ঈদের আয়োজন
অরবিন্দ চক্রবর্তীর ১০ কবিতা
ব্যান্ডদল
গ্রামের কৈ রেওয়াজ করে আকাশ পড়ে। সীতানাথ বসাক বুকে নিয়ে কাটাকুটি খেলে দুপুরের মেঘ।
জগতের ছেলেরা লিরিকাল খুলেছে। ভরসা পাই। এবার ওরা টিনের চালে নামিয়ে আনবে দমাদম মাস্ত কালান্দার। নিশ্চয়ই ফোটাতে পারবে খোঁপার কদম। মেয়ে, সুযোগে এবার নেমে পড়ো জলনাট্যমে।
কোথাও করতালি হচ্ছে। সম্ভাবনা বলা যাক। আমি তো খুশিতে আটখান রাজা। শব্দ ফোটাচ্ছে জল। বলি, বেশ তো, হল্লা কর। যতখুশি বাজাও তালিয়া। আষাঢ়ে খিধে মিটবে এবার। ঝিরিঝিরি লিরিক তুলতে ঘেমে উঠুক রোদপ্রার্থী গিটারিস্ট।
ও গণকঠাকুর, আমিতো আহামরিয়া... তোমারে সাধু সাধু করি অথচ বুঝি না কোন নহবতশিল্প থেকে আসে এমন শ্রাবণঘন-মর্সিয়া!
জীবন
ভঙ্গি করে তাকিয়ে আছে জীবন। জীবনের ওপরে আকাশ বহিয়া যায়...
ছাদের নিচে যে কটা প্রাণ বসত করে, সিঁড়ি মাড়াবার জ্বালায়
তোমাকে ভালোবাসবে বলে তারাই তীর-ধনুকের আয়োজন করে।
ছুটে আসে হাওয়া। ওদিকে সংবাদ রটে যায়, আমি চাঁদের নিচে ঘোড়া দাবড়াই।
সংগত এগিয়ে আসে কার্নিশ, ঝুলে পড়ে আমাদের নিয়তির যত উপমা।
তখন বোঝা যায়, মৃত্যুবিষয়ক যতসব অকথ্য ব্যাপার
পৃথিবী বাইরের গোপনে থাকে—থাকতেই পারে।
তবে সকলেই জানেন, আকাশ নামটা রাষ্ট্রের কাঁটাতারকেও মিথিক্যালি নিকুচি করে।
সাহস
তাস খেলা বাদ দিয়ে যারা যুদ্ধ করেন
জনৈক দার্শনিক তাদের পরামর্শ দিলেন,
‘আস্ত জীবন নিয়ে বাঁচতে চাইলে
জুয়া খেল, জুয়া খেললে আয়ু বেড়ে যায়।’
পরমাত্মাকে ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে লাগাম দিলাম ছেড়ে
মজা হল বেশ, বাতাসকে দিলাম প্রাণ
জীবনের সাহস দেখে ঘোড়া তো আমার ছুট।
আরবের ঘোড়া এসে চম্পট—দেখা দেয় এশিয়ায়
আস্তাবলে কেউ থাকে না
থাকে শুধু হরতনের উল্লাস ও আফিমখোরের হাপিত্যেস।
শিল্প
কথা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি
দেখতে ভালো লাগে, পাঁজর ছুঁই ছুঁই
আয়ুরেখা ছুটে আসে
এড়িয়ে যায়...
গোয়ার্তুমিবশত রক্তাক্ত হই না
নির্ভয়ে তখনও দাঁড়িয়ে থাকি।
যখন জেনে যাই
ভঙ্গিটা আমার নয়, শিল্পের
বুঝতে চেষ্টা করি
আমরা যে দীর্ঘশ্বাস বেচেকিনে খাই
তাও একদিন অকাঠ হয়ে যাবে...
এরপরও কেন যেন, যেকোনো ঘটনার মধ্যে তাকিয়ে
ময়ূরের গায়ে একবিন্দু ভরতনাট্যম প্রার্থনা করি।
মুক্তি
উপগলির শিরায় কিলবিল করছে চিৎকার
সম্ভবত মুক্তি চেয়ে এগোচ্ছে কেউ
এদের জন্যেই লঙ্গরখানায় বরাদ্দ হচ্ছে আগামীর অংশবিশেষ।
যারা পথ খুঁজছে, সবার প্রতিপক্ষ আলো
একদিন এরা আমাকে টেক্কা দিতে গিয়ে
খুব যত্নে ঢুকে যাবে ন্যাকড়াপল্লির বেপথু হাটবাজারে।
আমাদের চোখে-মুখে ঘটবে ইশারা, যা আতশবাজির আঁতলামিতে দুষ্ট
আর আমরা ভাবব, ছেলেবেলা কীভাবে মাত হল ক্যাঙারুর লেজে রেসলিং করে করে...
