রত্নেশ্বরের একক চিত্রপ্রদর্শনী ‘পিক্সেল এরর’
‘সামাজিক দায়বদ্ধতার সতর্ক কোনো চর্চা নয়, চলমান ঘটনার অস্থিরতা আমাকে বিষয় নির্বাচনে তাড়িত করেছে। ফলে আমার চিত্রকর্মে সড়ক দুর্ঘটনা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, যৌন হয়রানি, সাভার ট্র্যাজেডি, অগ্নিদগ্ধ মুখ- এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা দুর্ঘটনা বিষয় হিসেবে নিয়েছি। আমার উপলব্ধি বলে সব দুর্ঘটনায় স্রেফ অপ্রত্যাশিত কাকতালীয় নয়, তাঁর পেছনে রাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা আর উন্নাসিক অসচেতনতাও বিদ্যমান’- নিজের শিল্পকর্মের বিষয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তরুণ শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধর।
‘পিক্সেল এরর’ শিরোনামে শুরু হয়েছে শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধরের একক চিত্র প্রদর্শনী । গত ১ অক্টোবর বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী জামাল আহমেদ ও বিশিষ্ট শিল্পরসিক দুর্জয় আহমেদ জয়।
রত্নেশ্বর সূত্রধর নবীন চিত্রকর। তিনি অতিসম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগ থেকে চিত্রকলায় স্নাকতোত্তর পাঠ সম্পূর্ণ করেছেন। তেলরং, অ্যাক্রেলিক, জলরং, কালি-কলম কিংবা পেন্সিল মাধ্যমে বাস্তবানুগ অনুশীলনের কারিগরি নৈপুণ্য তিনি অর্জন করেন স্নাতক পর্বেই।
এরপর এমএফএ পর্বের শিক্ষার্থী হিসেবে চিত্রে ব্যক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মনোনিবেশ করেন। এই প্রদর্শনীর প্রায় সব চিত্রকর্মই তাঁর এমএফএ ও তার কাছাকাছি সময়ের নিরীক্ষার ফল । রত্নেশ্বর তাঁর শিল্প অনুশীলনে জীবন ও সময়কে প্রকাশ করতে চান ।
এসব নিরীক্ষাধর্মী কাজে অঙ্কন শৈলীতে তাঁর অভিজ্ঞতা আর প্রতিক্রিয়ার সাথে সাযুজ্য রেখেই অনেক স্কয়ার পিক্সেলের উপস্থাপন ঘটিয়েছেন। কিছু চিত্রে একই বিষয়ে সম্পর্কিত দুটি ইমেজ স্কয়ার পিক্সেলের পজেটিভ এবং নেগেটিভ স্পেসের মাঝে সংশ্লিষ্ট করে তৃতীয় একটি বিষয় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন।
পিক্সেল কোনো ইমেজের ক্ষুদ্রতম একক যার আর কোনো ভগ্নাংশ নেই। সে প্রকরণেই চলমান ঘটনা প্রবাহের অসহায় ক্রীড়নক এই নিজেদের অস্তিত্বকেই এভাবে প্রকাশ করার তাগিদ পেয়েছেন। সব রকম অসঙ্গতিতে আমাদের নির্বাক স্থবিরতাকে প্রকাশ করেছেন হ্যাং হয়ে পরা দুর্বল ভিডিও ফাইলের স্ক্রিনশটের মতো ভেঙে যাওয়া পিক্সেল, যেন স্মার্ট টেকনোলজির যুগেও লো রেজুলেশন আত্মচেতনা নিয়ে চলছি আমরা। এতে ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ, মূঢ় হয়ে যাওয়া অভিজ্ঞতার প্রতিক্রিয়াই বর্ণিত হচ্ছে এই প্রদর্শনীতে।
প্রদর্শনীটি আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।