ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নিতে শিশু হত্যা করেন রিকশাচালক!
রিকশাচালক মো. সেলিমের স্ত্রী নুপুরের কিডনি ও পেটে টিউমারের চিকিৎসায় অনেক টাকার দরকার। এদিকে-সেদিকে টাকা চেয়েও পাননি কোথাও। এদের মধ্যে পূর্ব পরিচিত বাড়ির মালিক বাবুলের স্ত্রীর কাছে টাকা চান সেলিম। কিন্তু টাকা পাননি।
মাঝেমধ্যে সেলিম বাবুলের বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেন। গত শনিবার তাঁর বাড়ি পরিষ্কার করার কথা ছিল। যাই হোক, বাবুলের স্ত্রীর কাছে টাকা না পেয়ে সেলিম ভিন্ন পরিকল্পনা আঁটেন।
সেলিম ভাবতে থাকেন, নিজে কাউকে হত্যা করে বাবুলের বাড়িতে কারো লাশ রাখবেন এবং শনিবার বাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে ওই লাশ দেখবেন। পরে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে লাশটি সেলিমকে সরাতে বলবেন বাবুল। আর লাশ সরানোর কথা বললেই তিনি বাবুলকে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করবেন।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত শুক্রবার সেলিম রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মধ্য নন্দীপাড়ার দুই নম্বর সড়কে রিকশা চালাতে চালাতে দেখতে পান, পাঁচ বছরের শিশু জিসানুল ইসলাম আকাইদসহ কয়েকজন খেলছিল। পরে ফুঁসলিয়ে আকাইদকে রিকশায় তুলে নূর মসজিদের দিকে নিয়ে যান সেলিম। এরপর আকাইদকে বাবুলের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যান। সেখানে থাকা রশি দিয়ে আকাইদের দুই হাত বেঁধে ধারালো ক্ষুর দিয়ে তার গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। সেখানে লাশটি রেখে সেলিম দ্রুত পালিয়ে যান।
কিন্তু সেলিমের সব পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যায়, শনিবার বাবুল তাঁকে বাড়ি পরিষ্কার করতে না ডাকায়। গতকাল সোমবার বাবুলের বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে ব্যাপক পঁচা গন্ধ বের হতে থাকে। একপর্যায়ে খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় পঁচা-গলা লাশ পাওয়া যায় বেলা ১১টার দিকে। পরে খিলগাঁও থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে গতকাল রাতে সেলিমকে গ্রেপ্তার করে খিলগাঁও থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ এনটিভি অনলাইনের কাছে আসামি সেলিমের বরাত দিয়ে পুরো ঘটনা জানান। আবদুল আহাদ দাবি করেছেন, ‘সেলিম তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে আকাইদকে হত্যা করে বাবুলকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতে চেয়েছিলেন। এসব কথা স্বীকার করে সেলিম আজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।’
আবদুল আহাদ বলেন, ‘জিসানুল ইসলাম আকাইদকে গত শুক্রবার খুঁজে না পেয়ে তার বাবা মো. আবদুল মালেক (৩৩) খিলগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে আমার নেতৃত্বে খিলগাঁও থানা পুলিশের একাধিক দল পুরো এলাকার সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে তা দেখতে থাকে। এর মধ্যে রোববার আবদুল মালেক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। গতকাল ব্যাপক তল্লাশীর মাধ্যমে আসামি সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ তাকে আদালতে পাঠানো হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিন দেন।’