বেনাপোলে নির্মাণের দুই বছরেও চালু হয়নি ‘এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন’

যশোরের বেনাপোল বন্দরের প্রধান সড়কের সুরক্ষায় অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন বন্ধে নির্মাণ করা হয়েছে ‘এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন’। স্কেলটি নির্মাণের ২ বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে এটি পরিচালনায় বছরে সরকারের ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।
স্কেল পরিচালনায় নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউডিসি কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার নুরুজ্জামান জানান, সড়কে পণ্য পরিবহনকারী বড় বড় সংগঠনগুলোর সহযোগিতা না পাওয়ায় ‘এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন’ চালু করতে পারছে না তারা। এটি পরিচালনায় বছরে সরকারের খরচ হচ্ছে ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাশের ভোমরা স্থল বন্দর ও নওয়াপাড়া নৌ বন্দর সড়কে স্কেল না বসিয়ে বেনাপোল সড়কে স্কেল চালু করা হচ্ছে। ফলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্য কমার আশঙ্কায় স্কেল ব্যবহারে তাদের আপত্তি আছে।
স্থল পথে বেনাপোল বন্দরের সাথে ভারতের বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। শিল্প কলকারখানা ও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজের শতকরা ৮০ ভাগ কাঁচামাল আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাকের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে বেনাপোল সড়কের সুরক্ষায় বেনাপোল পৌর গেট এলাকায় স্কেল স্থাপন করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে এটি স্থাপন করা হয়। পরে ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট স্কেল পরিচালনায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা চুক্তিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউডিসিকে দায়িত্ব দেয় সরকার।
২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ ৪২ জন স্কেল পরিচালনার দায়িত্বে কাজ করছেন। নিরাপত্তায় রয়েছেন ৭ জন আনসার সদস্য। বন্দর থেকে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে প্রথম টনে ৫ হাজার ও দ্বিতীয় টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। স্কেলটি পরিচালনায় সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান হচ্ছে।
যশোরের নাভারন হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রোকনুজ্জামান বলেন, পণ্যবাহী ট্রাকে ওজন রসিদ না থাকায় অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন বন্ধ করা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। সড়কের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের ফলে অল্প দিনেই সড়কগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে বাড়ছে সংস্কার ব্যয়, বাড়ছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, আশপাশের বন্দর বাদ দিয়ে শুধু বেনাপোল বন্দর সড়কে স্কেল চালু করা ব্যবসায়ীরা এটি কখনো মানবেন না। বড় অঙ্কের অর্থ জরিমানার বিধান প্রভাব ফেলবে বাজারে। এটি সহনশীল পর্যায়ে থাকলে ব্যবসায়ীরা ভেবে দেখবেন।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন শিমুল জানান, বেনাপোল বন্দরের পাশে ভোমরা ও নওয়াপাড়া নৌবন্দর রয়েছে। সেখানে স্কেল না বসিয়ে বেনাপোল বন্দরে কেন? শুধু বেনাপোল বন্দর সড়কে স্কেল চালু হলে সেটি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈষম্য হবে। ভোমরা ও নওয়াপাড়া বন্দর সড়কে স্কেল চালু হলে বেনাপোল সড়কের স্কেল ব্যবহারে সহযোগিতা করার বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে।