সারা দেশ কোরআনের বাংলাদেশ হবে : ডা. শফিকুর রহমান
কোরআনের আইনের মাধ্যমে বিজয়ের বাঁশি চট্টগ্রাম থেকে বাজাতে হবে। সারা দেশ কোরানের বাংলাদেশ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান এ ঘোষণা দেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের বিচার বিভাগসহ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশে কেউ আবারও ফ্যাসিবাদের মতো আচরণ করলে তা বরদাস্ত করবে না জনগণ।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, তারা শুধু নিজেদের উন্নয়ন করেছিল। তারা দেশের ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। শাপলা চত্বরে অসংখ্য আলেম-উলামা ও মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যা করে কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বলেছিল ওরা (আলেম-উলামা ও মাদ্রাসা ছাত্র) গায়ে রং লাগিয়ে শুয়ে ছিল। তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল, আবার রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, তারা দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ফ্যাসিবাদকে নতুন করে আর দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।
৫ আগস্ট বিপ্লবের পরের দিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে দাবি করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অব্যাহত আছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে; প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে।
আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে—এই ঐক্য আমাদের জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলেও হুঁশিয়ার দেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামনুল হক বলেন, বাংলাদেশ গরিব দুঃখী মেহনতি মানুষের রক্তে গড়া। বনেদিদের বাংলাদেশ আর থাকবে না। অনেক দল থেকে আসন সমঝোতার অফার দেওয়া হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশের অধিকার মালিকানা কায়েম করতে চাই। ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার কবর রচনা করে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা হবে।
মামুনুল হক আরও বলেন, এবার ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলার মাটিতে জেগে উঠেছে। সব চক্রান্ত, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনতার বিজয় হবে।
বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ দাবি করে মামুনুল হক বলেন, দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ‘হ্যাঁ’ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ব্রিটিশ এই দেশ থেকে চলে গেলেও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধেও বৈষম্য দূর হয়নি। সেই থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যারা শাসক ছিল তারা বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। তাই ৫ আগস্টের আন্দোলনে হাজার হাজার জীবনের বিনিময়েও মানুষ মুক্তি পায়নি। আগামীতে আবারও চাঁদাবাজ, জালেমদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে বৈষম্য থাকবে না। কেউ দশতলায় কেউ নিচতলায় থাকবে- সেটা আর হবে না।
ফয়জুল করিম আরও বলেন, আমরা ইসলামের পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে থাকতে চাই। ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইসলাম আগামীতে ক্ষমতায় যাবে ইনশা আল্লাহ। যথাসময়ে নির্বাচন দিতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্র দেশের মানুষ মানবে না। হুমকি-ধমকি চলবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে নির্বাচন দিতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে চট্টগ্রামকে ইসলামের ঘাঁটি বানাই। চট্টগ্রামের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। আট দলের এই শক্তি ক্ষমতায় গেলে আপনারাই দেশ শাসন করবেন। কারও দাদার শক্তিতে এ দেশ আর চলবে না।
এটি এম আজহার আরও বলেন, বাংলাদশ এমন পর্যায়ে দাঁড়াবে বিদেশিরা এখানে পড়ালেখা করতে আসবে। আসুন আমরা সবাই মিলে সেই দেশ গড়ি।
সমাবেশে ৮ দলের পক্ষ থেকে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের নায়েবে আমির আলহাজ মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মুন্সি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আলাউল্লাহ আমিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা মুফতি মুসা বিন ইযহার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আলী উসমান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, খেলাফত মজসিলের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসানুল্লাহ ভুইয়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি রেজাউল করিম আবরার, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরী আমির মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চট্টগ্রাম মহানগরী সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মোতালেব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু মুজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা এমদাদ উল্লাহ সোহাইল, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা জিয়াউল হোসাইন।
পাঁচ দফা দাবিতে ৮ দলের এই সমাবেশ বিকেলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে মিছিল নিয়ে লালদীঘির মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। কর্মীরা দলীয় প্রতীকসহ ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে যোগ দেয় এ সমাবেশে। জুমার নামাজের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সামাবেশ আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সারোয়ার কামাল আজিজী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ডক্টর আহমদ আব্দুল কাদের, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম চান।

আরিচ আহমেদ শাহ, চট্টগ্রাম