সমালোচনামুখর সংসদে বিশ্ব ব্যাংককে ক্ষমা চাওয়ার দাবি
কানাডার একটি আদালতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার রায়ে আসামিদের খালাস দেওয়ার পর আজ জাতীয় সংসদে বিশ্ব ব্যাংকের তুমুল সমালোচনা করেছেন একাধিক মন্ত্রী। মন্ত্রীদের দাবি, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিশ্ব ব্যাংককে বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। দুর্নীতির অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান মন্ত্রীরা।
আজ রোববার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ এ বিষয়টি তুলে ধরেন। এর পরই একে একে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংকের তীব্র সমালোচনা করেন।
স্থানীয় সময় গত শুক্রবার কানাডার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিন গ্রুপের তিন কর্মকর্তাকে পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস দেন কানাডার অন্টারিও প্রদেশের একটি আদালত। ওই তিনজনের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের ঠিকাদারি পেতে বাংলাদেশ সরকারের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
খালাস পাওয়া তিন ব্যক্তি হলেন এসএনসি-লাভালিন গ্রুপের এনার্জি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের রমেশ শাহ ও বাংলাদেশি-কানাডীয় ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী ভূঁইয়া।
রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) করা ওই মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তবে দুই আসামি মোহাম্মাদ ইসমাইল ও বাংলাদেশের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন চৌধুরীকে আগেই মামলার নথি থেকে বাদ দেয় পুলিশ।
আজ রোববার জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ এ প্রসঙ্গের অবতারণা করে বলেন, ‘কে এই ১২টি বছর ফিরিয়ে দেবে? আমাদের এত বড় একটা সম্পদ আমরা করতে পারলাম না। বিশ্ব ব্যাংকের টাকা নেওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে করলাম। আমাদের যে সময় অপচয় হলো, সময়ের অপচয়ের হিসাব কে দিবে?’ এর জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পদ্মা সেতুর প্রশ্ন তুলে সেদিন সরকারকে হেয় করতে চেয়েছে। দেশের সুনাম দেশে বিদেশে ক্ষুণ্ণ করেছে। কাজেই ফিরোজ রশিদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমিও বলতে চাই তারা এ দেশের শত্রু এবং তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘কলকাঠি কিন্তু ড. ইউনূস নাড়ছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের। আমি তোফায়েল আহমেদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, শুধু সৈয়দ আবুল হোসেন না- এ প্রশ্নে যে লোকগুলোকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল অন্যায়ভাবে, অসত্যভাবে, চিন্তা করেন এত দিন তাঁদের জীবনটা কীভাবে কেটেছে।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকে বাংলাদেশের কাছে, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এবং এ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছিল মিথ্যাভাবে তাদের কাছে মাফ চাইতে হবে। যত দিন পর্যন্ত মাফ না চাওয়া হবে, আমি মাননীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাব যে তিনি যেন এ প্রটেস্ট নোট একটা তাঁদের কাছে পাঠান।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘নিন্দাপ্রস্তাব দিতে হবে বিশ্ব ব্যাংকের বিরুদ্ধে। যেন আমরা বলতে পারি, দুনিয়ার কাছে ওরা ভুল করেছিল, মিথ্যা কথা বলেছিল। এ সরকারকে অপমানিত করেছে, প্রধানমন্ত্রীকে ছোট করেছে। তাদের পার্লামেন্টে ডাকতে হবে। স্থায়ী কমিটির ক্ষমতা আছে ওই সব ব্যক্তিকে ডাকার।’