কার্তিকের কবিতা
কুয়াশাঘুম
কুয়াশাঘুম ১
জীবন এক ছায়াবাজি-জন্ম ও মৃত্যুর আড়ালে কুয়াশা খেলা
এই খেলা-আমিও খেলে যাচ্ছি রহস্যময়ী ছায়া ঘিরে।
যতবার আমার ছায়া-এই দু’হাতে উপরে তুলতে চেয়েছি
সে ততবারই মাটিতে লুটিয়েছিল নিজের মতো করে
তাই ছায়াকে-আমারই মৃতদেহ মনে হয়।
মনে পড়ে-কৈশোরে, শুকানো নৌকার পিঠে আলকাতরায় এঁকেছিলাম-মৃতদেহ।
সেই নৌকাখানি আজ ভেসে যাচ্ছে-আমার চোখের জলে।
মাঝিহীন নৌকা কেন ভাসে? কেন ভেসে চলে যায়-ভালোবাসায়?
নাকি ভালোবাসাহীন অর্ঘ্য-মাছের মতো জলে ডুবে মরে।
হে মৃত্যু, হে সাব্যস্তকারী অন্ধকার
তুমি আমায় উটপাখির মতো ডানা দিলে বটে
তবে কেন দিলে না-অসীম আকাশে উড়বার বেদনা।
কুয়াশাঘুম ২
আমার মা আগুন খেয়ে শীতকাল প্রসব করেন
সেই থেকে আমাদের শীতকাল বেশি প্রিয়
শীতে তার দৃষ্টির গন্ধ এপাড়া থেকে ওপাড়ায় হেঁটে বেড়ায়
আর সেই দৃষ্টির গন্ধ—সমুদ্র ঢেউ-এর মতো বিশাল ঠান্ডা নিয়ে আসে।
আমার বাবা হরশীত বালা সেই ঠান্ডায় অলসতা ভেজে খায়
অলসতা যখন পাঁপড়ের মতো মচমচ শব্দ করে
ঠিক তখনই গাছের সবুজ পাতারা মরমর হয়ে ওঠে।
এভাবে আমাদের সংসার যেন যুধিষ্ঠির পাশাখেলা
আর বেলা অবেলায় চুম্বন ফেরি করাই আমাদের কাজ।
কুয়াশাঘুম ৩
তোমাকে মনে করার মতো
আর কোনো মন অবশিষ্ট নেই
এ যেন তুমি বাংলা স্বরবর্ণের লি-ই কার
কোনো ধ্বনি বা শব্দে যার ব্যবহার শূন্য থেকে শূন্যতম
কিংবা গভীর কুয়াশায় হেঁটে চলা তোমার পায়ের ছাপ
ডিম থেকে বাচ্চা পেতে হলে বুকের উত্তাপ প্রয়োজন
অথচ তুমি বরফ ভালোবেসে ঘুমিয়ে রাখলে শিশু পৃথিবী
আর আমার মনের মাঝে ঢুকিয়ে দিলে খনি গর্ভের অন্ধকার
ভগ্নাংশে আমি ইঁদুর দাঁতে খনন করে চলেছি তোমার মনোখনি
তবুও তোমার মুগ্ধতায় মুখ ধুয়ে দেখেছি
শ্যাওলার সবুজ গন্ধে ভরে গ্যাছে আমার ঋগেদের ছোট্ট দীঘি
অবশেষে ডান হাতের বুড়ো আঙুল হারিয়ে ভেবেছি
একটি আঙুলের মৃত্যু মানে—একটি হাতের মৃত্যু নয়।