মানুষ এখন অন্তত ‘র্যাপ’ শব্দটা জানে : তৌফিক

‘আখের গোছাও’ শিরোনামে নতুন গান নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ৮ নভেম্বর মুক্তি দিয়েছেন র্যাপ শিল্পী তৌফিক আহমেদ। গানটির কথা, সুর, কণ্ঠ ছাড়াও ভিডিও নির্মাণ তাঁর। গানটি শোনা শেষ হলে মনে প্রশ্ন জাগল, শিল্পী কাদের আখের গোছাতে বললেন গানে-গানে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তৌফিকের মুঠোফোনে যখন যোগাযোগ করা হলো, তখন তিনি খুলনায়। ঢাকায় কবে ফিরবেন, ঠিক নেই।
এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে তাই তৌফিক আহমেদের কথা জমল হোয়াটসঅ্যাপে। এক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল তাঁর ভাবনায় বাংলাদেশে র্যাপ সংগীতের আদ্যোপান্ত।
এনটিভি অনলাইন : গানে কাদের আখের গোছাতে বললেন?
তৌফিক আহমেদ : আসলে ‘আখের গোছাও’ গানটির জন্ম দুঃখ থেকে, কষ্ট থেকে। আমরা পার্থিব জীবনে শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবি, নিজের ইহকালের আখের গোছাই, অন্যকে নিয়ে ভাবি না। না ভাবি গরিবকে নিয়ে, না ভাবি নিপীড়িতকে নিয়ে। পরলোকের আখেরটাও আমরা গোছাই না, গোছালে সবাইকে নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করতাম। আমি কাউকে আখের গোছাতে বলিনি। বরং সমাজের এই আজব আখের গোছানোর গল্পটা বলবার চেষ্টা করেছি।
এনটিভি অনলাইন : আপনি গানে-গানে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে প্রতিবাদ করেন, এর কারণটা কী?
তৌফিক আহমেদ : কারণ কী, তা আমারও জানা নেই। আমি মানুষ হিসেবে যা দেখি, ঘটে আশপাশে, তাই হয়তো ছন্দ কেটে বলি। আমার চোখে অসঙ্গতি বেশি ধরা পড়ে। কী আর করি...

এনটিভি অনলাইন : তা প্রতিবাদের জন্য র্যাপ গান বেছে নিলেন কেন?
তৌফিক আহমেদ : আমি র্যাপকে বাছিনি, বরং র্যাপ আমাকে বেছেছে। আমার আর আমার লেখার সম্পর্ক আত্মিক, অলৌকিক, এটা আমার বোধ। আমি শুধু প্রতিবাদের গান করেছি তা কিন্তু নয়, আনন্দ-হাসি, জীবনের গল্প, লড়াই-জয়-প্রেম, ঈশ্বর বন্দনা, এহেন অনেক বিষয় এসেছে আমার সুরে-লেখায়-র্যাপে-কণ্ঠে। তবে মানুষ কেমন জানি প্রতিবাদী আমিটাকে বেশি ভালোবাসে, এটা অবশ্য আনন্দের। আর শিল্প কিন্তু বরাবরই সমাজ বদলের হাতিয়ার, শিল্পকে নেহায়েত বিনোদন-নিমিত্ত অনুঘটক, এভাবে আমি দেখতে পারি না...
এনটিভি অনলাইন : যত দূর জানি, যুক্তরাজ্যে আইন বিষয়ে পড়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াচ্ছেন...
তৌফিক আহমেদ : দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াকালে প্রথম স্টেজে র্যাপ করি আর এরপর এলএলবি করতে বিলেতে চলে গেলে ভালো করে র্যাপ/ হিপহপ আমাতে চেপে বসে, ইউকের পরিবেশ-প্রকৃতি-সংস্কৃতি প্রভাবক হয়। আমার ব্যান্ড ‘রাজত্ব’র প্রথম অ্যালবাম একজন ইংরেজ সাউন্ড প্রডিউস করেছিল ২০১০ সালে। সময় কী পাষাণ... যা হোক, এরপর ব্যারিস্টার হই, এলএলএম করি, এখন ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, ইউকেতে প্রফেশনাল সার্টিফিকেট কোর্স করছি, বিষয়, ‘ল অ্যান্ড জেনেটিকস’। আমার শিক্ষকতার কিন্তু পাঁচ বছর হয়ে গেছে। এ যাবৎ তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি আর পড়াচ্ছি...
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশে র্যাপ গানের বর্তমান অবস্থা কী?
তৌফিক আহমেদ : এখন মাঠ উন্মুক্ত, শিল্পীও ঢের। আমাদের যে প্রতিবন্ধকতা ছিল, তা নবীন র্যাপারদের নেই। কারণ, মানুষ এখন অন্তত ‘র্যাপ’ শব্দটা জানে। ইউটিউব আর সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে অনেক ধরনের গান হচ্ছে। ভালো বা খারাপ, এ রকম বিচারিক কথা না বলে শুধু বলব, যে গানে রসদ থাকে, সেই গান ১০ বছর পরেও নতুন শ্রোতা পায়, সমাদর পায়...
এনটিভি অনলাইন : এই ঘরানার গান তো বাংলাদেশে এখনো একটি নির্দিষ্ট শ্রোতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটার কারণ কী, আর এই অবস্থান ভাঙতে কী করণীয়...
তৌফিক আহমেদ : পৃষ্ঠপোষকের অভাব আছে। হিপহপ বেজড শো অনেক কম হয়। ব্র্যান্ড-করপোরেটদের এগিয়ে আসা উচিত ভালো র্যাপের পাশে। যে র্যাপে কথা হবে মুখ্য, গল্প থাকবে। থাকবে দুঃখ বা আনন্দ, কিন্তু গালিগালাজ কীভাবে শিল্প হয়, সেই প্রশ্ন আমি আজীবন করেই যাব। র্যাপারদের অনেক ভাষার র্যাপ শুনতে হবে, বাংলা গদ্য-পদ্য পড়তে হবে, জীবন দেখবার চোখ থাকতে হবে, লিখতে হবে আর গাইতে হবে...
এনটিভি অনলাইন : গান নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী।
তৌফিক আহমেদ : এটা সিক্রেট থাক। আসছে অনেক কিছুই হয়তো। শুধু দেখে যেতে হবে...