এনসিপির কারণে নিবন্ধন প্রক্রিয়া আটকে রাখার অভিযোগ

নতুন দলগুলোর নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করার (সম্ভাব্য) কথা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। তবে, এখন পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে ইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে নিবন্ধন পাওয়ার দৌড়ে টিকে থাকা মৌলিক বাংলা ও বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি। আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) প্রথম তদন্তে উত্তীর্ণ এ দুটি দল নির্বাচন কমিশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলেনে এমন অভিযোগ তুলেছে।
মৌলিক বাংলার সভাপতি খান শোয়েব আমান বলেন, সরকার জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) বগলে করে নিয়ে ঘুরছে। মনে হচ্ছে তারা নিবন্ধন পেয়ে গেছে। আর নির্বাচন কমিশন তাদের জন্য অন্য দলগুলোর নিবন্ধনও আটকে রেখেছে।
ইসির তদন্ত কর্মকর্তারা অপ্রীতিকর প্রশ্ন করছেন উল্লেখ করে মৌলিক বাংলার সভাপতি খান শোয়েব আমান বলেন, নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মত এখন যারা ক্ষমতায় আছে তাদেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। তারা যদি এই সরকারের প্রতিনিধিত্ব না করতেন, তাহলে কীভাবে আমরা রাজনীতি করি, গণ মানুষের কথা বলি, আমাদের কিসের জন্য তারা বলছে, রাজনৈতিক দল করার দরকার কি। আমাদের যারা রাজনীতি করে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে তারা আজকে প্রশ্ন করছে। আমরা প্রত্যেকের (তদন্ত কর্মকর্তাদের) নাম নোট করেছি। উনারা আমাদের যেসব কথা বলেছেন খুবই অপ্রীতিকর কথা। খুবই সেনসিটিভ কথা যা রাজনৈতিক দলের প্রতি সরকারি কোনো মানুষ বলতে পারে না।
খান শোয়েব আমান বলেন, আমরা মানুষের কথা বলতে আসছি। ২০১২ সাল থেকে অনেক দল নিবন্ধন পেয়েছে। তারা কীভাবে নিবন্ধন পেয়েছে আমরা সবাই জানি। আমরা কোনো অবস্থাতেই ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে কোনো কম্প্রমাইজ করি নাই। কম্প্রমাইজ না করার জন্য আজকে আমরা এই পর্যন্ত আসছি। সময় হলে আমরা ওই কর্মকর্তাদের নাম জনসম্মক্ষে নিয়ে আসব। বর্তমান সরকার এনসিপির যারা নেতাকর্মী, তাদের বগলে নিয়ে ঘুরছে। তাদের ভাবসাব দেখলে মনে হয় যে তারা এখনই নেতা হয়ে গিয়েছে। আমাদের ওপরে যারা অত্যাচার করছেন জামাত বা বিএনপির লোকজন তাদের ক্ষেত্রে মনে হয় যে তারা অলরেডি নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন।বর্তমানে রাজনীতি করছে তারা কেউই আগামী দিনের কথা ভাবছে না। তারা ভাবছে বর্তমানের কথা।
একই সংবাদ সম্মেলনে মৌলিক বাংলার সাধারণ সম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ সজীব বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রথমে তদন্ত, পরে পুনর্তদন্ত, এখন আবার অধিকতর তদন্ত করছে। এতে আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। কারণ আমাদের নেতা-কর্মীরা অন্য পেশার পাশপাশি রাজনীতি করেন। বারবার তদন্তের নামে মাঠ পরিদর্শনে যাওয়ায় তাদের কর্ম ব্যাহত হচ্ছে। তারা যে তদন্ত করছে এটা ময়নাতদন্তের মতো।
ছাদেক আহম্মেদ সজীব বলেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সহযোগিতার থেকে অসহযোগিতাগুলো বেশি করেছে। ইসির বিধিমালা অনুযায়ী যে ডকুমেন্টস দেওয়ার প্রয়োজন আমরা প্রত্যেকটা ডকুমেন্টস দেওয়ার পরেও তারা যেটা করছে, তারা চায় যে, আমরা যে অফিসগুলো নিয়েছি, সেই অফিসের দলিল। আমরা অফিস নিয়ে ভাড়ার চুক্তিপত্র করছি। এই ভাড়ার চুক্তিপত্রের বাইরে যিনি মালিক থাকে তাকে সম্পত্তির দলিল নির্বাচন কমিশনকে দেখাইতে বলে। যেটা আসলেই পুরোটাই আনইথিক্যাল।
মৌলিক বাংলার সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা বলতে চাই নির্বাচন কমিশন আমাদের যেভাবে সহযোগিতা করার কথা ছিল এবং যেভাবে তারা প্রক্রিয়াগুলো চালাবে আসলে তারা পুরোটাই উল্টোভাবে করেছে। প্রথম ধাপে ২০ এপ্রিল আমরা যখন যে ডকুমেন্টসগুলো জমা দিই, নির্বাচন কমিশন তা তদন্ত সম্পন্ন করছে। যেটা আমাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়েছে আমরা সেখানে নানাভাবে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে যেয়ে তারা আমাদেরকে বিদ্রুপ করেছে এবং আমাদের অসহযোগিতা করেছে। তারা আমাদেরকে শক্তিক্ষয় এবং অর্থ ক্ষয় করিয়েছে, যেটা মৌলিক বাংলার জন্য খুবই মুশকিলের ব্যাপার।
এ নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে তাদের প্রক্রিয়াগুলো করতেছে, তারা একটা দলের জন্য বাকি দলগুলোর নিবন্ধন দিচ্ছে না। এনসিপিকে যেভাবে নির্বাচন কমিশন প্রায়োরিটি দিচ্ছে এবং তাদের জন্য বাকিদের যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া তা আটকে রেখে সেটাকে তিনটা ধাপে নিবন্ধনকে নিয়ে গেছে। এটা পুরোটাই সাংবিধান লঙ্ঘন। নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা লঙ্ঘন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রক্রিয়া কখনও হয়নি যে তাদের তদন্ত প্রক্রিয়াকে নিয়ে তিনটা ধাপে করতে হয়েছে। এই তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্বাচন কমিশন তাদের অক্ষমতা এবং তাদের অসহযোগিতাকে সবসময়ের জন্য জারি রেখেছে।
এদিকে বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিও অধিকতর তদন্ত না করে প্রথম তদন্তের ভিত্তিতে নিবন্ধন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে দলটির পক্ষ থেকে নিবন্ধন আইন সহজ করার কথাও বলা হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এ কথা জানিয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে এই দুটি দলই টিকেছিল। তবে আরও যাচাইয়ের জন্য অন্য ৯টি দলের সঙ্গে এদেরও অধিকতর তদন্ত করছে ইসি। ইতোমধ্যে এনসিপিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এনসিপির নিবন্ধন আটকে আছে শাপলা প্রতীক জটিলতায়। ইসি বলছে এই প্রতীক কোনো দলকে দেওয়া যাবে না। আর এনসিপি বলেছে শাপলা প্রতীক দিতে কোনো আইনগত বা রাজনৈতিক বাধা নেই। তারা শাপলা প্রতীক ছাড়া নিবন্ধন নেবে না। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫২টি।