আদালতে পরী মণির জামিন শুনানিতে যা হলো
ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের দায়ের করা মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর মামলায় ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের পর জামিন পেয়েছেন চিত্রনায়িকা পরী মণি।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদ এই আদেশ দেন। এর আগে আজ সকাল ১০টায় পরী মণি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নিতে হাজির হন। এসময় পরী মণি মানুষের জটলা দেখে হাসতে হাসতে আদালতের এজলাসের ভিতরে প্রবেশ করেন। এরপরে পরী মণি আদালতের এজলাসে পিছনের একটি বেঞ্চে বসে ছিলেন। কোর্ট ওঠার পরে বিচারক পরী মণিকে আদালতের নিয়ম অনুযায়ী কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বলেন। এসময় পরী মণি বেঞ্চ থেকে উঠে আদালতের কাঠ গড়ায় গিয়ে দাঁড়ান। এরপরে পরী মণির পক্ষে তার আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। তিনি বলেন, গতকাল মামলাটি চার্জশুনানির জন্য ছিল। পরী মণি অসুস্থ থাকায় আদালতে আসতে পারেননি। চার্জগঠন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আজ আত্মসমর্পণ করেছেন। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।
এরপর বিচারক আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, আশা করছি, সবাই কোর্টের ডিগনিটি রক্ষা করবেন। কোর্টকে বিতর্কিত করবেন না। মামলাটা জামিনযোগ্য ধারার। আসলেই জামিন পাবেন বিষয়টা এমন নয়। বিচারাধীন বিষয়ে এভাবে আগে কথা বলাটা কতটুকু যৌক্তিক? পরী মণির আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, আপনি কোর্ট অফিসার। এ বিষয়গুলো ভবিষ্যতে খেয়াল রাখবেন।
এর আগে গতকাল রোববার (২৬ জানুয়ারি) তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।
২০২১ সালের ৬ জুলাই ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসানের আদালতে বোট ক্লাবের সভাপতি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে পরী মণিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, পরী মণি ও তার সহযোগীরা অ্যালকোহলসেবী। সুযোগ বুঝে তারা বিভিন্ন নামীদামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ না করে চলে যান। পরী মণি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করে হয়রানির ভয় দেখান।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২১ সালের ৯ জুন দিনগত রাত ১২টার পর আসামিরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢুকে দ্বিতীয়তলার ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে তারা ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন। বাদী ও তার সহযোগী শাহ শহিদুল আলম রাত সোয়া ১টার দিকে যখন ক্লাব ত্যাগ করছিলেন, তখন পরী মণি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদী নাসির উদ্দিনকে ডাক দেন এবং তাদের সঙ্গে কিছু সময় বসার অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে পরী মণি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নাসির উদ্দিনকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন এবং একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনামূল্যে পার্সেল দেওয়ার জন্য বাদীকে চাপ দেন। বাদী এতে রাজি না হওয়ায় পরী মণি বাদীকে গালমন্দ করেন। বাদী ও আসামিদের মধ্যে বাদানুবাদের একপর্যায়ে পরীমণি বাদীর দিকে একটি সারভিং গ্লাস ছুড়ে মারেন এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিও ছুড়ে মারেন। এতে নাসির উদ্দিন মাথায় ও বুকে আঘাত পান।
বাদী মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, পরী মণি ও তার সহযোগীরা তাকে মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়েছে ও ভাঙচুর করেছে। এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরী মণি সাভার থানায় বাদীসহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেন।
ব্যবসায়ী নাসিরের করা এ মামলায় গত বছরের ১৮ মার্চ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো. মনির হোসেন।
গত ২৫ জুন আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করেন এবং পরী মণি ও জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিমকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন।