জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অনেক সহপাঠী, কীভাবে আমরা পরীক্ষা দেব?
গত জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে মাঠে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। ধীরে ধীরে আন্দোলন ঘণীভূত হয়। বিশেষ করে ১৬ জুলাইয়ে আবু সাঈদের মৃত্যুর পর কঠোর আন্দোলনে যান তারা। দেশব্যাপী সংঘর্ষে হতাহতের তালিকা দিনদিন দীর্ঘ হতে থাকে। এরই মধ্যে আসে ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট। শেখ হাসিনা তার স্বৈরশাসন ফেলে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তবে, আহতদের অনেকেই এখনও ফিরতে পারেননি ঘরে। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন সাত-সাতটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এইচএসসি শিক্ষার্থী।
রক্তের দাগ শুকিয়ে ওঠার আগেই এইচ এসসির স্থগিত পরীক্ষাগুলো শুরুর সিদ্ধান্তে বাধ সাধেন তারা। বেশ কয়েকটি ঘটনা ও যৌক্তিক কারণ তুলে ধরে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা, শিক্ষা বোর্ডে নেন অবস্থান, করেন বিক্ষোভ। তাদের সেই যৌক্তিক কারণে সাড়া দিয়েছে সরকার। আজ মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) তারা বলেছে, অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো আর নেওয়া হবে না।
চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। গত ১৮ জুলাই পর্যন্ত সাত বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। যদিও ফলাফল প্রকাশের রূপরেখা কী হবে, তা নিয়ে আছে নানা কথা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ আজ শিক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে জানান, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাকি বিষয়ের ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের কথা বলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, ফলাফল কীভাবে প্রকাশ করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও অনুষ্ঠিত সাতটি বিষয়ের ফলাফল এবং এসসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফলাফল নিরূপণ হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল চাওয়া প্রসঙ্গে যে যুক্তি ছিল
রাজধানীর দনিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন আবদুল হান্নান। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনিও পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের গেটে এসে বিক্ষোভে শামিল হন। পরীক্ষা বাতিল চাওয়া প্রসঙ্গে আবদুল হান্নান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। আমরা এ পর্যন্ত সাতটি পরীক্ষা দিয়েছি। এরপর গত ১৮ জুলাই পরবর্তী কয়েকটি পরীক্ষা স্থগিত করে দেয় সে সময়ের স্বৈরসরকার।
দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী গুলিতে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন উল্লেখ করে আবদুল হান্নান জানান, তাদের কারও পক্ষেই আপাতত পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া সম্ভব নয়। অবশিষ্ট যেকয়টি পরীক্ষা রয়েছে, সেগুলো বাতিল করে অনার্সে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। অথচ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বাকি পরীক্ষা নেওয়ার সূচি দেওয়া হয়। এ পরীক্ষা শুরু হলে তা শেষ হবে ৬ অক্টোবর। এরপর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও তিন মাস। ফলে স্নাতকে ভর্তিতে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী জানান, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের মিথ্যা মামলায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এদের মধ্যে অসংখ্য পরীক্ষার্থীও ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্রজনতার ওপর নির্বিচারে গুলির মাধ্যমে গণহত্যা চালায়। আপনারা বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, কতজন পরীক্ষার্থী মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। আমাদের ট্রমা কাটেনি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সহপাঠীদের রেখে কীভাবে আমরা পরীক্ষা দেব? আবার সময়ও অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে আমরা অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছি।
পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আসা আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রজনতার তীব্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার মতো একটি দানবীয় স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এর কৃতিত্ব দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষের। আমরা আন্দোলনের ফলাফলের সুবিধা নিতে আসিনি। আমরা অত্যন্ত একটি যৌক্তিক দাবি নিয়েই আজ সচিবালয়ে এসেছি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর টানা পাঁচ দিন আমরা সড়ক ও মহাসড়কে ট্রাফিকিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছি। এ ছাড়া দেশে বিশৃঙ্খলারোধে আমরা গ্রুপ করে এলাকায় এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছি। স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলোর জন্য এখনও আমরা পড়ার টেবিলে বসতে পারিনি। আমরা চাই, ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে। সেখানেই মেধার মূল্যায়ন হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অনেক সহপাঠী, কীভাবে আমরা পরীক্ষা দেব?