হলি আর্টিজানে খালাস বড় মিজান অনেক মামলায় আসামি
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানের হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আজ সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আলোচিত এই মামলার রায়ে একমাত্র মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
বড় মিজান এই মামলায় খালাস পেলেও এখনি মুক্তি পাচ্ছেন না বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের তল্লাশিচৌকিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা রয়েছে। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো আছে।
২০১৭ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন নামাজ শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে আজিমউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কাছে পুলিশের তল্লাশির সময় জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলা চালায়। এ ছাড়া তাদের চাপাতির কোপে দুই পুলিশ কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম মারা যান। এ সময় আরো ১২ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে জঙ্গি আবির রহমান মারা যান। উভয় পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে নিজ বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক। আটক করা হয় জঙ্গি শফিউল ও স্থানীয় তরুণ জাহিদুল ইসলাম ওরফে তানিমকে।
শোলাকিয়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বড় মিজান জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ‘অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী চক্রের প্রধান’।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এর উপকমিশনার (ডিসি) সাইফুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বড় মিজানের বিরুদ্ধে আরো মামলা আছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে মামলার বিষয়ে বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
বড় মিজান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার হাজারদীঘি গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে।
হলি আর্টিজানে হামলার মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, মো. আসলাম হোসেন র্যাশ, মো. হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. মো. আবদুস সবুর খান, মো. শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বড় মিজান নব্য জেএমবির চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জের প্রধান দায়িত্বশীল ব্যক্তি। আগে তিনি জুনুদ আত তাওহীদ নামের একটি জঙ্গি সংগঠনের প্রধান সামরিক কমান্ডার ছিলেন। পরে তামিম চৌধুরীর মাধ্যমে নব্য জেএমবিতে যুক্ত হন। বড় মিজানের নেতৃত্বেই নব্য জেএমবি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তকেন্দ্রিক অস্ত্র ও গ্রেনেড তৈরির উপকরণ, ডেটোনেটর ও বিস্ফোরক জেল চোরাচালানের একটি চক্র গড়ে তোলা হয়। এই চক্রই জেএমবির প্রায় সব অস্ত্র, ডেটোনেটর ও বিস্ফোরক জেল সরবরাহ করছিল। শোলাকিয়া হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড ও পিস্তলগুলো বড় মিজানের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়।
হলি আর্টিজান অভিযানে নিহত ৫ জঙ্গি
হলি আর্টিজানে হামলা-পরবর্তী অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়েছিল। তারা হলো রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
বিভিন্ন অভিযানে নিহত ৮
হলি আর্টিজানর মামলার অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলো তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। হামলার পর রাতেই তারা ২০ জনকে হত্যা করে। সেদিনই উদ্ধার অভিযানের সময় বন্দুকধারীদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরের দিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়।
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে। সংগঠনটির মুখপত্র ‘আমাক’ হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে বলে জানায় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ দাবি করে, নব্য জেএমবির সদস্যরা এই হামলা চালিয়েছে।
এ ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। মামলার পর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে দুই দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে, এ মামলায় কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তিনি এ মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আদালত প্রতিবেদক