ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৮ বছর আজ, আতঙ্ক কাটেনি উপকূলবাসীর
আজ ১৫ নভেম্বর, ২০০৭ সালের এই দিনে স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ আঘাত হানে উপকূলে। সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনার পাথরঘাটা। সিডরের ১৮ বছর পূর্ণ হলেও তাণ্ডবের কথা ভোলেনি পাথরঘাটা উপকূলের মানুষ। ১৮ বছর কেটে গেলেও মানুষের মন থেকে কাটেনি আতঙ্ক। এ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ। ১৯ বছরেও স্বাভাবিক হয়নি স্বজন ও সম্পদ হারানো মানুষের জীবন।
সিডরের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে পাথরঘাটার ৩৪৯ জনসহ বরগুনা জেলায় ১ হাজার ৩৪৫ জন মানুষ প্রাণ হারান। ঝড়ের তাণ্ডবে পুরো এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। লাশের পর লাশ পড়েছিল উপকূলজুড়ে। কবর দেওয়ার জায়গা পাওয়া যায়নি। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া পাথরঘাটার ৯১ জন জেলেসহ এখনো নিখোঁজ রয়েছে বেশ কয়েকজন। তারা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছে, জানে না তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা। পরিবারের সদস্যরা এখনো রয়েছে স্বজন ফিরে আসার অপেক্ষায়। স্বজনরা পায়নি কোনো মৃত্যু সনদ সে কারণে পারছে না কোনো জমিজমা বিক্রি করতে। পাচ্ছে না কোনো সরকারি সহায়তাও
মা সালেহার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছেলে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছে। সন্তানের শোকে বাবা অসুস্থ হয়ে বিছানায় দিন কাটাচ্ছে। সংসারে কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকার কারণে সালেহাকে মাছ শিকারে যেতে হয় নদীতে। খুব কষ্টে কাটছে তার দিন। পাথরঘাটায় এরকম অনেকেই তাদের পরিবারের প্রধানকে হারিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
সিডরে দুই ভাইকে হারানো রহিম বলেন, ‘আমার দুই ভাইসহ সতের জেলে নিয়ে একটি ট্রলার নিখোঁজ হয়েছে সিডরে। এখনো পাইনি ভাইদের কোনো সন্ধান, বেঁচে আছে না মরে গেছে তাও জানি না।’
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এই ঘূর্ণিঝড় কেড়ে নিয়েছে পাথরঘাটার মানুষের সব সম্বল। কেড়ে নিয়েছে আপনজনদের। তাই এ ক্ষতি অপূরণীয়। সরকারি ও সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলো সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করলে উপকূলবাসী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। একইসঙ্গে পরবর্তী ভয়াবহতার হাত থেকেও রক্ষা পাবে।

মাহমুদুর রহমান, বরগুনা (পাথরঘাটা-তালতলী)