ব্রির ডায়াবেটিক চাল উদ্ভাবন, বীজ বোর্ডের অনুমোদন
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আরও দুটি নতুন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর একটি এটি ডায়াবেটিক চাল হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর।
আজ বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৯তম সভায় জাতগুলো অনুমোদন করা হয়।
নতুন উচ্চ ফলনশীল এ জাত দুটি হচ্ছে ব্রি ধান ১০৫ ও ১০৬। এরমধ্যে একটি বোরো মৌসুমে চাষের উপযোগী কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন এবং অন্যটি রোপা আউশ মৌসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী। নতুন এ দুটি জাতসহ ব্রি উদ্ভাবিত সর্বমোট ধানের জাত সংখ্যা দাঁড়াল ১১৩টি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. মো. শাহজাহান কবীর জানান, নতুন উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে ব্রি ধান ১০৫ হলো বোরো মৌসুমের একটি কম জিআই সম্পন্ন ডায়াবেটিক ধান। ব্রি ধান ১০৫-এর শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো সবুজ পাতা, খাড়া ডিগ পাতা, মাঝারি লম্বা ও চিকন দানা, যার জিআইয়ের মান ৫৫.০। সুতরাং, কম জিআই হওয়ায় এটি ডায়াবেটিক চাল হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে বলে আশা করা যায়। ব্রি ১০৫ জাতের ধান পাকার পরও এর গাছ সবুজ থাকে। এ জাতের পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০১ সেন্টিমিটার। গড় ফলন হেক্টরে ৭ দশমিক ৬ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের দানার আকার ও আকৃতি মাঝারি সরু, রং সোনালি। এর জীবনকাল ১৪৮ দিন। এই জাতের এক হাজার দানার ওজন ১৯.৪ গ্রাম। ব্রি ধান ১০৫-এর অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭.০% এবং প্রেটিনের পরমিাণ ৭.৩%। রান্না করা ভাত ঝরঝরে এবং সুস্বাদু।
মহাপরিচালক জানান, ব্রি ধান১০৬ আউশ মৌসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এ জাতের গাছের গোড়ায় ও ধানের দানার মাথায় বেগুনি রং বিদ্যমান। এর গড় উচ্চতা ১২৫ সেন্টিমিটার। এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৭৯ টন, যা অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান ২৭-এর চেয়ে শতকরা ১৭ দশমিক ৪ ভাগ বেশি। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রি ধান ১০৬-এর ফলন হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ৪৯ টন পর্যন্ত পাওয়া যাবে। নতুন জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি ঢলে পড়া প্রতিরোধী। ধানের দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালি বর্ণের। এ জাতের গড় জীবনকাল ১১৭ দিন। এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৪.৫ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭ দশমিক ২ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮ দশমিক ৫ ভাগ। এ চালের ভাত ঝরঝরে হবে।
মহাপরিচালক আরও জানান, এ জাতের হোমোজাইগাস কৌলিক সারিটি নির্বাচনের পর ব্রির গবেষণা মাঠে তিন বছরের ফলন পরীক্ষা করা হয় এবং পরে কৌলিক সারিটি আউশ ২০২০-২১ মৌসুমে দেশের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে কৃষকের মাঠে আঞ্চলিক উপযোগিতা যাচাই করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২১-২২ সালে কৌলিক সারিটি উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের গবেষণায় ঢলে পড়া প্রতিরোধী বলে বিবেচিত হওয়ায় ২০২২-২৩ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের ছয়টি অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে কৃষকের মাঠে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল কর্তৃক ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় কৌলিক সারিটি আউশ মৌসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের জাত হিসেবে চূড়ান্তভাবে ছাড়করণ করা হয়।