জামরুলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
জামরুল আমাদের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ফল। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় এই ফল পাওয়া যায়। এটি মূলত দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব মালয়েশিয়ার ফল। তবে এটি বাংলাদেশ-ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় চাষাবাদ হয়।
পুষ্টি উপাদান
আমেরিকান এগ্রিকালচারাল ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, ১০০ গ্রাম জামরুলে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান থাকে—
পানি ৯৩.০০, প্রোটিন ০.৬, কার্বোহাইড্রেট ৫.৭, ডায়েটারি ফাইবার ১.৫, স্টার্চ ০.০, সুগার ০.০, চর্বি ০.৩, কোলেস্টেরল ০.৩ গ্রাম, ভিটামিন সি ১৫৬.০, ভিটামিন এ ২২.০, ভিটামিন বি১ ১০.০০, ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) ৫৭.০, ক্যালসিয়াম ২৯, আয়রন ০.১, ম্যাগনেসিয়াম ৫.০, ফসফরাস ৮.০, পটাশিয়াম ১২৩.০, সোডিয়াম ০.০, সালফার ১৩.০ মিলিগ্রাম।
উপকারিতা
১. ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় : জামরুলে ভিটামিন সি ও ফ্লাবিনয়েড থাকায় ক্যানসার ও হৃদরোগের ক্ষেত্রে কোষের ধ্বংসকে রোধ করে। জামরুলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের দূষিত পদার্থ দূর করে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : ভিটামিন সি দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষম শ্বেতকণিকা তৈরি করে। এটি ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে রক্ষা করে।
৩. ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় : জামরুলে থাকা নিয়াসিন কোলেস্টেরল তৈরিকে নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়াসিন রক্তে ভালো এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং খারাপ ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়।
৪. স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে : জামরুলে সোডিয়াম না থাকা এবং এইচডিএলের মাত্রা বেশি থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
৫. হজমশক্তি বাড়ায় : নিয়মিত জামরুল খেলে পাকস্থলীর হজমশক্তি বাড়ে এবং শর্করা, চর্বি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার সহজে হজম হয় এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ হয়।
৬. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : জামরুলে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার খাদ্য সংবহনতন্ত্রের সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৭. পেশির ব্যথা দূর করে : পটাশিয়াম থাকায় জামরুল পেশিকে শক্তিশালী করে এবং পেশির ব্যথা দূর করে।
৮. লিভারের রোগ সারায় : জামরুলে এক ধরনের হেপাটোপ্রটেক্টিভ উপাদান থাকে, যা অত্যন্ত সফলভাবে লিভার কোষ ধ্বংস থেকে রক্ষা করে।
৯. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : জামরুলে অ্যান্টিহাইপারগ্লিসেমিক উপাদান থাকে, যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
কাঁচা জামরুলের পাশাপাশি এটি জুস-আচার ও সালাদ হিসেবে জনপ্রিয়। তাই নিয়মিত জামরুল খান, সুস্থ থাকুন।
লেখক : অধ্যাপক, কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়