কোন দেশগুলো আইএমএফের কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী?

ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা, যেখানে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকার ও আর্থিক নীতিনির্ধারকরা অংশ নিয়েছেন। আগামী শনিবার (১৮ অক্টােবর) পর্যন্ত চলবে এই বৈঠক, যেখানে বৈশ্বিক অর্থনীতির চাপ, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্ক ও সংরক্ষণবাদী নীতির কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আইএমএফকে সাধারণত “শেষ অবলম্বন ঋণদাতা” হিসেবে দেখা হয়—যে তখনই সহায়তা দেয়, যখন কোনো দেশ মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়ে ও অন্য উৎস থেকে ঋণ নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে আইএমএফের ঋণ সাধারণত কঠোর শর্তসাপেক্ষে দেওয়া হয়, যার ফলে অনেক সময় মিতব্যয়ী নীতি চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং এতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।
আইএমএফ কী এবং এটি কীভাবে অর্থ জোগায়?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের ব্রেটন উডস সম্মেলনে আইএমএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। যুদ্ধোত্তর অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে এ প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে সদর দপ্তর থাকা আইএমএফের সদস্য দেশ সংখ্যা ১৯১ এবং এটি জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।
প্রতিটি সদস্য দেশ তাদের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী একটি কোটা প্রদান করে। এই কোটা নির্ধারণ করে দেশটি কত টাকা জমা দেবে, কত টাকা ঋণ নিতে পারবে এবং তাদের ভোটাধিকার কতটুকু হবে।
আইএমএফের মোট ঋণ ক্ষমতা
বর্তমানে আইএমএফের মোট ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ধনী দেশগুলোই মূলত এই তহবিলের সরবরাহকারী এবং তারা এতে সুদ আয় করে।
২০২৪ সালে প্রায় ৫০টি ঋণদাতা দেশ মিলে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার সুদ পেয়েছে।
কোন দেশগুলো আইএমএফের কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী?
২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৮৬টি দেশ আইএমএফের কাছে ১১৮.৯ বিলিয়ন স্পেশাল ড্রইং রাইটস (এসডিআর) ঋণী, যা প্রায় ১৬২ বিলিয়ন ডলারের সমান।
এর মধ্যে মাত্র তিনটি দেশই মোট ঋণের প্রায় অর্ধেকের মালিক।
১. আর্জেন্টিনা — এসডিআর ৪১.৮ বিলিয়ন (প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার)
২. ইউক্রেন — এসডিআর ১০.৪ বিলিয়ন (প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার)
৩. মিসর (ইজিপ্ট) — এসডিআর ৬.৯ বিলিয়ন (প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার)

কেন আর্জেন্টিনার ঋণ সবচেয়ে বেশি?
আর্জেন্টিনা আইএমএফের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বার ঋণ নেওয়া দেশ। এর মোট ঋণ ইউক্রেন, মিসর, পাকিস্তান, ইকুয়েডর, আইভরি কোস্ট, কেনিয়া ও বাংলাদেশের সম্মিলিত ঋণের চেয়েও বেশি।
২০১৮ সালে আইএমএফ আর্জেন্টিনাকে ৫৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল—এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আইএমএফ ঋণ। ২০২৫ সালে দেশটির অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন করে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে মুদ্রা বিনিময় চুক্তিও রয়েছে।
কেন ইউক্রেনের ঋণ এত বেশি?
রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউক্রেনের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। যুদ্ধের খরচ ও বাহ্যিক ঋণ বেড়ে গিয়ে বর্তমানে দেশের মোট ঋণ ১৫২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যার ৭০ শতাংশই বিদেশি ঋণ।
২০২৩ সালে আইএমএফ ইউক্রেনকে চার বছরের ১৫.৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা অনুমোদন করে, যার মধ্যে ইতোমধ্যে ১০.৬ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়েছে।
কেন মিসর তৃতীয় অবস্থানে?
মিসর দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, মুদ্রাস্ফীতি ও রাজস্ব ঘাটতির মুখে রয়েছে। ২০১৬ সালে আইএমএফ ১১.৯ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা অনুমোদন করে, যার লক্ষ্য ছিল মুদ্রা বিনিময় হার নমনীয় করা, ভর্তুকি কমানো এবং কর বৃদ্ধি করে অর্থনীতি পুনর্গঠন।
২০২৫ সালের মার্চে আইএমএফ ৮ বিলিয়ন ডলারের সংস্কার কর্মসূচির চতুর্থ পর্যালোচনার পর ১.২ বিলিয়ন ডলার নতুন অর্থ ছাড় করে। মিসরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
জিডিপির তুলনায় কোন দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ঋণী?
যদিও আইএমএফের ঋণ সাধারণত একটি দেশের মোট ঋণ বা জিডিপির ছোট অংশ, তবু কিছু দেশের ক্ষেত্রে তা তুলনামূলকভাবে বড়।

জিডিপির অনুপাতে আইএমএফের কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী দেশগুলো হলো:
১. সুরিনাম – ১৩ শতাংশ
২. মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র – ৯.৪ শতাংশ
৩. আর্জেন্টিনা – ৮.৩ শতাংশ
৪. বার্বাডোস – ৭.৪ শতাংশ
৫. গাম্বিয়া – ৬.৯৫ শতাংশ