সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু
নানা নাটকীয়তা পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে। আজ শনিবার (৯ মার্চ) দুপুর ২টা থেকে এ ভোট গণনা শুরু হয়। আজ শনিবার (৯ মার্চ) নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের এ তথ্য জানান।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুদিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় ভোট গণনার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। পরে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয় ভোট ব্যালট বাক্স।
মামলায় সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়।
গতকাল শুক্রবার ভোরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তাও দেখা দেয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। দুই দিনে সাত হাজার ৮৮৩ জন আইনজীবীর মধ্যে পাঁচ হাজার ৩১৯ আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
গত বুধবার ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিট থেকে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের মিলনায়তনে স্থাপিত ৫০টি বুথে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। মাঝখানে এক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে।
দুদিন ভোটগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ব্যালট বাক্স খোলা হয়। ওই ব্যালট গণনার জন্য বাছাইও করা হয় কয়েক ঘণ্টা ধরে। ওই সময় বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও স্বতন্ত্র সম্পাদক পদপ্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও অর্ধশত আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তবে উপস্থিত ছিলেন না সভাপতি পদপ্রার্থী এম কে রহমান, আবু সাঈদ সাগর, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক পদপ্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক।
বাছাইয়ে দেখা যায়, সদস্য পদে ভোটগ্রহণের চাইতে কিছু ব্যালট বেশি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও নাহিদ সুলতানা যুথী। তারা বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে ১৫০টি ব্যালট বেশি থাকার কথা বলা হয়। পরে তারা ভোট গণনা করতে তাগাদা দেন পরিচালনা কমিটিকে। একপর্যায়ে শুরু হয় গণনা। সে সময় সহসভাপতি প্রার্থী দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু ও রমজান আলী শিকদার এবং সহসম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লবসহ কয়েকজন ভোট গণনা করতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল একপর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয়। পরবর্তীতে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ভোটের ব্যালট বাক্স নিজেদের হেফাজতে রাখে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন—সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, সহসভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুটি সহসম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব। সাতটি সদস্য পদে সৌমিত্র সরদার রনী, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন ও রায়হান রনী।
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন—সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, সহসভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, দুটি সহসম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো. আব্দুল করিম। সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল। এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ ও সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান নির্বাচন করছেন।
এ ছাড়া সম্পাদক পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন।