বুদ্ধিজীবী হত্যা স্বাধীনতাবিরোধীদের পরিকল্পিত নীল নকশার ষড়যন্ত্র : মির্জা ফখরুল
একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পরিকল্পিত নীল নকশার ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, বুদ্ধিজীবী দিবসটি আমাদের কাছে খুব ভারাক্রান্ত। কারণ ১৬ ডিসেম্বরের আগে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, একটা নীল নকশার মাধ্যমে জাতিকে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত ছিল সেটা।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের যে, যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সেদিন যোগসাজশ করেছিল তাদের প্রতিনিধি হয়ে এসে বাড়িতে বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে অথবা তাদের বাড়ি থেকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল কিন্তু বাঙালি সন্তান। আজকে আমরা খুব ভালো করে জানি যে, তারা কারা ছিলেন। আমাদের ইতিহাস প্রমাণ করে তখনকার সেই রাজনৈতিক শক্তি যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তারাই সেদিন আমাদের সেই সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টিকে হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বারবার এই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র হয়েছে, বারবার এই দেশের মানুষের ওপরে আঘাত এসেছে এবং তাদেরকে যেন তারা মেধার ভিত্তিতে জেগে উঠতে না পারে, যেন তারা জ্ঞানে বিজ্ঞানে ওপরে উঠতে না পারে, শিক্ষায় দীক্ষায় জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে না পারে সেই চেষ্টাটা তখন করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে বিগত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লীগ শাসন আমলে একই ঘটনা ঘটেছে ভিন্ন অঙ্গীকে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল হয়েছে, আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে ফেলা হয়েছে। আমরা সবসময় এই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আমাদের এই জাতির বিরুদ্ধে আমরা দেখছি।
‘ওরা ভয় পাইয়ে দিতে চায়’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে নির্বাচনের তফসিল যখন ঘোষণা করা হলো তখনই হত্যা করার চেষ্টা করা হলো হাদিকে (শরীফ ওসমান বিন হাদি), একজন সৈনিক যে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। একটা ভয় আবার শুরু করতে চেয়েছে যে ভয় ১৫ বছর আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, শুধু আহ্বান জানাতে চাই চতুর্দিকে ষড়যন্ত্র হবে, চক্রান্ত হবে। তার মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে বিএনপি। সে জয় লাভ করবেই ইনশাল্লাহ সে বিশ্বাস আমাদের আছে।
তিনি বলেন, বিএনপি একটা লিবার ডেমোক্রেটিক পার্টি, একটা উদারপন্থি গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আশাবাদী এই কারণে যে, আজকে যতই চক্রান্ত হোক, ষড়যন্ত্র হোক কিন্তু সেই চক্রান্ত ষড়যন্ত্রকে ভেঙে ফেলে, নস্যাৎ করে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস এই বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা ১৫-১৬ বছর লড়াই করেছি, আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, বিশ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ইলিয়াস আলীসহ ১৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। তারপরে আমাদেরকে কিন্তু পরাজিত করতে পারেনি, আমাদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। সেই জন্যই আজকে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
‘বিএনপি প্রতিরোধ করবে’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, গত দুই দিন যে ঘটনাটি ঘটল একজনকে গুলি করার। এ ধরনের কাজ যারা করে একটি চিহ্নিত একটি দল, এই ধরনের অপকর্ম যারা করে তারা চিহ্নিত দল। এই দলটি বাংলাদেশকে কখনোই শান্তিতে থাকতে দেবে না।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, তবে বিএনপি সকল হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করবে। আপনারা ভাববেন না আমরা নীরব আছি, নীরব থাকব। তার অর্থ এই না আঘাত আসলে আমরা আপনাদেরকে সালাম দিয়ে চলে যাব। এই কথা ভাবার সুযোগ নেই।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুব দলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক