গ্যাসের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ, যানজট-ভোগান্তি
নরসিংদীতে সিএনজি পাম্পগুলো থেকে অবৈধভাবে শিল্পকারখানায় গ্যাস বিক্রি বন্ধসহ সাধারণ যানবাহনে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছে যানবাহনের শ্রমিকরা।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে নরসিংদীর রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী, মাইক্রোবাস চালক ও সিএনজিচালিত যানবাহনের চালকরা ঢাকা-সিলেট মহসড়কের শাহেপ্রতাব মোড় অবরোধ করে। ফলে প্রায় আড়াইঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দূরপাল্লার যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌছে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন যাবৎ নরসিংদীর সিএনজি পাম্পগুলো অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় প্রাইভেট যানবাহনে গ্যাস না দিয়ে শিল্প কারখানা চালানোর জন্য বড় বড় কনটেইনার গ্যাস দিয়ে যাচ্ছে। ফলে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, যাত্রীবাহীবাসসহ সকল প্রকার যানবাহনে গ্যাস পাচ্ছে না। গ্যাস পেলেও গ্যাসের চাপ পাচ্ছে না। ফলে তারা যাত্রী বা রোগী নিয়ে গন্তব্যে পৌছাতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আবারা মাঝ রাস্তায় গাড়ি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌছে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
শ্রমিকরা আরও জানায়, তিতাস গ্যাস অফিসের কর্মকর্তারা লাখ লাখ টাকা ঘুষ খেয়ে সিএনজি পাম্পগুলোকে এই অবৈধ সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে করে রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, কনটেইনার ও কাভার্ড ভ্যানের ভেতরে প্রচুর সিলিন্ডার ভর্তি করে গ্যাস নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, মুন্সীগঞ্জসহ দূরদুরান্তের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় যাচ্ছে। এটি সিএনজি স্টেশন মালিক ও তিতাস কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এতে গ্যাসের চাপ কমে যায়। মহাসড়কে প্রতিনিয়ত চলাচল করা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য যানবাহন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও গ্যাস পায় না। এ কারণে তাঁরা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
সেবা সংঘ মাইক্রোস্ট্যান্ডের সাধারণ সম্পাদক লিটন মিয়া বলেন, নরসিংদীর প্রত্যেকটা সিএনজি পাম্পে অবৈধভাবে শিল্পকারখানার কনটেইনার গ্যাস দিচ্ছে। একটি কনটেইনারে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার গ্যাস দিচ্ছে। আমরা গ্যাস নিতে গেলে আমাদের গ্যাস দিচ্ছে না। আর গ্যাস দিলেও গ্যাসের চাপ থাকে না। ফলে আমরা যাত্রী বা মুমূর্ষু রোগী নিয়ে হাসপাতাল বা গন্তব্যে পৌছতে পারি না। ফলে যাত্রীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
লিটন মিয়া আরও বলেন, আমাদের মূলত দুটি দাবি। এর মধ্যে প্রধান দাবি শিল্পকারখানার কনটেইনারে গ্যাস দেওয়া বন্ধ করতে হবে। একই সাথে সাধারণ যানবাহনে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
আরশিনগর মাইক্রোস্ট্যান্ডের সভাপতি মো. আইয়ুব বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আমরা ডাল ভাত খেয়ে বাঁচতে চাই। নরসিংদীর পাম্পগুলো থেকে গ্যাস নিতে আমরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হই। একজন জরুরি রোগী নিয়ে ঢাকা যেতে চাইলে ১৫০ টাকার গ্যাস পাই না। অথচ আমার গাড়িতে গ্যাস নেওয়া যায় ১২০০ টাকার। ফলে আমি রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে পৌছাতে পারি না। রাস্তার মধ্যেই হয়রানি হতে হয়। কখনো কখনো রোগী রাস্তায়ই মারা যায়।
মো. আইয়ুব আরও বলেন, শিল্পকারখানার গ্যাসলাইন আছে। সেখানে তাদের বকেয়া আছে। তারা বিল পরিশোধ করে না। গাড়ির জন্য স্থাপিত সিএনজি পাম্পগুলো থেকে তারা অল্পদামে গ্যাস নিয়ে কারখানা চালায়। ফলে সড়কের হাজার হাজার যানবাহন গ্যাস পাচ্ছে না। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শহিদুল হক সোহাগ বলেন, গ্যাসের দাবিতে ভাড়ায় চালিত যানবাহনের চালকরা সড়ক অবরোধ করেছে। আমরা তাদের সাথে কথা বলে সড়ক ক্লিয়ার করার ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রায় সৌয়া ২ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
নরসিংদী তিতাস গ্যাসের ডিজিএম মামুনুর রহমান বলেন, সিএনজি পাম্পগুলো থেকে কারখানায় গ্যাস দেওয়ার বিধান আছে কিনা বিষয়টি পরিষ্কার নয়। আমরা আইনগুলো খতিয়ে দেখছি।
কতিপয় তিতাস কর্মকর্তার যোগসাজসে নরসিংদীর সিএনজি পাম্পগুলো থেকে অবৈধভাবে কারখানায় গ্যাস দেওয়া প্রসঙ্গে মামুনুর রহমান বলেন, সবগুলো বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। তারপর এ বিষয়ে বলতে পারব।