কালীগঙ্গা নদীর অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন
মানিকগঞ্জের কালীগঙ্গা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ও সরকারি সড়কের ওপরে রাখা পাইপ অপসারণের দাবিতে সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের বড় বারইল গ্রামে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
আজ সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে এই মানববন্ধনে অংশ নেয় নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির নামধারী কর্মী রাজু সড়কে এই ড্রেজারের পাইপ বসিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে নবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী হাসান আল মেহেদী সুহাসের নেতৃত্বে রাজু এই কালিগঙ্গা নদীতে ড্রেজার বসান। ওই সময় নবগ্রাম এলাকায় বালু ফেলার জন্য ইউনিয়নের বড় বারইল গ্রামের সরকারি ইটসোলিংয়ের রাস্তার উত্তর পাশ দিয়ে পাইপ বসান। তখন এলাকাবাসী তাদের মৌখিকভাবে বাধা দিলেও কোনো প্রতিকার পায়নি তারা। বরং পাইপ বসানোয় বাধা দেওয়ায় ওই গ্রামের অনেককেই প্রাণনাশের হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান। এরপর থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু নেওয়ার কাজ বন্ধ।
তবে সম্প্রতি রাজুসহ কয়েকজন নামধারী বিএনপিকর্মী আবারও অবৈধভাবে বালু নেওয়ার পায়তারা করছে। দীর্ঘদিন রাস্তার পাশে পাইপ বিছানো থাকায় রাস্তা দিয়ে চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানায় এলাকাবাসী। নিজেকে বিএনপি পরিবারের কর্মী দাবি করা রাজু পটপরিবর্তনের আগে আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান সুহাসের সঙ্গে মিছিল-মিটিংসহ নানান কমসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
মানববন্ধনে ইলিয়াস দেওয়ান ও শাহিন হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন রাজু চেয়ারম্যানের মদদে নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন এবং তাঁদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে পাইপ বসান। এখন আবার বিএনপির নাম ভাঙিয়ে তিনি একই কাজ করছেন। তাঁদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। পাইপ থাকায় প্রতিদিনই ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা খেলতে গিয়ে ব্যথা পাচ্ছে। এলাকার কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য একটা অ্যাম্বুলেন্স আনা যায় না। ফলে রোগীকে মেইন রাস্তায় নিতে নিতে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।
ওই গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, বড় বারইল গ্রামের প্রায় ২৫-৩০ জন স্থানীয় বাসিন্দা আছে তারা অটোবাইক চালিয়ে সংসার চালান। দুই মাসের বেশি সময় ধরে তাদের অটোবাইকগুলো বাড়ি আনতে পারছেন না। মাসে ১৫০-২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে গ্যারেজে অটোবাইকগুলো রাখতে হচ্ছে। সরকারি রাস্তার উপর দিয়ে তারা পাইপ বসিয়েছে। বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দ্রুত ড্রেজারের পাইপগুলো সরানোর জোড় দাবি করেন তিনি।
বড় বারইল গ্রামের বাসিন্দা মো. মিলন দেওয়ান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সড়কের উপরে রাখা ড্রেজারের পাইপ যানবাহন চলাচল ব্যহত করছে। মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধসহ দ্রুত পাইপ অপসারণ করে বালুখেকু রাজুর শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে দেওয়ান রাজু সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মাসুদ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে আমি ১০ টাকা ৫৯ পয়সা চুক্তিতে চার লাখের বেশি ঘনফুট বালু ফেলব। আমার চাচাতো ভাইয়ের কেনা একটি পুকুর ভরাট করব। বালু মাটি আনা হবে বাল্কহেটে করে, নদীর পাড় থেকে বালু বাল্কহেট থেকে আনলোড করা হবে। আমি তো নদী থেকে সরাসরি বালু উত্তোলন করছি না।
রাজনৈতিক পরিচয় বিষয়ে জানতে চাইলে রাজু বলেন, পারিবারিকভাবে আমরা বিএনপি সমর্থন করি, তবে আমার কোনো পদপদবি নেই।
বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বালু ব্যবসা করছেন এই প্রশ্নের উত্তরে রাজু বলেন, আমরা বিএনপি পরিবার, আমার বাসায় জিয়াউর রহমান এসেছেন। ড্রেজারটা আমার নয় মাসুদের।
ড্রেজার ও পাইপের বিষয়ে জানতে মাসুদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসন সবসময়ই জনস্বার্থে কাজ করে থাকে।