বলিউডি তিন মা
আবেগের প্রতিফলন বলিউডের ছবিতে একটু বেশিই থাকে। আবেগকে কাজে লাগিয়ে সিনেমাওয়ালারা কিছু পয়সা কামিয়ে নিতে চান। তাই বলিউড কিংবা আমাদের ঢালিউডে আবেগটা থাকে পুরোপুরি, বিশেষ করে মায়ের চরিত্রে। তবে সময়ের সাথে সাথে বলিউডের মায়ের চরিত্র মাঝে মাঝে কিছু বাঁক নিয়েছে। হাজার হাজার হিন্দি ছবির মধ্য থেকে বাছাই করা তিন মায়ের চরিত্র।
মাদার ইন্ডিয়া
১৯৫৭ সালের ক্ল্যাসিক মেলোড্রামা হিন্দি এই ছবিটি বানিয়েছিলেন মেহবুব খান। এই ছবিতে রাধার ভূমিকায় অভিনয় করেন নার্গিস। ছবি শুরু হয় গ্রামে একটি খাল খননের মাধ্যমে। গ্রামের সবার কাছেই রাধা তাদের মা। কিন্তু রাধার জীবনটা আর সব নারীর মতোই অবর্ণনীয় কষ্টের। গ্রামের মহাজন সুখিলালার কাছ থেকে সুদে টাকা ধার করেছিল তার শাশুড়ি। সেই টাকা শোধ করতে নিজেদের অল্প একটু জমিতে দিন-রাত পরিশ্রম করত রাধা আর তার স্বামী শামু। কিন্তু জীবনযুদ্ধ থেকে পিছু হটে রামু। দুই ছেলে আর রাধাকে ফেলে পালিয়ে যায় সে। তবু রাধা হাল ছাড়ে না। আরেকটি ছেলে হয় তার। কিন্তু এক বন্যায় মারা যায় ছেলেটি, ধ্বংস হয় ঘর-ফসল। ছোটবেলা থেকে অবহেলা পেয়ে ডাকাত হয়ে ওঠে রাধার বড় ছেলে বিরজু। সেই বিরজুকে নিজের হাতে গুলি করে হত্যা করে রাধা। তাও আবার সেই মহাজন সুখিলালার ঘরে ডাকাতি থামাতে গিয়ে। পুরো জীবনটাই যার কষ্টের, সেই রাধা গ্রামের মানুষের কষ্টে সাথে থাকে সব সময়। তাই তো পুরো গ্রাম তাকে মা বলে ডাকে। এই ছবিতে রাধার বড় ছেলে বিরজুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সুনীল দত্ত। বাস্তব জীবনে পরে নার্গিস ও সুনীল দত্ত বিয়ে করেছিলেন। অথচ ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবিতে তাঁরা অভিনয় করেছিলেন মা ও ছেলের ভূমিকায়। নার্গিস ও সুনীলের ছেলে বলিউডের মুন্নাভাই খ্যাত অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত।
করন অর্জুন
শাহরুখ ও সালমান খান একত্রে যে গুটিকয়েক ছবিতে কাজ করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি করন অর্জুন। আর এই ছবিতে করন অর্জুনের মায়ের বিখ্যাত সংলাপ, ‘মেরা কারান-অর্জুন আ গ্যায়া’ (আমার করন-অর্জুন এসে গেছে) তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এই সংলাপটি ছবিতে দিয়েছিলেন রাখি। শুধু সালমান-শাহরুখ নয়, লাওয়ারিশ (১৯৮১) এবং শক্তি (১৯৮২) ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাখি। ’৮০ ও ৯০-এর দশকে বিধবা মায়ের চরিত্রগুলো যেন তৈরিই হতো তাঁর জন্য। রাম লক্ষণ (১৯৮৯), খলনায়ক (১৯৯৩) ছবিতেও মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন রাখি।
হায়দার
শেকসপিয়রের হেমলেট অবলম্বনে ২০১৪ সালে বিশাল ভরদ্বাজ নির্মাণ করেন ‘হায়দার’। এতে হায়দারের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন টাবু। অনেকদিন পর পর্দায় হাজির হয়ে আবার নিজের অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর সাথে সমানতালে অভিনয় করেছেন হায়দারের ভূমিকায় শহিদ কাপুর এবং হায়দারের চাচার ভূমিকায় কে কে মেনন। গাজালা মীরের ভূমিকায় অভিনয় করেন টাবু। কাশ্মীরের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ছবিতে দেখা যায় গাজালার স্বামীকে ভারতীয় সেনারা ধরে নিয়ে যায়, তারপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। দীর্ঘ সময় পর তাঁর লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর ভাই খুররম মীরকে বিয়ে করেন গাজালা। বাবার মৃত্যুর জন্য হায়দার তাঁর চাচা খুররমকেই সন্দেহ করে। মায়ের সাথে চাচার সম্পর্ক মেনে নিতে পারে না সে। ছেলেকে বাঁচাতে আত্মঘাতী হয়ে ওঠেন গাজালা।