীবন’ পত্রিকায় প্রকাশ পায় ‘যৌন জীবন’ নামে একটি প্রবন্ধ। সেই সাথে গণনাট্য সংঘের প্রকাশনায় বের হয় প্রবন্ধ ‘ভারতের মর্ম্মবাণী’। এদিকে সঞ্জয় ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় প্রকাশিত Stories of Rural Bengal বইটিতে সংকলিত হয় আমার গল্প Hut makers Romance।
১৯৪৫ সালের ৩ থেকে ৮ মার্চ কলকাতার মহম্মদ আলী পার্কে অনুষ্ঠিত ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক শিল্পী সংঘের তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলনেও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করি আমি। এসময় সর্বভারতীয় সংস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে সম্মেলনে এর নাম রাখা হয় ‘প্রগতি লেখক সংঘ’। এ সম্মেলনে আমি সংঘের কার্যকরী কমিটির অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হই। ১৯৪৬ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে কমিউনিস্ট প্রার্থী কল্পনা দত্তের সমর্থনে জনসভায় যোগ দিতে হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে চট্টগ্রাম যাই আমি। এসময় সেখানকার মিলিটারি বর্বরতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখি। সেটি ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত হয় ‘জনযুদ্ধ’ পত্রিকায়। এ মাসের ৩১ জানুয়ারি ৪৬ ধর্মতলা স্ট্রিটে প্রগতি লেখক সংঘের কার্যালয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় চীনা সাহিত্যিক চেন হান সেং-এর। তাঁর সান্নিধ্য আমাকে খুবই আন্দোলিত করে।
এদিকে এই বছরেরই ১৬ আগস্ট ও এর পরবর্তী কয়েক দিন ছিল ইতিহাসের কালো অধ্যায়। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে লেগে যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এসময় দাঙ্গা-বিধ্বস্ত কলকাতার টালিগঞ্জ এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দাঙ্গাবিরোধী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাই।
১৯৪৭ সালের মে মাসে তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টচার্যের অকাল মৃত্যু আমাকে দারুনভাবে আহত করে। সুকান্তকে স্মরণ করে সেসময় আমি একটি প্রবন্ধ লিখি। ‘কবিও পেয়ে গেছে নতুন যুগ’ নামের সেই প্রবন্ধ প্রকাশ করে ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকা। এর মধ্যে অনেক লেখাই প্রকাশিত হয় আমার। তবে একটি লেখার কথা আমি স্মরণ করতে চাই। সেপ্টেম্বর মাসে শারদীয় ‘বসুমতী’ পত্রিকায় এই প্রথম আমার কবিতা নিয়ে কোনো রচনা লিখি। কবিতা লেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত ‘প্রথম কবিতার কাহিনী’ লেখাটিতে আছে আমার কবিতার জন্মকথা।
১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে জে. জে. প্রোডাকশনের সাথে আমার পুতুলনাচের ইতিকথা ছায়াচিত্রের চুক্তি সই করি আমি। এ বছরের মে মাসে বোম্বাইয়ের (বর্তমান মুম্বাই) কুতুব পাবলিশার্স প্রকাশ করে আমার পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ। হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের অনূদিত এ বইটির নামকরণ করা হয় Boatman of the Padma।
