ফুলের বিছানায় জুবিন গার্গ, গুৱাহাটিতে শেষ শ্রদ্ধায় মানুষের ঢল

আসামের প্রিয় কণ্ঠশিল্পী জুবিন গর্গ আর নেই—এই হঠাৎ সংবাদে স্তব্ধ হয়ে আছে গোটা অঞ্চল। শুক্রবার সিঙ্গাপুরের নীল সমুদ্রের তলায় ডুব দিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু আর ভেসে ওঠা হলো না। হাসপাতালের শয্যায় প্রাণের জন্য লড়াই করেছিলেন কয়েক ঘণ্টা, তারপর নীরব হয়ে গেল তাঁর কণ্ঠ। বয়স হয়েছিল মাত্র ৫২।
সিঙ্গাপুরেই সম্পন্ন হয় অটোপসি। এরপর বিশেষ বিমানে মরদেহ নিয়ে আসা হয় দিল্লিতে। শনিবার ভোরে হাজারো মানুষের শোকের মাঝে জুবিনের দেহ পৌঁছায় গুৱাহাটী। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় ভিড় সামলাতে হিমশিম খায় পুলিশ। কান্নাভেজা মুখে অপেক্ষা করছিলেন অসংখ্য ভক্ত—যেন শেষবার তাঁর ছায়া দেখার জন্য ব্যাকুল সবাই।
প্রথমে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর গৃহে। বৃদ্ধ পিতা কাঁপা হাতে ছেলেকে শেষবারের মতো ছুঁয়ে দেখেন—চারপাশ তখন নীরব কান্নায় ভরা। আত্মীয়-স্বজনদের বুকফাটা আহাজারি ছড়িয়ে পড়ে ঘরজুড়ে। এরপর মরদেহ সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় সরুসাজাই স্টেডিয়ামে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বসাধারণ সেখানে ফুল আর অশ্রু দিয়ে বিদায় জানাতে পারবেন তাঁদের প্রিয় ‘ইয়া আলি’ শিল্পীকে।
সকালে মরদেহ পৌঁছাতেই স্টেডিয়ামের চারদিক জুড়ে মানুষের ঢল নামে। ভক্তদের ভিড় এতটাই বাড়ে যে ভেতরে ঢোকার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেককে। হাতে ফুল, কপালে অশ্রু—কেউ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে, কেউ আবার প্রিয় গায়কের গান গাইতে গাইতে ভিজে উঠেছেন আবেগে। পুলিশের কড়া নিরাপত্তা সত্ত্বেও শৃঙ্খলা ভাঙার উপক্রম হয় বারবার, তবু ভক্তদের একটাই চাওয়া—শেষবার তাঁর মুখ দেখা।
শেষকৃত্য কোথায় এবং কীভাবে হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আসাম সরকার ও পরিবার যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেবে—শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সঙ্গে যেন তাঁর শেষযাত্রা সম্পন্ন হয়।
গোটা আসাম আজ শোকগ্রস্ত। বাজারের দোকান থেকে রেডিও, ক্যাফে থেকে ঘরের কোণে—যেখানেই বাজছে তাঁর গান, সেখানেই অশ্রু ঝরছে নিঃশব্দে। ভক্তরা বলছেন, তাঁর কণ্ঠ হারালেও সুর কখনো মুছে যাবে না।
নীল সমুদ্রে ডুব দিয়ে চলে গেলেন জুবিন গার্গ, রেখে গেলেন হাজারো অসমাপ্ত সুর আর কোটি ভক্তের অশ্রুসিক্ত হৃদয়।