দুপুরে বললেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা গুজব, সন্ধ্যায় জামিন নিলেন মেহজাবীন
অর্থআত্মসাৎ, হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে করা মামলায় মডেল ও অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। আজ রোববার (১৬ নভেম্বর) ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক আফরোজা তানিয়া বিকেলে এই আদেশ দেন। এর আগে মেহজাবীন তার আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।
এদিন দুপুরের পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে মেহজাবীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এই খবরের পরে মেহজাবীন চৌধুরী ভিত্তিহীন ও গুজব বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এরপরে বিকেলে আদালতে মেহজাবীনের আইনজীবী তুহিন হাওলাদার এসে বলেন, মেহজাবীন চৌধুরী জামিন নিতে আসছেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে জামিন শুনানির জন্য সাদা মাইক্রোবাসে করে আসেন মেহজাবীন চৌধুরী। তিনি মুখে কালো মাস্ক ও লাল কালারের ড্রেস পরে পুলিশি কড়া নিরাপত্তায় আদালতের এজলাসে জামিনের জন্য আসেন। সেখান থেকে তাকে আদালতের তিন তলায় বিচারের খাসকামড়ায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তার জামিন শুনানি শুরু হয়।
এদিন মেহজাবীনের আইনজীবী তুহিন হাওলাদার শুনানিতে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আর্জিতে গড়মিল রয়েছে। মামলার ঘটনাস্থল হাতিরঝিল থানায় হলেও বাদী মামলা করেছেন ভাটারা থানায়। সাধারণ ডায়েরির (জিডি) কোন যৌক্তিক কারণ নেই ও আইনগত কোন ভিত্তি নেই। মামলার আর্জির বর্ণনা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অযৌক্তিক।
আইনজীবী আরও বলেন, মামলার ঘটনাটি পুরো সাজানো। কারণ এই মামলার বাদীর সাথে মেহজাবীন এবং তার ভাইয়ের কোন পরিচয় নেই। একই এলাকায় কোন দিন বসবাস করেনি, দেখা-সাক্ষাতও নেই। এমনকি একজনের সাথে আরেকজনের ফেসবুকে যোগাযোগও নেই। যেহেতু মেহজাবীন চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী এবং তার প্রতিপক্ষ থাকতে পারে; তাই প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাদী অবৈধভাবে লাভবান হয়ে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা করেছে।
আইনজীবী শুনানিতে আরও বলেন, এই মামলার কোন অস্তিত্ব নেই এবং অস্তিত্ব বিহীন মামলা। বাদী যে ঠিকানা ব্যবহার করেছেন, সে ঠিকানায় বাদী থাকেন না এবং বিবাদীদের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে তাও ভুল। কারণ সেখানে তারাও থাকেন না। এই কারণে বিবাদীরা মামলার খবর জানে না। তাই আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার খবর মিডিয়ায় শুনে আমরা আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করেছি। শুনানি শেষে বিচারক মেহজাবীন চৌধুরী ও তার ভাইকে জামিন মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আলাউদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত ৩ নভেম্বর আদালত মেহজাবীন ও তার ভাই আলিসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এছাড়া আগামী ১৮ নভেম্বর গ্রেপ্তার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য আছে।
নথি থেকে জানা গেছে, বাদীর সঙ্গে দীর্ঘদিন পরিচয়ের সুবাদে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আসামি মেহজাবীন চৌধুরীর নতুন পারিবারিক ব্যবসার পার্টনার হিসেবে রাখবে বলে নগদ অর্থে এবং বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে মোট সাতাশ লাখ টাকা দেন। এরপর মেহজাবীন ও তার ভাই দীর্ঘদিন ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ না নেওয়ায় বাদী বিভিন্ন সময় টাকা চাইতে গেলে আজ দেব কাল দেব বলে দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করেন।
নথি থেকে আরও জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পাওনা টাকা চাইতে গেলে তারা ১৬ মার্চ হাতিরঝিল রোডের পাশে একটি রেস্টুরেন্টে আসতে বলেন। ওইদিন ঘটনাস্থলে গেলে মেহজাবীন ও তার ভাইসহ আরো অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তারা বলেন, ‘এরপর তুই আমাদের বাসায় টাকা চাইতে যাবি না’ তোকে বাসার সামনে পুনরায় দেখলে জানে মেরে ফেলব। এসব কথা বলে তারা বাদীকে জীবননাশের হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।
বিষয়টি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট ভাটারা থানায় গেলে থানা কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করার জন্য পরামর্শ দেয়।
এ ঘটনায় আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭/ ১১৭(৩) ধারায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে বিচারক মামলা আমলে নিয়ে মেহজাবীন ও তার ভাইকে হাজিরের নির্দেশ দেন। কিন্তু মেহজাবীন আদালতে হাজির না হওয়ায় গত ৩ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

আদালত প্রতিবেদক