১৯৪৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সাংসারিক অশান্তি এড়াতে বাবা তাঁর টালিগঞ্জের বাড়িটি বিক্রি করে দেন হঠাৎ। সেই সাথে বাড়ি বিক্রির টাকা তিনি ভাগ করে দেন তাঁর ছেলেদের মধ্যে। পাশাপাশি ছেলেদের মধ্যে যাদের অবস্থা সচ্ছল তাদের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেন। তবে বাড়ি বিক্রির দুই দিন আগেই আমি আমার পরিবার নিয়ে বরানগরের গোপাললাল ঠাকুর রোডের একটি ছোট্ট ভাড়াবাড়িতে গিয়ে উঠি। সেই বাড়িতেই কেটে যায় আমার বাকিটা জীবন। বাবার এই অসহায় আশ্রয় আমাকে পীড়া দেয়। আর তা সইতে পারিনি বলেই ডিসেম্বর মাসে বাবাকে নিয়ে আসি নিজের কাছে। নিজে চরম অভাব-অনটনের মধ্যে থাকলেও বাবা কারো গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকবে তা কিছুতেই যেন সহ্য করতে পারছিলাম না। এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখি আগেই। এই বাড়িতেই কিন্তু বাবা অসহায়ভাবে দেখে গেছেন মাত্র ৪৮ বছর বয়সে আমার অকাল মৃত্যু। আমার মৃত্যু বাবাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। তাই তো আমার প্রয়াণের দু-বছর পরে ৮৮ বছর বয়সে তিনিও মারা যান। আমার ছোট ছেলে সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বাবাকে কেমন দেখেছি’ সাক্ষাৎকারে এই বাড়িটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ আছে। আছে আমার লেখালেখিসহ অনেক কথা। আমায় নিয়ে সুকান্ত বলছে, “লেখার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না, সাধারণত খুব ভোরে বা সন্ধ্যার পর বেশি রাত পর্যন্ত লিখতেন কিংবা দুপুরে। বিকেলে পাড়ার ছেলেমেয়েদের খেলা দেখতেন বারান্দায় বসে, মাঝে মাঝে মাঠে বাঁশি নিয়ে রেফারিং করতে নেমে পড়া। আবার ছেলেমেয়েদের ঝগড়ার মীমাংসাও করতে হত তাঁকে। বাড়িতে লুঙ্গি আর হাফহাতা গেঞ্জি, বাইরে বেরোবার জন্য লং ক্লথের সাদা গোল-হাতা ফুল পাঞ্জাবি আর মিলের ধুতি। বাড়িতে খড়ম পরতেন। মাঝে-মাঝে লেখা ছেড়ে এঘরে চলে আসতেন আমাদের কাছে, এঘরে রাখা বিয়ের খাটটিতে বসে দুই দিদিকে ডেকে নিয়ে সে সময়ের বিখ্যাত ‘ডোয়ারকিন’ হারমোনিয়াম নিয়ে দিদিদের গান ধরতে বলতেন, দিদিরা তখন নিয়মিত গান শিখত। কখনো কখনো বাবাও গলা মেলাতেন, হারমোনিয়ামও বাজাতেন। প্রধানত, রবীন্দ্রসঙ্গীত, এছাড়া নজরুলগীতি, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত বা দ্বিজেন্দ্রগীতি, কখনো বা রামপ্রসাদী। বাবার একটি প্রিয় গানের কথা মনে আছে, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’। বাড়িতে পাঁচ-ছটি বাঁশি ছিল, অধিকাংশই আড় বাঁশি। মাঝে মাঝে বেশি রাতে ঘুম ভেঙে যেত বাঁশির শব্দে, বিশেষ করে চাঁদনি রাতে। আমাদের জানা ছিল, ঐ ঘরের সামনের বারান্দায় বসে বাবা বাঁশি বাজাচ্ছেন।”
১৯৫০ সালে কমিউনিস্টদের ওপর চলে সরকারি চরম দমন-পীড়ন। আমি নিজে কমিউনিস্ট ছিলাম বলে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা ও পত্রিকায় আমার লেখা প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয় সেসময়ের শাসকদল। লেখালেখিই যেখানে আমার একমাত্র আয়ের উৎস, সেই অবলম্বনটুকুই বন্ধ হয়ে গেলে চরম অর্থকষ্টের মধ্যে পড়ি আমি। ১৯৫১ সালের শুরুর দিকে আমার আর্থিক সংকট যেমন তীব্রতর হতে থাকে, তেমনই বাড়তে থাকে আমার রোগের আক্রমণ। ১৯৫২ সালের দিকে এসে এই সংকট দূর করার লক্ষ্যে এক পথ বের করি। তিন মাসে (মে, জুন, জুলাই) অন্তত পাঁচশ টাকা সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে ব্যয় কমানো এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য গ্রহণ করি সংযম সাধনের ত্রৈমাসিক পরিকল্পনা। যদিও বাস্তবে তা কার্যকর করতে পারিনি আমি। এ বছরের অক্টোবর মাসে কিছু টাকা আসে হাতে। এরমধ্যে জে. জে. প্রোডাকশনের সঙ্গে পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্র করার জন্য চুক্তি সই এবং একই মাসে এই উপন্যাসটির সুইডিশ অনুবাদের জন্য চুক্তি সম্পাদন করি।
১৯৫৩ সালের কথা। আর্থিক সংকট ও শারীরিক অসুস্থতা বড়তেই থাকে আমার। এর মধ্যে আমার চিহ্ন উপন্যাসটির চেক অনুবাদের জন্য চুক্তি সই করি। এ বছরেই প্রকাশিত হয় পদ্মানদীর মাঝি’র সুইডিশ অনুবাদটি। অনুবাদ করেন Viveca Barthel। তবে এ বছরের আমার উল্লেখযোগ প্রাপ্তি হলো রাইটার্স বিল্ডিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের আমন্ত্রণ। অন্যান্য লেখক-শিল্পীর সঙ্গে আমাকেও সংবর্ধনা দেন তিনি। তাছাড়া পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাসটির গুজরাটি জন্য চেতনা প্রকশনার গৃহ লিমিটেডের ভোগীলাল গান্ধীর সঙ্গে চুক্তি সই করি। মাটি না মহেল শিরোনামে এ উপন্যাসটির অনুবাদ করেন শ্রীকান্ত ত্রিবেদী। ১৯৫৪ সালের দিকে আমার অর্থনৈতিক সংকট, শারীরিক অসুস্থতা চরম আকার রূপ নেয়। সেই সাথে মদে আসক্তি তো আছেই। এর বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাই আমি। তবে বারবারই ব্যর্থ হই। পরাজয়ের কষ্টে ভীষণ মুষড়ে পড়ি। এ সময় মৃগী রোগ ছাড়াও কঠিন আমাশয় ও যকৃতের রোগ মারাত্মকভাবে দুর্বল করে ফেলে আমাকে। এত সব কিছুর পরেও লেখা থামে না একদিনের জন্যও। লিখছি তো লিখছিই। লেখা প্রকাশও হতে থাকে বিভিন্ন পত্রিকায়। এ বছর আমার পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসটির চেক অনুবাদ প্রকাশিত হয়, আর সেটির অনুবাদ করেন দুসান ঝাভিতেল।
১৯৫৫ সালে আমার আর্থিক সংকট আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। সেই সাথে চলে আমার চিকিৎসাতীত রোগের ক্রমাগত আক্রমণ। বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছি আমি। এসময়টায় বেঁচে থাকাটাই যেন দায় হয়ে পড়ে। আমার এ অসুস্থতার কথা স্মরণে রেখেছে সুকান্ত। শৈশবের স্মৃতি ঘেঁটে সে বলছে : “এই রোগের আক্রমণে তাঁকে প্রায়ই দেখেছি রক্তাক্ত হতে। হয়ত বাবা তাঁর লেখার টেবিলে, মা এবং আমরা ভাইবোনেরা পাশের ঘরে। হঠাৎ একটা গোঙানির আওয়াজ- মা দিদিরা ছুটে গিয়ে বাবার মুখে গামছা গুঁজে দিচ্ছেন। যদিও ইতিমধ্যে প্রবল খিঁচুনিতে মুখের ভিতরে রক্তপাত ঘটে গিয়েছে। এমনও হয়েছে, পড়ে গিয়ে ফেটেছে মাথা।”
এক পর্যায়ে লেখক বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীরাই আমার চিকিৎসার ভার নেন। যদিও এ বিষয়টায় আমার চরম আপত্তি ছিল। নিজের ব্যক্তিত্বে যেন ঘা লাগে। তবে প্রতিবাদ করবো সেই শক্তিটুকুও ছিল না। এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইসলামিয়া হাসপাতালে ভর্তি করান তাঁরা। মাসখানিক সময় পার হলেও হাসপাতালে থাকতে হয় বাধ্য হয়ে। কিন্তু একটা সময়, অর্থাৎ ২৭ মার্চ চিকিৎসকদের পরামর্শ তোয়াক্কা না করেই বাড়িতে চলে আসি নিজ দায়িত্বে। বন্ধুদের শেষ চেষ্টা হিসেবে কড়া নিয়মের মধ্যে চিকিৎসা করানোর লক্ষ্যে ২০ আগস্ট আবার আমাকে ভর্তি করানো হয় লুম্বিনি পার্ক মানসিক হাসপাতালে। সেখানে দুই মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ২১ অক্টোবর আমি বাড়ি ফিরে আসি।
