পঙ্গু হাসপাতালে সমন্বয়ক পরিচয়ে আহতদের জন্য টাকা ওঠাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের দেখতে বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছেন সমন্বয়কেরা। এরইমধ্যে এই আন্দোলনে আহতদের জন্য দেশের সব সরকারি হাসপাতালে আলাদা স্পেশালাইজড ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হবে চিকিৎসাসেবা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখন বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন ছাত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে একটি গোষ্ঠী। আহতদের চিকিৎসার কথা বলে সমন্বয়ক পরিচয়ে তুলছে টাকা। এমন একটি চক্রকে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে হাতেনাতে ধরেছেন খোদ সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
পরে পঙ্গু হাসপাতালে দাঁড়িয়ে হাসনাত বলেন, ‘৫ জুন থেকে আন্দোলন করছি। ওদিন থেকে আন্দোলনে আমাদের একটা টাকার কোনো ট্রানজেকশন নেই। একটা সিঙ্গেল টাকা আমারা কারও থেকে ওঠাইনি। একটা টাকার জন্য আমরা কারও কাছে যাইনি। আমাদের আন্দোলনে এটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ কোনো মানি ট্রানজেকশন দিয়ে কোনো আন্দোলন হয়নি। যখনি টাকা আসে, তখনই দেখা যায়, আন্দোলন বিতর্কিত করার একটা চেষ্টা থাকে।’
সমন্বয়ক পরিচয়ে আহতদের জন্য টাকা তোলাচক্রকে ধরার পর তাদের প্রসঙ্গে হাসনাত বলেন, এই যে টাকাগুলো উঠানো হয়েছে, এগুলো সম্পূর্ণভাবে আমাদেরকে না জানিয়ে করা হয়েছে। সমন্বয়কদের নামে বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় ফান্ডিং করা হচ্ছে। এই জায়গাগুলোতে আমাদের কোনো ধরনের কনসেন্ট (সম্মতি) নেই।
হাসনাত আরও বলেন, আপনারা কেউ সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়ক পরিচয়ের কারও সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করবেন না। কারও সাথেই না। কারণ, আমরা সেন্ট্রালি কেউ টাকা-পয়সা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত হতে উৎসাহ দিচ্ছি না। আমাদের প্রয়োজন পরছে না। বরং, আমরা যে কাজটি করছি, সরকারকে এনাবেল করছি। যেখানে টাকার প্রয়োজন হবে, সেখানে সরকার দিতে বাধ্য থাকবে। আর যদি কেউ টাকা সপ্রণোদিত হয়ে দিতে চান, সেক্ষেত্রে আপনারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করুন। আপনাদের কারও পরিবারের কেউ যদি আহত হয়ে থাকে, আপনারা নিজে গিয়ে আহতদের নিজ হাতে দিন। কোনো সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়ক নামে যারা পরিচয় দিচ্ছে তাদের সঙ্গে ন্যূনতম কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন করবেন না। এক টাকাও না।’
মসজিদ থেকে কয়েকজন ব্যক্তি টাকা অনুদানের জন্য গিয়েছিলেন পঙ্গু হাসপাতালে। তাদের উদ্দেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আপনারা তিনজন উপস্থিত থেকে রোগীর হাতে টাকাটা দিয়ে দিন।
হাসনাত আরও বলেন, স্বৈরশাসকের জানাজা পরে ফেলছি। দাফন কাজ বাকি। স্বৈরসাশক কিন্তু শুধু হাসিনা না, যারা এ ধরনের কাজগুলো করে, তারাই স্বৈরশাসক। স্ট্রেচারের ব্যবসাটা আমি নিজেও ফেস করেছি। এটা যদি আর থাকে, আমি বলে দিচ্ছি, আমি কিন্তু উনাদের (শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল) আবার পাঠাব। আমি আবার পাঠাব উনাদেরকে।…অনেক সময় দেখা যায়, স্ট্রেচার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু রোগী তুলছে না। এটা যেন না হয়।
হাসনাত বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের যতগুলো হাসপাতাল আছে, আমরা আমাদের সমন্বয়ক প্রতিনিধি কিন্তু যাচ্ছি। গতকাল সাত থেকে আটটি হাসপাতালে গিয়েছি। আজ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এডি ছিলেন, পরিচালক ছিলেন, সেখানে একটা স্পেশালাইজড ডেডিকেটেড ইউনিট করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে শুধু এই আন্দোলনে আহত হয়েছে, তাদের চিকিৎসা দেওয়া হবে এবং সেটি সম্পূর্ণ ফ্রিতে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে সম্পূর্ণ ফ্রিতে তাদের (আহতদের) জন্য স্পেশালাইজড ডেডিকেটেড ইউনিট থাকবে।