বৃন্দাবন
যা কানে আসে, সবই তার মনে মনে। এবং ভাবাও যায়, বাঁশি বাজে। ভেতর থেকে ছিঁড়েখুঁড়ে বেরিয়ে আসে সাপের কাহালি। তোমারই পোষা অন্যমনস্ক বৃন্দাবন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এ বাঁচা একার নয়, পাপের-কুৎসার। লীলা, নিশ্চয় তুমি বিবাগী নও! তাহলে এবার কুষ্ঠ রোগীর পাশে উন্মোচন কর আদমসুর। দেখবে, কেউ কেউ ‘তুমি ধ্যানী তুমি ধ্যানী’ বলে পালাচ্ছে হৃদয়ম থেকে। পাকাচ্ছে জিলাপি। জিকির থেকে ফেলে দিচ্ছে জীবনের জল। খুলে ফেলছে নাচের মহিমা। ‘মেনকা মেনকা’ বলে ময়ূরী যখনই দেবে ডাক। দেখবে, চারপাশ থেকে খসে পড়ছে যুধিষ্ঠিরের মুখোশ।
কান্না ধুয়ে দেবে সাবান
ছেলেটি জুপার্কে যেতে পছন্দ করে
উঁচু শপিং মলে কেনাকাটায় যেয়ে এনজয় করে সদ্য বিয়েপ্রার্থী মেয়েটি
লেকের ধারের কাপলগুলো ছাতিম গাছের নিচে আলোকাটাকাটি খেলে
প্রাগৈতিহাসিক বয়সের এক জোয়ান সান্ধ্যপায়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ছাতা মেলে ধরে
বকুলব্যবসায়ী কেন যে প্রার্থনা করে দেশের জাদুঘরগুলো রোয়ানোর মুখে পরে তো পড়ুক
হ্রদটা যেন ডেভেলপারের দখলে না যায় সে ব্যাপারে জনসচেতনতার দিকে সাবান ছুড়ে দেয় খুব
অবদমন পরিবারের সদস্য হয়ে একটা পাঁঠা বর্ষীয়ান গাছের পাতা মুড়ে খাওয়ার প্রলোভনে মনোজ্ঞ দৃশ্য রচনা করে।
সন্দেহবাদী
শরমিন নামের পাশে তুমি যদি হাসো
মেয়েটি জানবে এখানে চাষ হচ্ছে বোকাবংশ...
পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্ট্যাচু
ধরবে রমনীয় গান...
লোল ঝরবে যার
আজ সে আকাশ নিয়ে ভাবনা করে
নদীকে কোলে তুলে নিয়ে তামশা দ্যাখে...
লজ্জাতুন্নেছাকে দেখে জিরাফ কোমর দুলিয়ে
ইউটার্ন চলে যায়
তুমি ভাবো লেসবিয়ান...
ভারতবর্ষে লুকিয়ে থাকা একটি গোপনচিত্র
ঘুমে তরল ঢেলে আরববিশ্বের স্বপ্ন দেখে।
সিস্টেম
চুরমার আয়নার ঘটনা টিভিস্ক্রিনে দেখে, অনেকে একে সংবাদ বলছেন।
আমি কেন বলব?
হাতির শত্রু নেই
অথচ এই পাতা মরমরিয়ের মিনমিনে চোখে রক্তবিন্দু...
কলোনির মেয়ে, তোমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া হল
মুছে দিল আইনদপ্তর... টের পেলে কি?
কেউ জানেন না দেশলাই লুকিয়ে ঘুরছে আয়নাবিক্রেতা
পাথর জ্বলবে
নির্মাণাধীন পৃথিবীর জটিলতা নিয়ে ভুগবেন আমাদের সন্তান।
যে গল্প বীরত্বে
ফুলচে স্বভাবের কয়েকজন গোল্ডফিশ
সবার কাঁধে তুলে দেয় কল্পনাপ্রবণ হাসি।
ফলে তোমার মতো একজন পুরুষের হাতে
ক্যামেরা ধরিয়ে দিয়ে
মাগরিবের কমলা-আকাশ রিপোর্ট করতে বলে।
আর তুমি কি না, সেলুলয়েড বিষয়ক কুৎসা ছড়িয়ে
রাত্রিকরের নাভিচক্রে একটার পর একটা রচনা করো স্বপ্নের বাঘাডুলি।
পরিচিতি
অরবিন্দ চক্রবর্তী। জন্মদিন : ১১ আগস্ট ১৯৮৬। জন্মস্থান : রায়পাড়া সদরদী, ভাঙ্গা, ফরিদপুর, বাংলাদেশ। কবিতার বই : ছায়া কর্মশালা (২০১৩), সারামুখে ব্যান্ডেজ (২০১৬)। সম্পাদনা : দ্বিতীয় দশকের কবিতা (২০১৬)। সম্পাদিত পত্রিকা : মাদুলি
ই-মেইল : aro.maduli@gmail.com