ইফতার থেকে সেহরি, কমপক্ষে কত গ্লাস পানি খাবেন?
রোজার মাসে আমাদের অনেকগুলো বিষয় জানার থাকে। তেমনই একটি বিষয়, আমরা রোজার মাসে কতটুকু পানি খাব এবং কী ধরনের খাবার খেলে আমাদের পানির চাহিদা পূরণ হবে। আজ আমরা একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
এনটিভির নিয়মিত এক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনীম। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকেই এখন জেনে গেছি যে রোজাটা কয়েক বছর ধরে গরমের মধ্যে পড়েছে এবং এই অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেকে রোজা রাখতে গিয়ে অনেক সময় শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাচ্ছে এবং তারা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অনেকেই কিন্তু ছোট থেকে রোজা রাখার চেষ্টা করে থাকে। বা বয়স্ক যারা আছে, তাদের মধ্যেও কিন্তু অনেকে অসুস্থ থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত গরম এবং দীর্ঘ সময় রোজা রাখার কারণে তাদের শরীরে পানির একটি ইমব্যালান্স তৈরি হচ্ছে। যে কারণে তারা রোজা শেষে অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো অবস্থায় পড়ছে।
পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনীম বলেন, পানি খাওয়ার সময়টা হলো, যখন আমরা ইফতার করছি, ইফতারের এক ঘণ্টা পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত সময়ে কমপক্ষে আমাদের ১০ গ্লাস পানি গ্রহণ করতে হবে। এই পানিটা আমরা সাধারণ পানি গ্রহণ করব। এ ছাড়া অন্যান্য আরও অনেক ধরনের খাবার আছে, যে খাবারগুলো দিয়ে আমরা পানির চাহিদা পূরণ করতে পারি। আমরা জানি যে গ্রীষ্মকাল বা গরমের সময়কে মধুমাস বলা হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি ফল কিন্তু এ সময় আমরা পেয়ে থাকি। আমাদের আশপাশে দেখলেই আমরা পেয়ে যাব ফলের সমাহার। এই ফলে প্রচুর পানির অংশ থাকে। এই পানির সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোলাইটস থাকে। যেমন—পটাশিয়াম, সোডিয়াম, বিভিন্ন ইলেকট্রোলাইটস; যেগুলো আমাদের শরীরের যখন, আমাদের শরীর থেকে যখন ঘাম বেরিয়ে যাচ্ছে বা শরীর থেকে যখন পানি বের হয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের শরীরের পানির সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোলাইটসের ইমব্যালান্স হয়ে থাকে। যখনই আমরা এ ধরনের ফল, যেমন—তরমুজ বা ডাবের পানি বা আপেল বা যেকোনো ধরনের রসাল যে ফলগুলো, সে ফলগুলো যদি আমরা ফ্রেশ, কোনো ধরনের চিনি বা অন্যান্য কিছু যুক্ত করা যাবে না। শুধু আমরা ফল থেকে বা এ রকম ডাবের পানি যদি আমরা ইফতারিতে নিয়ে থাকি, তাহলে দেখা যাবে যে পানির সাথে সাথে আমাদের যে ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালান্স, সেটা কিন্তু ঠিকভাবে ব্যালান্স করতে সক্ষম হচ্ছে।
এ ছাড়া আরও কিছু বিষয় আমাদের জানার থাকে, তেমনই একটি বিষয় হলো, রোজার মাসে কি আমাদের চা-কফি এগুলো বা কোল্ড ড্রিংকস কি খাওয়া যেতে পারে? এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতে পারি, যেকোনো ধরনের ক্যাফেইন খাবার মানে ড্রিংকস, সারা দিন রোজা রাখার পরে আমাদের এ ধরনের ক্যাফেইনযুক্ত পানি পান করার ফলে ইমিউনেশনটা বেড়ে যেতে পারে, যখনই ইমিউনেশনটা বেড়ে যাচ্ছে, তখনই কিন্তু আমাদের শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া যদি আমরা সুগারি যেসব কোল্ড ড্রিংকস আছে, সেগুলো গ্রহণ করার পরেও কিন্তু আমাদের অনেক ধরনের প্রবলেম হতে পারে। এ কারণে আমরা বলব, রোজার মাসে আমাদের যে ধরনের পানিযুক্ত খাবার খেলে শরীরে পানির স্বল্পতা দূর হয়ে যাবে, সেটা হচ্ছে একদম সাধারণ পানি। অথবা আমরা এখন যে ফলগুলো পাব—তরমুজ, ডাবের পানি বা অন্যান্য যে ফলগুলো এখন পাওয়া যাবে, মৌসুমি যে ফলগুলো থাকবে, সে ফলগুলো প্রাকৃতিক জুস করতে হবে। মানে কোনো ধরনের চিনি বা মধু যোগ করা যাবে না। শুধু ফলের জুস থেকে আমরা সুগার বা অন্যান্য ইলেকট্রোলাইটস পেয়ে থাকব। এটা যদি আপনি ইফতারের পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ গ্লাস শরবত বা পানি খেতে পারেন, তাহলে আপনার সারা দিনের যে রোজা রাখার ফলে শরীরের যে পানির চাহিদা, সেটা সুন্দরভাবে পূরণ হয়ে যাবে।