ঝিনাইদহে কমছে কলা ও পানের আবাদ, বেড়েছে ফলের চাষ

‘কলা আর পান, ঝিনাইদহের প্রাণ’ -এই জনপ্রিয় স্লোগানে একসময় ঝিনাইদহ জেলার কৃষির পরিচয় বহন করত। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে ঝিনাইদহের কৃষির চিত্র। এখন আর আগের মতো কলা ও পানের আবাদ দেখা যায় না মাঠে। চাষিরা ঝুঁকছেন দেশি-বিদেশি ফলের দিকে। লাভজনক ও স্বল্প মেয়াদী ফলের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে তাদের। এতে ঐতিহ্যবাহী কলা ও পানের আবাদ ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে ইতিহাসের পাতায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের খরিপ-১ মৌসুমে ঝিনাইদহে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার ২১৮ হেক্টর জমিতে। একই সময়ে কলার আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ২৬৫ হেক্টর এবং পানের আবাদ হয়েছে ২ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪ হাজার ৫১০ হেক্টর (কলা) ও ২ হাজার ১৩৪ হেক্টর (পান)। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কলার আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৯১৫ হেক্টর এবং পানের ২ হাজার ৩০৯ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ, প্রতি বছরই ধীরে ধীরে কমছে কলা ও পানের আবাদ।
অন্যদিকে, ধান চাষে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। বরং রোপা আমন ও বোরো ধানের আবাদ কিছুটা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর, যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য বেশি।
মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উচ্চ জমিতে আগে কলা ও পান চাষ হতো। এখন সেখানে মাল্টা, পেয়ারা, ড্রাগনসহ নানা রকম ফলের বাগান গড়ে উঠছে। সময় কম লাগে, লাভ বেশি- এই কারণেই তারা ফল চাষে ঝুঁকছেন।
মহেশপুর উপজেলার আলমপুর গ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, যে জমিতে আগে কলা করতাম, এখন সেখানে ড্রাগন আর মাল্টা লাগাই। ফল আসে তাড়াতাড়ি, বাজারেও ভালো দাম পাওয়া যায়।
কোটচাঁদপুরের তালসার গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, কলা চাষে খরচ বেশি, সময়ও লাগে বেশি। ঝুঁকিও আছে। পেয়ারায় লাভ বেশি, ঝুঁকি কম।
হরিণাকুণ্ডুর তাহেরহুদা গ্রামের পানচাষী আসলাম মণ্ডল বলেন, আমাদের এখানে সবচেয়ে বেশি পানের চাষ হয়। এখন অনেকে পান বাদ দিয়ে ড্রাগন ফল করছে। তাই পানের বরজ কমে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টী চন্দ্র রায় বলেন, উঁচু জমিতে অন্যান্য ফলের চাষাবাদ বেড়েছে। আগে উঁচু শ্রেণির জমিতে কলা ও পানের চাষ হতো। এখন উঁচু জমিতে দেশি বিদেশি ফলের আবাদ বেড়েছে। কাজেই, কলা ও পানের চাষ কিছুটা কমছে।
ধানের উৎপাদন প্রসঙ্গে ষষ্টী চন্দ্র রায় বলেন, আমন ধানের পরিমাণ কমেনি। আউশের আবাদে প্রতিবছর তারতম্য হয়। আউশ ধানের আবাদ বৃষ্টি নির্ভর। বৃষ্টিপাত বেশি হলে নিচু জমিতে আউশ ধানের আবাদ কম হয়। আবার বৃষ্টিপাত কম হলেও আউশের আবাদ কম হয়। সবমিলিয়ে ধানের আবাদ জেলায় স্বাভাবিক রয়েছে।