বারান্দাও ভাড়া দিচ্ছে এফডিসি, শুটিংয়ে সমস্যা
ঢাকাই চলচ্চিত্রে প্রায়ই দেখা যায় কর্মব্যস্ত আদালত প্রাঙ্গণ বা হাসপাতাল। অনেক সময় দেখা যায় কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা ঘোরাফেরা করছে বারান্দায়। এ ধরনের দৃশ্য প্রায়ই শুট করা হয় এফডিসির ভেতরে ৮ নম্বর শুটিং ফ্লোরের সামনে থাকা বারান্দায়। কিন্তু এখন আর সেখানে শুটিং করা যাচ্ছে না। কয়েক মাস ধরেই বারান্দাটিতে রাখা হয়েছে একটি টিভি অনুষ্ঠানের সেটের সরঞ্জাম। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের কাছে শুটিং ফ্লোর ভাড়া দেওয়া হলেও, তারা বারান্দাতেও সরঞ্জাম রাখছে বলে শুটিং করতে পারছেন না অনেক পরিচালক। এনটিভি অনলাইনের কাছে এমনটাই অভিযোগ করলেন অনেকে।
এফডিসিতে ‘বাহাদুরী’ ছবির শুটিং করছেন পরিচালক শফিক হাসান। তিনি বলেন, ‘এখন আর এফডিসিতে শুটিং করতে ইচ্ছে করে না। মনের টানে এখানে শুটিং করতে এসে বিভিন্ন ধরনের বাধা পেতে হয়, আগের মতো আর শুটিং করতে পারি না। সারাদিন অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিং করেছি, কিছু চেজিং করার জন্য ৮ নম্বর শুটিং ফ্লোরের বারান্দায় শুটিং করতে এসে দেখি এখানে সেটের বিভিন্ন জিনিস দিয়ে পুরো জায়গাটা বন্ধ করে রাখা হয়েছে, আমাদের হাঁটতে পর্যন্ত সমস্যা হচ্ছে। শুটিং করব কিভাবে? ভালো একটা ফ্লোর নেই, এফডিসির বড় ফ্লোরগুলো এখন টিভি চ্যানেলের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ঠিক আছে আমাদের শুটিং কম হয়, তাই তারা ফ্লোর ভাড়া দিয়েছে, কিন্তু এখন দেখছি বারান্দাগুলোও দখল হয়ে গেছে।’
শফিক হাসান আরো বলেন, ‘আমরা এফডিসির প্রত্যেকটা জায়গা ব্যবহার করি, বিভিন্ন ভাবে। কিন্তু এভাবে যদি আমাদের কাজের জায়গাগুলো বন্ধ করে রাখা হয়, তাহলে আমরা শুটিং করব কিভাবে?’
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় এফডিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের এফডিসিতে এখন আর আগের মতো ছবির শুটিং হয় না। যে কারণে দুটি ফ্লোর আমরা টিভি চ্যানেলের কাছে ভাড়া দিয়েছি। কারণ আমাদের এই এফডিসির ইনকাম দিয়েই চলতে হয়। তবে বাকি ফ্লোরগুলো তো আছে, সেখানে সিনেমার শুটিং করছেন পরিচালকরা।’
৮ নম্বর ফ্লোরের বারান্দায় সেটের সরঞ্জাম রাখা প্রসঙ্গে এফডিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, ‘আসলে এই বারান্দাগুলোও আমরা তাদের কাছে ভাড়া দিয়েছি। ডেলি হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে আমরা প্রতিদিন তিন হাজার ৫৫০ টাকা পাই। আসলে ভাড়ার টাকা না পেলে এফডিসি বন্ধ হয়ে যাবে।’
কিন্তু এভাবে যেখানে সেখানে সরঞ্জাম রাখলে অন্য পরিচালকদের শুটিংয়ে সমস্যা হচ্ছে না? জবাবে ওই কর্মকর্তা জানান, ‘আমাদের যদি আগে থেকে পরিচালকরা জানান, তা হলে আমরা উনাদের বলে মাল সরিয়ে ফেলতে পারব। সেই ক্ষেত্রে শুটিং করতে কোনো সমস্যা হবে না।’
বারান্দা ভাড়া দেওয়া নিয়ে এরইমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। চলচ্চিত্রের ক্যামরাম্যান মোহ্ম্মদ আজহার বলেন, ‘এখন আর ইচ্ছে মতো ক্যামেরার ফ্রেম ধরতে পারি না। বিভিন্ন সেটের মাল রাখার জন্য এই ৮ নম্বরের বারান্দার মতো আরো বেশ কয়েকটি জায়গা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ক্যামেরা ধরলেই এসব ফ্রেমে চলে আসে, এখানে কাজ করাটা আসলেই যন্ত্রণা মনে হয়। আমরা বুঝি না টাকার জন্য এখন বারান্দাও ভাড়া দেওয়া শুরু হয়েছে, তার মানে চলচ্চিত্র নিয়ে কোনো ভাবনা তাদের নেই।’