ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শিক্ষার্থীর পদ্মায় ঝাঁপ
মেডিকেল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পিউ কর্মকার (১৬) নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে পদ্মার সোনাকান্দর এলাকায় গিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয় সে।
এর আগে পিউ তার ফেসবুক আইডিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারায় একটি স্ট্যাটাস দেয়। লেখে, ‘গুচ্ছ আমার শেষ ভরসা ছিল। জানি না কবে রেজাল্ট দেবে। পরীক্ষাও মোটামুটি হয়েছিল একটা আশা ছিল, কিন্তু আমার ভাগ্য সেই আশাটাও পূরণ করতে দিল না। পাঁচটা অপশন থাকে তার মধ্যে আমি বায়োলজি আর ইংরেজির বৃত্ত ভরাট করে ফেলেছিলাম ভুল করে, আজকে সেটা দেখলাম। কিন্তু আমি উত্তর করেছিলাম বাংলার। আমার সব স্বপ্ন শেষ। একে একে ঢাবি, রাবি, জাবি থেকে একটু একটুর জন্য ধাক্কা খাই। জানি এটাও আমার ভাগ্যের জন্য, চেষ্টা আমার কম ছিল না। সারা দিন রাত এক করে পড়তাম। বাবা-মার অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে কিন্তু আমি কিচ্ছু দিতে পারি নাই। দাদার ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে। আমারও স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই যে ডাক্তার হব। আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিল মেডিকেল এডমিশনের প্রিপারেশন নেওয়াও শুরু করি। কিন্তু মেডিকেলেও বসতে পারি নাই। এটা থেকেও বিশাল একটা ধাক্কা খাই। অনেক ভেঙে পড়েছিলাম তাও হাল ছাড়ি নাই। এই এডমিশন পিরিয়ডটা যে কতটা কষ্ট দিছে আমাকে।’
ওই স্ট্যাটাসে আরও লেখে, ‘এসব আর আমি নিতে পারতেছি না। আমি শুধু একটা আশ্রয় খুঁজতেছিলাম, শেষ আশ্রয় এটাও শেষ হইল। অনেক মানুষ অনেক আত্মীয়ের অনেক কথা শোনা লাগছে। বাবার একটু ফিনানসিয়াল সমস্যা ছিল, এ জন্য ঢাকা গিয়ে পড়তে হবে কেন। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম যে পারব। কিন্তু আমি আর পারলাম না। সারাটা দিন ঘরের মধ্যে একা একা বসে থাকি। মানুষের কত ফ্রেন্ড কত কিছু কিন্তু আমি আমার পাশে কাউকে পাই নাই। সব থেকে প্রয়োজন ছিল যাকে, যাকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতাম তাকেও আমি আমার পাশে পাই নাই। হয়ত আমাকে সাপোর্ট করার মতো কেউ থাকলে আজকে এই মৃত্যুটা আমার হইত না। সেকেন্ড টাইমের প্রিপারেশন নেওয়ারও আমার কোনো মানসিক বা শারীরিক শক্তি নাই। আমার জীবনটা এখানেই থেমে গেল।’
সুইসাইড নোটে আরও লিখেছে, ‘মায়ের কাছে গিয়ে মাঝে মধ্যে কাঁদতাম, মাও বুঝে নাই আমাকে। আমি একটা বোঝা সবার কাছে। আমার মৃত্যুর জন্য আমার এই বড় বড় স্বপ্নগুলোই দায়ী। আমি আমার বাবা, মা’র স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নাই। আমাকে শেষ বারের মতো দেখতে চাইলে নদীর জলেই খুঁইজো। আমার মৃত্যুটা এভাবেও চাই নাই, ভালো থাইকো সবাই। আমি আমার এই জীবনটা আর নিতে পারছি না। আমারে মাফ করে দিয়ো সবাই। এভাবে দম বন্ধ করে বাঁচতে পারতেছি না আর।’
জানা গেছে, ফেসবুক আইডিতে লেখা আপলোড করে সে বাড়ি থেকে একাই বের হয়। তারপর রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর সোনাকান্দর এলাকায় গিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। পিউ কর্মকার রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর ২ নং রেলগেট এলাকার রাজবাড়ী শহরের জুয়েলারি ব্যবসায়ী কৃষ্ণপদ কর্মকারের মেয়ে।
মঙ্গলবার ওই কিশোরীর বাড়ি থেকে ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেখে মা, বাবাসহ আত্মীয়-স্বজন সবাই খুঁজতে বের হয়। পরে পদ্মা নদীর সোনাকান্দায় পিউর পায়ের জুতো দেখে স্থানীয়সহ আত্মীয়রা পদ্মার পানিতে খুঁজতে থাকে। পরে স্থানীয় এলাকাবাসির সহযোগিতায় তাঁকে নদী থেকে তুলে এনে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
পিউর চাচাতো ভাই পলাশ জানায়, পিউ এবছর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হওয়ার পর মেডিকেলে ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষায় পিউ উত্তীর্ণ না হওয়ায় তার মণ ভীষণ ভেঙে পরে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি খুব দুঃখজনক। মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।’