রাষ্ট্রপতি ও শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে সমন্বয়কদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বলেছিলেন, ‘আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’ সম্প্রতি মানবজমিনের প্রকাশনা জনতার চোখের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে ‘নেপথ্যের গল্প’তে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রপতি তাকে জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।
এরপর দেখা দিয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বক্তব্য। তাদের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, গণঅভ্যুত্থানে উৎখাত সরকার প্রধানের ক্ষেত্রে পদত্যাগপত্রের কোনো ভূমিকা নেই।
শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে, পদত্যাগপত্রের কোনো ভূমিকা নেই : হাসনাত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুক ভেরিফায়েড আইডিতে ভিডিও বার্তায় বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শক্তির উত্থান ও পুনর্বাসন ঠেকাতে দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন রাষ্ট্রপতি বলেছেন শেখ হাসিনা তার কাছে কোনো পদত্যাগপত্র জমা দেননি। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন আবারও বিভিন্ন পাঁয়তারা শুরু করেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা স্বৈরাচারের পতিত আত্মারা বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছে। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমাদের একটাই পরিচয় ছিল আওয়ামী লীগ ছিল জালিম আর আমরা ছিলাম মজলুম। কিন্তু ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে আমরা পৃথক হয়েছি যার কারণে একটি গ্যাপ তৈরি হয়েছে। এই গ্যাপটির সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমাদের আবার একত্রিত হতে হবে। আমরা দলীয় স্বার্থে যদি আলাদা হয়ে যাই তাহলে আওয়ামী লীগ আবারও সুযোগ নেবে। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।
এর আগে হাসনাত তার ফেসবুকে লেখেন, ‘হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে; একটি অবৈধ সরকারকে জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করেছে। এখানে পদত্যাগপত্রের কোন ভূমিকা নেই।’
রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি সারজিস আলমের
সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মতো মানুষ যদি বলেন শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের ডকুমেন্টস তিনি রাখেননি, তাহলে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা ছাত্র-সমাজই নির্ধারণ করবে। তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট সিস্টেম এখনও সরেনি। বিভিন্ন এজেন্সি ও কুচক্রীমহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। তাদের প্রতিহত করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা আবার রাজপথে নামব।
রাষ্ট্রপতি জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন : আব্দুল হান্নান
সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। রাষ্ট্রপতি তার পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন, দ্রুত তাকে পদত্যাগ করতে হবে। দ্রুতই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কোনোভাবেই আর রাষ্ট্রপতিকে পদে দেখতে চাই না।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগে কর্মসূচি দেওয়া হবে : মাহিন সরকার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রপতি যে দ্বিমুখী বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট যে তিনি শেখ হাসিনাকে বৈধতা দিতে চান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতির এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা অফিসিয়ালি দ্রুতই আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাব। আজ বিকেলেই দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস এবং শহরে বিক্ষোভ হবে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি আসবে।