অনুপ্রেরণার গান
সলিল সুরে মোৎজার্ট মুগ্ধতা
ভদ্রলোক পেশায় ডাক্তার, আবাসস্থল আসাম। বাঙালি হলেও পশ্চিমা সংগীতে বেজায় আগ্রহ তাঁর। মানুষজনের অসুখ-বিসুখ নিয়ে কারবারের মাঝেও পশ্চিমা ধ্রুপদী সংগীত তাঁর সংগ্রহ করা চাই-ই চাই। ভদ্রলোকের নাম জ্ঞানেন্দ্রময় চৌধুরী। তাঁর ছেলে সলিলও এই রেকর্ডগুলো নিয়মিত শোনে। এগুলোর সঙ্গেই ধীরে ধীরে বেড়ে উঠবে সে। আরো পরে, পুরো ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এক নামেই চিনবে তাঁকে— সলিলদা। এমনটাই লেখা ছিল ভবিতব্যে।
সলিল চৌধুরী একাধারে একজন সুরকার, কবি ও সাহিত্যিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। দক্ষিণ-চব্বিশ পরগনা জেলার রাজপুর সোনারপুর অঞ্চলের গাজীপুরে জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তির ক্যারিয়ার কিন্তু বিস্তৃত হিন্দি চলচ্চিত্রের জগতেই। তবে অজস্র বাংলা এবং দক্ষিণ ভারতীয় ছবির গান নিয়েও কাজ করেছেন তিনি। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কাটিয়েছেন ক্যারিয়ারের রমরমা সময়। বাঁশি, এসরাজ, ভায়োলিন আর পিয়ানোতে দারুণ দক্ষ ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জড়িয়েছেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে, কম্যুনিস্ট পার্টিরও একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
তবে ছোটবেলা থেকে শোনার কারণেই, তাঁর সুরসৃষ্টিতে পশ্চিমা প্রভাব লক্ষণীয়। একে অনেকেই ‘নকল’ বলে বিস্তর বাহাস করেছেন, বি টাউনে। তবে সলিল ভক্তরা মনে করেন এসব পশ্চিমা প্রভাবিত সুর সৃষ্টি হয়েছে অনুপ্রেরণা আর ভালোবাসা থেকে। সলিলের সুরায়োজনে নির্মিত এমনই একটি গান- ‘ইতনা না মুঝে তু পেয়ার বড়হা’।
সময়কাল ১৯৬১। হৃষিকেশ মুখার্জির ‘ছায়া’ নামের একটি চলচ্চিত্রে সুনীল দত্ত আর আশা পারেখের ঠোঁটে গানটি শুনেছিলেন ও দেখেছিলেন দর্শক। গানটি গেয়েছিলেন লতা মুঙ্গেশকর ও তালাত মেহমুদ। পুরো গানের সুরই সলিল আগাগোড়া আয়োজন করেছিলেন মোৎজার্টের ৪০ নম্বর সিম্ফোনির ওপর ভর করে।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা যায়, উলফগ্যাং আমেদিউস মোৎজার্ট ‘সিম্ফোনি নং ৪০ ইন জি মাইনর’-এর নোটের কাজ পূর্ণ করেন ১৭৮৮ সালের ২৫ জুলাই। সে হিসেবে বলা যায়, প্রায় পৌনে ২০০ বছর পর একে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অনেকটা বলিউডি ফ্লেভারের ছাঁচে ফেলেছিলেন সলিল। হিন্দি ছবির দর্শকমাত্রই জানেন, গানটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল।
মোৎজার্টের কম্পোজিশন ও সলিলের সুরে গান, দুটোই শুনে নিতে পারেন নিচের ইউটিউব লিংক থেকে।
মোৎজার্ট সিম্ফোনি নম্বর ৪০ ইন জি মাইনর, কে. ৫৫০ (পূর্ণাঙ্গ)
সলিল চৌধুরীর সুরায়োজনে ‘ইতনা না মুঝে তু পেয়ার বড়হা’

সামি আল মেহেদী