এদিকে ১৯৫৬ সালের জুন মাসে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েট পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয় আমার জীবদ্দশার শেষ গল্পসংকলন স্বনির্বাচিত গল্প। অক্টোবর মাসে ‘সাহিত্য জগৎ’ থেকে বের হয় জীবনের শেষ উপন্যাস মাশুল। বছরের শুরু থেকেই ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রিতে আক্রান্ত হই একাধিকবার। এমনকি ২৫ জুন একবার দেখা দেয় মরণাপন্ন দশা। ৩০ নভেম্বর হঠাৎ মৃগীরোগে আক্রান্ত হয়ে জ্ঞান হারাই। ২ ডিসেম্বর রাত ১০টায় সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে আমাকে নেওয়া হয় নীলরতন সরকার হাসপাতালে। আমার এই অবস্থাটির কথাটি তুলে ধরেছেন কথাসাহিত্যিক দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘নেয়ারের খাট, মেহ্গিনি-পালঙ্ক এবং একটি দুটি সন্ধ্যা’ নামে স্মৃতিকথায়। আর সেটিই হায়াৎ মামুদ তাঁর সম্পাদিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বইয়ের ভূমিকায় তুলে ধরেছেন এভাবে : “মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, হাসপাতালে তখনো নিয়ে যাওয়া হয়নি, দেরিই হয়ে গেছে, হয়তো দিন কয়ে আগে নীলরতন সরকারে নিয়ে গিয়ে ফেললে বাঁচানো যেত, নিয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে সহযাত্রী সহকর্মী কমরেড কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় গভীর বেদনায় তাঁর স্ত্রীকে অনুযোগ করেছিলেন : ‘এমন অবস্থা, আগে টেলিফোন করেননি কেন?’ অত আশঙ্কা ও দুঃখের ভিতরেও মলিন হেসে ভদ্রমহিলা অস্ফুট উত্তর দিয়েছিলেন : ‘তাতে যে পাঁচ আনা পয়সা লাগে ভাই।’
অবশেষে ৩ ডিসেম্বর (১৭ অগ্রহায়ণ ১৩৬৩ বঙ্গাব্দ) সোমবার ভোর ৪টায় ওই হাসপাতালেই শরীর থেকে শেষ নিঃশ্বাসটুকু ছাড়ি আমি পৃথিবীর উদ্দেশে। ওই দিন বিকেল ৪টায় কলকাতায় বের হয় এক শোকমিছিল। নিমতলা শ্মশানঘাটে সম্পন্ন হয় আমার শেষকৃত্য। শোকমিছিলটি সম্পর্কে দীপেন্দ্রনাথ লিখেছেন : “শরীরের ওপর রক্তপতাকা বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার ওপর ফুল। মুখটুকু বাদে সমস্ত শরীরটা ফুলে আর ফুলে ছেয়ে গেছে। উপচে পড়ছে দুপাশে। হু হু করে হাওয়া বইছে আর ধুনুচির ধোঁয়া জটিল রেখাচিত্রের মতো পাক খেয়ে চারপাশে অস্পষ্ট হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। ...বাংলাদেশটাকে আমি বুঝতে পারি না। হাত বাড়িয়ে বারবার ফুল নিচ্ছিলাম আর অবাক হয়ে, অবাক হয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছিলাম। দেশের জ্ঞানী, গুণী আর সাধারণ মানুষের এই শোক, এই আবেগ যে কত অকৃত্রিম, তা আমার সমস্ত অনুভূতি দিয়ে বুঝেছি। কাল এমনি সময় অ্যাম্বুলেন্সে বসে বাংলাদেশকে আমি ঘৃণা করেছিলাম। আজ তাকে কি বলব? কাল কাঁদিনি, এখন আমার চোখে জল এলো। হঠাৎ গোপাল হালদার আঙুল বাড়িয়ে দেখালেন। ফুলের ভারে দামি পালঙ্কের একটা পায়ে ফাটল ধরছে।”
তথ্যসূত্র :
১. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : শতবার্ষিক স্মরণ; সম্পাদনা : ভীষ্মদেব চৌধুরী, সৈয়দ আজিজুল হক; প্রকাশনা : অবসর প্রকাশনা সংস্থা; ঢাকা; প্রকাশকাল : প্রথম প্রকাশ ১৯ মে ২০০৮।
২. কিশোর রচনা সমগ্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়; সম্পাদনা : সৈয়দ আজিজুল হক; প্রকাশনা : অবসর প্রকাশনা সংস্থা; ঢাকা; প্রকাশকাল : প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৯।
৩. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মশতবর্ষ সংখ্যা, উত্তরাধিকার, [৩৬ বর্ষ : ৩য় সংখ্যা; শ্রাবণ-আশ্বিন ১৪১৫, জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০০৮]; বাংলা একাডেমি, ঢাকা; প্রকাশকাল : ডিসেম্বর ২০০৮।
৪. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : জীবনকথা ও রচনাপঞ্জি; সংকলক : সৈয়দ আজিজুল হক; মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মশতবর্ষ সংখ্যা, উত্তরাধিকার, বাংলা একাডেমি, ঢাকা।
৫. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাজজিজ্ঞাসা; নিতাই বসু; প্রকাশনা : দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা; প্রথম দে’জ সংস্করণ : মে ১৯৮৬ (প্রথম প্রকাশ : ১৯৮০)।
৬. মানিক বিচিত্রা, সম্পাদনা : বিশ্বনাথ দে; প্রকশনা : সাহিত্যম, কলকাতা; প্রকাশকাল : মে দিবস ১৯৭১।
৭. সাহিত্য করার আগে; মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়; প্রবন্ধ সংকলনগ্রন্থ : লেখকের কথা, প্রকাশকাল : ভাদ্র ১৩৬৪, সেপ্টেম্বর ১৯৫৭; নিজ এজ পাবলিশার্স লি., কলকাতা। (মরণোত্তর প্রকাশিত)
৮. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা; ভূমিকা ও কবিতা পরিচয় : শ্রী যুগান্তর চক্রবর্তী; গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা; প্রথম প্রকাশ : জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৭, মে ১৯৭০।
৯. মানিক গ্রন্থাবলী; প্রকাশনা : গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা; প্রকাশকাল : ১৯ শে মে, ১৯৮২।
১০. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, গ্রন্থ পরিচয়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা সমগ্র; প্রকাশনা : পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা; প্রকাশকাল : ২০০১।
১১. শ্রেষ্ঠ গল্প : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়; সম্পাদনা : আবদুল মান্নান সৈয়দ; প্রকাশনা : অবসর প্রকাশনা সংস্থা; ঢাকা; প্রকাশকাল : প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮।
১২. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : শ্রেষ্ঠ উপন্যাস; সম্পাদনা : হায়াৎ মামুদ; প্রকাশনা : অবসর প্রকাশনা সংস্থা; ঢাকা; প্রকাশকাল : প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫।
১৩. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প : দুই পর্বের বাস্তবতা, শচীন দাশ; পদক্ষেপ [বর্ষ ৩৩ : সংখ্যা ৩৮, বইমেলা সংকলন], সম্পাদক : জ্যোতির্ময় দাশ, অসীমকুমার বসু; প্রকাশকাল : ডিসেম্বর ২০০৭।
১৪. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও সাহিত্য, ড. সরোজমোহন মিত্র; প্রকাশনা : গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা; প্রকাশকাল : চতুর্থ পরিমার্জিত সংস্করণ ১৯৯৯।
১৫. পদ্মানদীর দ্বিতীয় মাঝি; শিল্পীর রূপান্তর, আবু হেনা মোস্তফা কামাল; প্রকাশনা : সময় প্রকাশন, বাংলাবাজার, ঢাকা; প্রকাশকাল : ২০০০।