পালতোলা জাহাজে কফি পরিবহন

জার্মানির সাবেক এক সংবাদপত্রের সম্পাদক পালতোলা জাহাজে করে নিকারাগুয়া থেকে জার্মানিতে কফি নিয়ে আসেন। এভাবে তিনি সাধারণ জাহাজে করে কফি পরিবহণের কারণে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়, তা কমান।
এই ধারণার পেছনের ব্যক্তিটির নাম ইয়েন্স ক্লাইন। তিনি বলেন, ‘‘শুরুতে একটি বিষয় আমি খুব ভালোভাবে খেয়াল করেছিলাম। তখন জানতে পেরেছিলাম, কোনো পণ্য কম দামে বিক্রি করতে চাইলে অনেক সময় কোনো কিছুর ক্ষতি করতে হয়।’
ক্লাইন ২০১৪ সালে ‘ক্যাফে চাবালো’ সমবায় প্রতিষ্ঠা করেন। সংবাদপত্রের সম্পাদকের চাকরি ছেড়ে তিনি নিকারাগুয়া গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি কফি চাষ করতে একটি সমবায় গড়ে তোলেন।
ক্লাইন বলেন, ‘আমার ভেতর তখন সাংবাদিক সত্ত্বা কাজ করেছিল। আমি জানতে চেয়েছিলাম, শুনতে যা এত ভালো শোনাচ্ছে তা বাস্তবে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা। সেখানে গিয়ে সবকিছু দেখার পর আমি বিষয়টা অন্যভাবে করার চেষ্টা করতে চেয়েছিলাম। এভাবেই আমার মাথায় ক্যাফে চাবালো প্রতিষ্ঠার ধারণা আসে।’
ধারণাটি পরে বাস্তবে রূপ নেয়: বর্তমানে প্রায় ২৫০টি পরিবার ক্লাইন এর সমবায়ে অংশ নিচ্ছে। তারা পাউন্ড প্রতি নির্দিষ্ট মূল্য আয় করে। আগে তাদের আয় বিশ্ববাজারে দাম বাড়া-কমার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। তাই আয় কম-বেশি হতো।
বছরে একবার ক্লাইন সেই পরিবারগুলোর সাথে দেখা করেন যাদের জীবনে তার কারণে পরিবর্তন এসেছে।
কফি চাষী খুয়ান মোরা জানান,‘এখন আমরা আরও বেশি আয় করছি৷ এবং আমাদের কফি এখনও অর্গানিক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। আমাদের মতো ছোট অর্গানিক কফি উৎপাদনকারীর জন্য বিষয়টা দারুণ সন্তোষজনক।’
আরেক চাষী পাসকুয়াল এস্পিনোসা রবলেস বলেন, ‘এখন আমরা ন্যায্য এবং খুব ভালো দাম পাই৷ এখন পর্যন্ত পাওয়া সেরা দাম এটি।’
বছরে একবার বসন্তকালে কফি বিনসহ অন্যান্য পণ্য জার্মানির ‘আভনটুর' পালতোলা জাহাজে তোলা হয়। আটলান্টিক পার হয়ে হামবুর্গ বন্দরে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় চার মাস। শ্রম এবং খরচ যতটা সম্ভব কম রাখার জন্য ক্লাইন এটি করেন।
ক্লাইন জানান, ‘কফি হামবুর্গে পৌঁছানোর পর স্বেচ্ছাসেবীরা তা খালাস করেন৷ এটা সবসময় হয়৷ তারপর হামবুর্গ থেকে সাইকেলে করে কফি অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ এটা এক বিশেষ সহায়তা৷ পুরো কফি চালানের জন্য আমরা এই ব্যবস্থা করতে পারিনি।’
সাইকেলে করে স্থানীয় গ্রাহকদের কাছে কফি পৌঁছে দেওয়া হয়। ‘বাবা হ্যান্ডমেড ক্যাফে’ মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ক্যাফের মালিক পলা নতুন কফি চালান আশা করছেন। তিনি এই ধরনের কফি বিন ব্যবহারের উপর খুব গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, ‘সবার জন্য ন্যায্য হওয়াটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা আমাদের ক্রেতাদের এমন কিছু অফার করতে চাই যা সবার জন্য ন্যায্য৷ অর্গানিক কফির ক্ষেত্রেও সেটি প্রযোজ্য। তাছাড়া আমাদের বলতেই হবে: কফির স্বাদ খুব, খুব ভালো।’
ক্লাইনের প্রকল্প কি বিশ্বব্যাপী কফির টেকসই বাণিজ্যের জন্য সম্ভাব্য একটি সমাধান দেখায়? নাকি এটি কেবলই একটি আদর্শ? ক্লাইন বলেন,‘আমাদের কেউ এই স্বপ্ন দেখি না যে, ৭০ টন ধারণক্ষমতার একটি পুরোনো পালতোলা জাহাজ বিশ্বব্যাপী পরিবহণ জগতে বিপ্লব আনতে পারবে। ধারণাটি এমন নয়৷ তবে আমরা প্রমাণের চেষ্টা করছি যে, নিশ্চয় বিকল্প কোনো উপায় আছে। কফির দাম বেশি হবে-সেটি আমাদের সামঞ্জস্য করে নিতে হবে। কয়েক দশক ধরে এভাবে চলতে পারে না।’
কিন্তু ক্লাইন এবং তার দল সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। এভাবে তারা হয়তো ধনী নাও হতে পারেন, কিন্তু নিকারাগুয়ার কফি চাষী এবং পরিবেশের জন্য অবদান রাখবেন৷