কবি আসাদ বিন হাফিজের স্মরণে সভা ও দোয়া মাহফিল
কবি আসাদ বিন হাফিজের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে ‘সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের’ উদ্যোগে এ স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবিদের একজন কবি আসাদ বিন হাফিজ। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে কবি আসাদ বিন হাফিজের মতো কবিদের খুব বেশি প্রয়োজন। তার সব সৃষ্টিকর্মগুলোকে এক মোড়কে নিয়ে এসে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। আসাদ বিন হাফিজের লেখাগুলো খণ্ড আকারে প্রকাশ এখন সময়ের দাবি। অনিবার্য ইশতেহারের কবি হিসেবে পরিচিত দেশের ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা।’
সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি যাকিউল হক জাকীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রের সেক্রেটারি মাহবুব মুকুলের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি কবি আবদুল হাই শিকদার, কবি মোশাররফ হোসেন খান, কবি হাসান আলীম, ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ। এতে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন শরীফ বায়জীদ মাহমুদ, বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির সভাপতি আবেদুর রহমান ও সেক্রেটারি ইব্রাহীম বাহারী, কবি আবু তাহের বেলাল, কবি নাসির হেলাল, চিত্রশিল্পী ইব্রাহীম মন্ডল, ড. মোস্তফা মনোয়ার, কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম এবং কবি পরিবারের সদস্য কবি আসাদ বিন হাফিজের ভাতিজা কবি সালেহ মাহমুদ। সংগীত পরিবেশনা মহানগর শিল্পীগোষ্ঠী, আবৃত্তি মুস্তাগিছুর রহমান, তারিক হাসিব ও কামাল মিনাশ অন্যান্যরা।
কবি আব্দুল হাই সিকদার বলেন, ‘আসাদ বিন হাফিজ একজন সত্য পথপ্রাপ্ত কবি ছিলেন। কবি আসাদ বিন হাফিজ তার কীর্তির চেয়ে মহৎ। তার সাহিত্যে জনগণের আত্মার স্পন্দন ছিল। সস্তা ফেসবুক দিয়ে বিপ্লব হবে না, আর সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চাও হবে না। নজরুলকে নিয়ে দেশ পত্রিকা একটা বিরাট একটি অপকর্ম করেছে। এটার আমরা তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। কবি জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে কোনোভাবেই নজরুলের তুলনা চলে না। কবি আসাদ বিন হাফিজ ছিলেন একজন আদর্শবাদী কবি ছিলেন। কবির মৃত্যুতে আমাদের জন্য বিরাট ক্ষতি।’
আশির দশকের অন্যতম কবি মোশারেফ হোসেন খান বলেন, ‘আশির দশকে আমাদেরকে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে কবিতা এবং সাহিত্য রচনা করতে হয়েছে। মৃত্যুর পরে আমরা ঘটা করে স্মরণ ও দোয়া মাহফিল করি, এরপরে আমরা ভুলে যাই। আমাদের ইসলামিক ভাবধারার অনেক কবি-সাহিত্যিক আছেন, তাদেরকে আমরা স্মরণ করি না।’
কবি হাসান আলিম বলেন, ‘আসাদ বিন হাফিজ একজন কবি ও ছড়াকার। আশির দশকের সেরা কবিদের একজন আসাদ বিন হাফিজ। ইসলামী সাহিত্য রচনায় কাজ করেছেন।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ বলেন, ‘কবি আসাদ বিন হাফিজের লেখাগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। তিনি সুহাসিনির ভোরের কবি। তিনি শিশু সাহিত্যের জন্য অনেক কাজ করেছেন। কবির লেখা সংরক্ষণ করে প্রকাশ করা খুব জরুরি।’
সভাপতির বক্তব্যে কবি যাকিউল হক জাকী কবির বিশুদ্ধ ধারার কাব্য চর্চার অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আসাদ বিন হাফিজের কবিতা, গান, গল্প ও প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করছে। এদেশের বিশ্বাসী তরুণদের আত্মচেতনা বোধ জাগ্রত করেছে। তিনি ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে সব মানুষেকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন তার অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম দ্বারা।’
অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহারের কবি আসাদ বিন হাফিজ স্মরণ ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবিদের একজন কবি আসাদ বিন হাফিজ। বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার ও ছড়াকার হিসেবে পরিচিত। তিনি আদর্শিক দিক দিয়ে ফররুখ আহমদের অনুসারী। তার সাহিত্যে বাংলার মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণ এবং বিপ্লবের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সৃজনশীলতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহারেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার সাহিত্যে বিপ্লবী চিন্তা-চেতনারও প্রকাশ ঘটেছে। তিনি ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত আছেন। কবি আসাদ বিন হাফিজ ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি ১৯৮৩ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, গবেষণা, সম্পাদনা ইত্যাদি সাহিত্যের সব শাখাতেই কবি আসাদ বিন হাফিজ রেখেছেন তার অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর। তিনি প্রায় ৮১টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। কবি আসাদ বিন হাফিজ তার বর্ণাঢ্য কর্ম ও সাহিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।’
কবি আসাদ বিন হাফিজের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘কি দেখো দাঁড়িয়ে একা সুহাসিনী ভোর’ ও ‘অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার’। কবি আসাদ বিন হাফিজ তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কলম সেনা পুরস্কার (১৯৯৪), কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এমইউ আহমেদ পুরস্কার (১৯৯৭), বাংলাদেশ সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ পুরস্কার (১৯৯৭), ছড়ার ডাক পদক ও সম্মাননা (২০০৪), মেলোডি শিল্পীগোষ্ঠী পদক (২০০৪), কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪), গাজীপুর সংস্কৃতি পরিষদ কৃতী সংবর্ধনা (২০০৪), ওমর ফারুক সম্মাননা স্মারক ‘কাব্যরত্ন’ ২০১৬ ও সাহিত্যচর্চা সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা ও ইসলামী সাহিত্যে তার অবদান অতুলনীয়।
কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী বলেন, ‘কবি আসাদ বিন হাফিজ বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী মহাপুরুষ। ক্ষণজন্মা কবি নাসিম হিজাজীর বইগুলোকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলা অনুবাদ সাহিত্যকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি ইসলামী ভাবধারার সাহিত্যকে তিনি উন্নত করেছেন।’
কবি আসাদ বিন হাফিজের ভাতিজা কবি সালেহ মাহমুদ বলেন, ‘কবি আসাদ বিন হাফিজ ছিলেন একাধারে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতিমান বিশ্বাসী কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী। তিনি আদর্শিক দিক দিয়ে কুরআন ও রাসুলুল্লাহ (সা.) সুন্নাহ অনুসারী ছিলেন। তার রচনায় বাংলার মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণ ও বিপ্লবী ধারা চোখে পড়ার মতো। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সৃজনশীলতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তার রচিত শিশুসাহিত্য ও ছড়া সমসাময়িক যুগে অতুলনীয়। তিনি ছিলেন বিরল সাহিত্য প্রতিভার অধিকারী, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক, ছড়াকার ও প্রকাশক। তার বহু গ্রন্থ, ইসলামী গান ও কবিতা নতুন প্রজন্মকে ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে।’
লেখক ও গবেষক ইব্রাহিম বাহারি বলেন, ইসলামী ধারার সাহিত্য রচনা ও সাহিত্য রচনা করতে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করেছিলেন প্রেরণা দিয়েছিলেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রানজিটের নামে ভারতকে করিডোর দিয়ে দেওয়া তখনই বিপ্লবের মৌসুম। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়, তখনই কবি সহযোদ্ধাদের বিপ্লবে নেমে পড়া জরুরি।’
চিত্রশিল্পী ইব্রাহীম মন্ডল বলেন, ‘কবি আসাদ বিন হাফিজ অসাধারণ ছাড়া লিখতে পারতেন। দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ কবি সাহিত্যকরা। ইসলামি ভাবধারার কবি মতিউর রহমান মল্লিক, কবি গোলাম মোহাম্মদ, শাহেদ আলীরা ইসলামি সাংস্কৃতিক চর্চায় অবদান রেখে গেছেন।’