গর্ভবতী মায়েদের থাইরয়েডের রোগ ও তার চিকিৎসা
থাইরয়েড একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি। যেখান থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনটা মানবদেহের বিপাক প্রক্রিয়াকে ক্রিয়াশীল রাখে। শরীরে থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা হয়। এই গ্রন্থিটা আমাদের গলার সামনের দিকে প্রজাপতির মতো থাকে।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে থাইরয়েড গ্রন্থির কাজের বিষয়, গর্ভবতী মায়েদের থাইরয়েডের রোগ ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে কথা বলেছেন নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শামীম আল মামুন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ডা. নুসরাত জাহান দীপা।
থাইরয়েডটা কী? সঞ্চলকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শামীম আল মামুন বলেন, ‘থাইরয়েড একটি এন্ডোক্রাইনিক গ্রন্থি, যেখান থেকে হরমোন তৈরি হয়। এই হরমোনটা আমাদের দেহের বিপাক প্রক্রিয়াকে ক্রিয়াশীল রাখে। প্রত্যেকটা দেহেরই একটি রেগুলেটরি সিস্টেম থাকে। একটি দেহের রেগুলেটরি সিস্টেম হচ্ছে ব্রেইন। আপনি কী চিন্তা করছেন, কী ভাবছেন, সেটা নির্ধারণ করছে। আরেকটি বিষয় হলো—আপনি যে খাবার খাচ্ছেন, সেটি দেহের ভিতরে গিয়ে শক্তি তৈরি হচ্ছে। ফলে আপনার দেহের একটি অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই ব্যাপরগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাইরয়েডের হরমোনগুলো। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, থাইরয়েড কোনো রোগ নয়। এটি হচ্ছে এক ধরনের গ্রন্থি, যা গলার নিচে থাকে। এটা দেখতে প্রজাপতির মতো একটি অঙ্গ।
এটির কাজ হচ্ছে-থাইরয়েড থেকে হরমোন তৈরি হয়। সেই হরমোনগুলো আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া বা রেগুলেটরি সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে।
এই থাইরয়েডের গ্রন্থিতে কখনও যদি কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে আসলে কী কী ধরনের অসুবিধা হতে পারে বা রোগ হতে পারে, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শামীম আল মামুন বলেন, ‘শরীরের অন্যান্য রোগের মতো এটিরও অনেক রোগ হতে পারে। যেমন : থাইরয়েড থেকে হরমোন তৈরি হয়। আর হরমোন যখন তৈরি হয়, তখন এই হরমোনগুলোকে বলি টি-থ্রি ও টি-ফোর। টি-ফোরকে থাইরক্সিন এবং টি-থ্রিকে ট্রাইডোথাইরোনাইন বলে। এই দুটি হরমোন দেহের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সংঘটিত করে। তাহলে, এই দুটি হরমোনের কম বা বেশি হতে পারে। যদি দেখা যায় হরমোনটা বেশি বেশি তৈরি হয়, তাহলে থাইরয়েড একটি রোগ হয়। যেটাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে। আবার যদি হরমোনটা কম তৈরি হয়, তখন সেটাকে হাইপো-থাইরয়েডিজম বলে। এই দুটি হরমোন তৈরি করে। কিন্তু, এই দুটি হরমোন তৈরি করার জন্য একটি রেগুলেটরি সিস্টেম থাকে। সেই সিস্টেমটা হচ্ছে আরেকটি হরমোন এই দুইটি হরমোন তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করে। কখনো কম বা বেশি তৈরিতে এই প্রভাব বিস্তার করে।
এই হরমোনটা কিন্তু থাইরয়েড তৈরি করে না। এই হরমোন তৈরি করে ব্রেইনের পিটুইটারি নামক এক ধরনের গ্রন্থি থাকে। সেই পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে আরেকটি হরমোন তৈরি হয়, যা থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH)। এখন অধিকাংশ মানুষের ধারণা এটি আসে থাইরয়েড থেকে। কিন্তু, না, এটা আসলে ব্রেইনের পিটুইটারি নামক গ্রন্থি থেকে আসে। এটি আবার টি-থ্রি ও টি-ফোর নামক হরমোন তৈরি হয়, এই ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে—থাইরয়েড যেকোনো শরীরে বা যেকোনো অঙ্গে ক্যানসার বা নুডল হতে পারে ও ফুলে যেতে পারে। এই থাইরয়েড গ্রন্থি যখন ফুলে যায়, তখন এটাকে গলগণ্ড বা গয়টার বলা হয়। আবার ছোট ছোট গোটা বা টিউমার হতে পারে। এই টিউমার ক্যানসার বা নরমাল টিউমার হতে পারে। আরেক ধরনের রোগ হতে পারে, যেটাকে থাইরয়েড ইনফ্লাশন বলে। যেটা কোনো কারণে ফুলে গিয়ে ব্যথা হতে পারে।
কোন বয়সের ক্ষেত্রে থাইরয়েডের গ্রন্থির সমস্যা হতে পারে, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শামীম আল মামুন বলেন, ‘এটির কোনো বয়স সীমা নেই। এটা প্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সে এই রোগ হতে পারে। আজকে যে শিশু জন্ম নিয়েছে, তারও এই রোগ হতে পারে। নির্দিষ্ট করে যদি বলা হয়, তাহলে বলব—মধ্য বয়সে এই থাইরয়েডের সমস্যা হয়।’
টিনএজ বয়সে যদি কোনো নারীর থাইরয়েড সম্পর্কিত কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সেটি তার গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শামীম আল মামুন বলেন, ‘থাইরয়েড সম্পর্কিত প্রত্যেকটি রোগ গর্ভবতীদের হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগে থাইরয়েডের রোগ থাকতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় অব্যাহত থাকতে পারে। আবার গর্ভকালীন সময়ে এই রোগ হতে পারে।’
গর্ভবতী মায়েদের থাইরয়েডের রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ওপরের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এনটিভি হেলথ ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং জানুন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ।