বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে পোশাক শ্রমিকদের ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক অবরোধ
নিয়োগে নারী-পুরুষের সমঅধিকার এবং হাজিরা বোনাস বাড়ানোর ঘোষণা সত্ত্বেও পোশাক খাতের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায়। আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) অর্ধশতাধিক তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মবিরতি পালন করে শ্রমিকরা। বিকেলে চক্রবর্তী এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
বেতনের দাবিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে থাকা অবরোধে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে। গত ৭ সেপ্টেম্বর বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও সময় মতো তা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। দফায় দফায় সময়ে নিয়েও আজ মঙ্গলবার বেতন দিতে ব্যর্থ হয় তারা। তাই বিকেলের দিকে শ্রমিকরা একযোগে নেমে আসে সড়কে। এরপর গত ২৯ আগস্ট তাঁর ব্যক্তিগত ও মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
তবে বিএফআইইউ এক বিবৃতির মাধ্যমে জানায়, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর মানিলন্ডারিং অপরাধ সন্দেহে কিছু ব্যক্তি ও একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। কোনো কোম্পানির হিসাব বন্ধ করেনি তারা।
তবে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জানায় কোম্পানির হিসাব বন্ধ করায় তারা সময় মতো বেতন দিতে পারছে না। এ জন্য সড়কে নেমে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা।
এদিকে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও উৎপাদন বন্ধ থাকায় ক্রয়াদেশ বাতিলের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন এই খাতের উদ্যোক্তারা।
এর আগে আজ সকালে আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ, বাইপাইল, ডিইপিজেড, জামগড়া, নরসিংপুর, নিশ্চিন্তপুর এলাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও বিকেল পর্যন্ত ৫০টির বেশি ছুটি ঘোষণায় বাধ্য হন মালিকরা।
একটি কারখানার ঝামেলা পাশের কারখানায় ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়তেই নিরাপত্তাজনিত কারণে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শিল্প পুলিশের আশুলিয়া জোনের পরিচালক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সব সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। একসঙ্গে বৃহৎ ৮ থেকে ১০টি কারখানায় ঝামেলা হলে কীভাবে পুলিশ তাৎক্ষণিক সহযোগিতা করবে? পুলিশের যানবাহন সংকট রয়েছে।’
সারোয়ার আলম আরও বলেন, ‘আমাদের বলা হচ্ছে, আমরা কেন কঠোর হচ্ছি না। কারণ কড়া বল প্রয়োগ পরিস্থিতি কোথায় নিয়ে যেতে পারে সেটা সবাই অনুধাবন করতে পারছে। আমরা সতর্ক আছি বলেই শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, শারমিন গ্রুপ ও হা-মীম গ্রুপের বড় পোশাক কারখানা নিয়েই যত টেনশন ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
বরাবরের মতো এসব বৃহৎ কারখানায় শ্রমিকরা যথারীতি হাজিরা দিয়েও কাজ করেননি। ফলে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় তাদের দেখাদেখি আল-মুসলিম ও ডেকো গ্রুপসহ একের পর এক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে এদিন তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন পুলিশ, আর্মড পুলিশ, শিল্প পুলিশ, র্যাব বিজিবি ও সেনা সদস্যরা।
ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কারখানার সামনে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান, র্যাব, পুলিশের রায়ট কার।
একাধিক তৈরি পোশাক কারখানার মালিক জানান, আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস ২২৫ টাকা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিয়োগে নারী-পুরুষ বৈষম্য থাকবে না-এমন ঘোষণা দিয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে সব কারখানা খোলা রাখার ঘোষণা দেয় তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে টানা ছয় ঘণ্টার বৈঠক শেষে গতকাল রাতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের সমন্বয় সভা থেকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে সংগঠনের সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্ব শীর্ষ পোশাক শিল্প মালিকদের এই সভায় যোগ দেন সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. মইন খানসহ যৌথবাহিনীর প্রতিনিধিরা।
শিল্প পুলিশের প্রধান ছিবগাত উল্লাহ বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় মঙ্গলবারের পরিস্থিতি অনেকটা ভালো ছিল। তবে ক্রমান্বয়ে একের পর এক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হলেও বেশিরভাগ কারখানায় কাজ চলছে। শিল্পাঞ্চলের উৎপাদন কার্যক্রমের প্রতি নজর রাখা হচ্ছে।
বেতন বৈষম্য, হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল বাড়ানো ও শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবির মুখে গতকাল সোমবারও শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ৭৯টি কারখানার কার্যক্রম বন্ধ ছিল।