বলিউড ছাড়ার পরও টানা ৭ সিনেমা ফ্লপ : কেমন ছিল কেডি পাঠকের জীবনযুদ্ধ?

বাংলাদেশের দর্শক তাঁকে চেনে ‘কেডি পাঠক’ নামে—সত্যান্বেষী আইনজীবী, যে কখনো থেমে থাকে না। কিন্তু সেই চরিত্রের পেছনে আছে এক জীবনযুদ্ধ।
জন্মদিনে ফিরে দেখলে বোঝা যায়, আজকের রনিত রায়ের প্রতিটি দৃঢ় দৃষ্টি, প্রতিটি সংলাপের গভীরতা তার অতীতের লড়াইয়ের ফল।
১৯৬৫ সালে নাগপুরে জন্ম রনিত বোস রায়। পড়াশোনা হোটেল ম্যানেজমেন্টে হলেও অন্তরে ছিল অভিনয়ের আগুন। সেই আগুনই টেনে আনে তাঁকে মুম্বাই—সিনেমার স্বপ্ন হাতে নিয়ে, পকেটে শূন্য। টিকে থাকার জন্য হোটেলে ট্রেনি হিসেবে কাজ করেন—বাসন মাজা থেকে ওয়েটার, সবই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাঁচার জন্য।
১৯৯২ সালে ‘জান তেরে নাম’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক। সিনেমা হিট, কিন্তু হিট হলেও ৬ মাস কোনও কাজ পাননি। পকেটে খালি, ডাল-রুটি দিয়েই দিন কেটেছে। পরের বছর ‘বোম্ব ব্লাস্ট’-এ অভিনয় করলেও অর্থিক সংকট পিছু ছাড়েনি। বাধ্য হয়ে বলিউড ছেড়ে বাংলা, তামিল, তেলেগু সিনেমায় অভিনয় করলেও পরপর সাতটি সিনেমা ফ্লপ করে। ব্যক্তিগত জীবনেও এসেছে বিপর্যয়—বিবাহবিচ্ছেদসহ।
তবু হাল ছাড়েননি। ছোট পর্দা হয়ে ওঠে তাঁর দ্বিতীয় জন্ম। ‘কামাল’, ‘কাসৌতি জিন্দেগি কে’, ‘কিউকি সাস ভি কভি বহু থি’— ধারাবাহিকগুলো দেখায় তাঁর ধৈর্য্য এবং লড়াই ফল দিয়েছে। ২০১০ সালে ‘আদালত’-এ কেডি পাঠক হিসেবে পৌঁছান জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বাংলাদেশের দর্শকও মুগ্ধ হয়েছেন প্রতিটি দৃশ্যে সেই সত্যান্বেষী আইনজীবীকে, যার চরিত্রে লুকিয়ে আছে রনিত রায়ের জীবনের প্রতিটি সংগ্রাম।
তবে সাফল্যের সঙ্গে বিতর্কও পিছু ছাড়েনি। ২০১২ সালে দিওয়ালি পার্টি থেকে ফেরার পথে একটি ধাক্কা মারে তাঁর মার্সিডিজ বেঞ্জ। চারজন আহত হন, চালকের আসনে ছিলেন রনিত নিজেই। প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার হন, জরিমানা দিতে হয়। তবে মেডিক্যাল পরীক্ষায় ড্রাগের অস্তিত্ব না থাকায় জামিনে মুক্তি পান। সেই দিনও ছিল তাঁর জীবনের আরেক অধ্যায়, যেখানে ভাঙা মন, দোষারোপ আর অনিশ্চয়তার মধ্যেও তিনি হাল ছাড়েননি।
বড় পর্দাতেও ফিরে আসেন নতুন উদ্যমে। ‘উড়ান’, ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াদালা’, ‘আগলি’, ‘২ স্টেটস’, ‘গুদ্দু রঙ্গেলা’— প্রতিটি সিনেমায় নিজের অবস্থান নতুন করে তৈরি করেছেন। ওয়েব সিরিজেও ‘হস্টেজ’, ‘৭ কদম’-এ প্রমাণ করেছেন, বয়স বা সময় নয়, লড়াই আর প্রতিভাই স্থায়ী।
অভিনয়ের বাইরে গড়ে তুলেছেন নিরাপত্তা সংস্থা, বলিউডের খ্যাতনামা তারকাদের সুরক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু সব সাফল্যের পেছনে আছে সেই রাতগুলো—ভাঙা ঘরে একা দাঁড়িয়ে ভাবা, ডাল-রুটি খেয়ে বেঁচে থাকা, ফ্লপ সিনেমার ব্যর্থতা, বিতর্কের ধাক্কা—সব মিলিয়ে আজকের রনিত।
আজ রনিত রায় শুধু অভিনেতা নন। তিনি জীবনের লড়াইয়ের জীবন্ত প্রতীক। বাংলাদেশের দর্শকরা তাঁকে কেবল কেডি পাঠক হিসেবেই নয়, সেই লড়াকু মনোভাবের প্রতীক হিসেবেও মনে রাখেন। জন্মদিনে শুধু শুভেচ্ছা নয়, মনে পড়ে সেই সংগ্রামের দিনগুলো—ডাল-রুটি খেয়ে টিকে থাকা, হতাশার মধ্যে মাথা উঁচু রাখা।
আজকের দিনটি শুধু জন্মদিন নয়—এটি এক অনুপ্রেরণার দিন, এক নির্ভীক মনোবলের দিন। শেখায়, বিশ্বাস ও ধৈর্য ধরে এগিয়ে গেলে জীবন নিজেই আপনাকে আলো দেখায়।