দুই ব্র্যান্ডের দুই ডোজ টিকা নেওয়া যাবে?
নভেল করোনাভাইরাস মহামারিতে নাকাল পুরো বিশ্ব। আমাদের দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। করোনাভাইরাস রুখতে তাই প্রয়োজন সচেতনতা এবং সরকার-নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি ও বিধিনিষেধ মেনে চলা এবং অবশ্যই করোনার টিকা গ্রহণ করা ও মাস্ক পরিধান করা।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিনের একটি পর্বে ভ্যাকসিনেশন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইলোরা শারমিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ডা. মুনা তাহসিন।
মহামারিকালের শুরু থেকেই আমরা সবাই প্যানিকড হয়ে আছি এবং ভয়-ভীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে আমাদের আশার আলো জুগিয়েছে ভ্যাকসিনেশন বা টিকাদান কর্মসূচি। বাংলাদেশ সরকার সাফল্যের সাথে এটি শুরু করেছে। এটি নিয়ে অনেক ধরনের কনফিউশন আছে যে যাঁরা প্রথম ডোজটি নিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজটি নিতে পারছেন না কিংবা কোনও না কোনও সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন কোনও ব্র্যান্ডের সেকেন্ড ডোজ কেউ গ্রহণ করতে পারবেন কি না, আপনার কি মতামত এ বিষয়ে? উত্তরে ডা. ইলোরা শারমিন বলেন, এখানে দেখা গেছে যে একটা ভ্যাকসিন যদি সে ফার্স্ট ডোজ কোনও একটা ব্র্যান্ডের নিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে অন্য ব্র্যান্ডেরটা সে নিতে পারবে কি না। এ জিনিসটাকে বলে হেটারোলোগাস বুস্ট ভ্যাকসিনেশন। যেখানে বলা হচ্ছে, সাধারণত যে ভ্যাকসিনটা সে ফার্স্ট ডোজ নিয়েছে, সেটাই সেকেন্ড ডোজ নেওয়া ভালো। সে ক্ষেত্রে দরকার হলে অপেক্ষা করা যেতে পারে সেকেন্ড ডোজের জন্য। যদি কোনও কারণে সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে যদি আমরা সেকেন্ড ডোজ নিতে চাই অন্য কোনও ব্র্যান্ড, সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে অন্য কোনও স্টাডি... যেটাতে সেকেন্ড ডোজ অন্য কোনও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এর আগেও অনেকগুলো ডিজিজের ক্ষেত্রে হয়েছে যে হেটারোলোগাস বুস্ট ভ্যাকসিনেশন যেটা, সেটা ইবোলাতে, এইচআইভিতেও ট্রাই করা হয়েছিল এবং জার্মানি ও ফ্রান্সে দেখা গেছে যে একটা গ্রুপকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফার্স্ট ডোজ দেওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে সেকেন্ড ডোজ কাউকে কাউকে ফাইজার দেওয়া হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে যাঁদের বয়স পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে, তাঁদের চেয়ে যাঁরা ইয়াং জেনারেশন, তাঁদের মধ্যে দেখা গেল ভ্যাকসিন-রিলেটেড যে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বা রক্ত জমাট বাঁধা, এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটা তাঁদের মধ্যে বেশি দেখা গেল। তখন এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বলা হচ্ছে যে যদি কেউ ফার্স্ট ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা নেয়, সেকেন্ড ডোজ ফাইজার নেয়, তাহলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পরিমাণটা বেড়ে যায় চার গুণ। আর ফার্স্ট ডোজ যদি ফাইজার নেয়, সেকেন্ড ডোজ যদি অ্যাস্ট্রাজেনেকা নেয়, সে ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পরিমাণটা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। কিন্তু সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সাধারণত স্থায়ী থাকে। এর পরে এটা আস্তে আস্তে চলে যায়। তো যেহেতু এ ধরনের কোনও স্টাডি বা এ ধরনের কিছু কমপ্লিট হয়নি, সে ক্ষেত্রে বলব যে ফার্স্ট ডোজ যেটা নেওয়া হয়, সেকেন্ড ডোজ সরকারিভাবে নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সেকেন্ড ডোজ আগেরটাই নেওয়া উচিত বা ভালো হবে এবং সরকারি নির্দেশ বা ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন বা যারা এগুলো নিয়ে কাজ করছে, তারা যদি বলে নেওয়া যাবে, তাহলে তখন সেটা নেওয়া যেতে পারে।