বয়সের ছাপ কখন শুরু হয়?
বার্ধক্য হলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। বয়স বাড়তে থাকলে বয়সের ছাপ চেহারায় পড়তে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া পরিবেশগত কারণেও বয়সের ছাপ পড়ে।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে বয়সের ছাপ কত বয়সের পর শুরু হয় প্রসঙ্গে কথা বলেছেন ল্যাব এইড হাসপাতালে ডার্মাটোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. ইসরাত জাহান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ডা. সামিউল আউয়াল সাক্ষর।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে নানা ধরনের পরিবর্তন হয় এবং সেটি আসলে কী নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে শুরু হয়? সাধারণত পুরুষ এবং নারী উভয়ের ক্ষেত্রে বয়সের ছাপ কত বয়সের পর থেকে শুরু হয়ে থাকে, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ইসরাত জাহান বলেন, বার্ধক্য হলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। বার্ধক্য বলতে আমরা বুঝি—বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সাইকোলজিক্যাল ও ফিজিওলজিক্যাল পরিবর্তন হয়, সেগুলোকে আসলে বার্ধক্য বলে।
ফিজিওলজিক্যাল পরিবর্তন অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত বা বাইরের পরিবর্তনের কারণে হতে পারে। অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন বলতে আমরা দেহের বিভিন্ন পরিবর্তনকে বুঝি। কিন্তু বহিরাগত বা বাইরের পরিবর্তন আমরা আয়নার সামনে গেলে বুঝতে পারি।
অভ্যন্তরীণ এর ধারণা হচ্ছে বয়স ধরে রাখতে পারব না, এটি চলেই যাবে। তবে বয়সের ছাপটাকে আগে থেকে কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু একেবারে বয়সের ছাপ ধরে রাখা যায় না। তবে কারও ৪০ বছর থাকলে, সেটা ৩০ বছরে নামিয়ে আনা যায়। এ রকমভাবে বয়সের ছাপ কমিয়ে আনাটা হচ্ছে- অবক্ষয়মূলক চিকিৎসা (ডিজেনারেটিভ ট্রিটমেন্ট)।
ডিজেনারেটিভ ট্রিটমেন্ট সম্পূর্ণ সঠিক জীবনযাপনের ওপর নির্ভর করে। একজন মানুষ প্রথম থেকে তার খাদ্যাভাস ও জীবন যাপন সম্পূর্ণভাবে প্রতিপালন করলে তার বার্ধক্যের রেখা বা চিহ্ন দেরিতে আসে।
সেক্ষেত্রে আসলে কত বছরের পর থেকে বয়সের ছাপটা ধরা পড়ে, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ইসরাত জাহান বলেন, বয়সের ছাপটা আসলে কত বছর বয়সে ধরা পড়বে সেটা বলা দুরূহ ব্যাপার। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, খুব চাপযুক্ত জীবন যাপন করে। তাদের খাবারে অনিয়ম, রাতে পরিপূর্ণ ঘুম হয় না। তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০ বছরের পর বয়সের ছাপ চলে আসে। আবার অনেকের জেনেটিক কারণে বার্ধক্যের ছাপটা চলে আসে। আবার অনেককেই দেখা যায়, ৪০ বছর হলেও ২০ বছরের মতো লাগে। তাই কত বছর থেকে বার্ধক্যের ছাপটা আসে, সেটা আসলে সংজ্ঞায়িত করার কোনো বয়স নেই। তবে ৪০ বছরের পর সবার মধ্যে একটি বার্ধক্যের ছাপ আসে।
ত্বকে বয়সের ছাপ কীভাবে ধরা পড়ে, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ইসরাত জাহান বলেন, প্রথমে ত্বকে হালকা হালকা বলিরেখা দেখা যায়। এই হালকা বলিরেখা মুখের বিভিন্ন জায়গায় আসতে পারে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে—যে জায়গায় বুঝা যায়, সেটি হচ্ছে লাইফ লাইন, যেখানে ৩০ বছরের পর একটি বলিরেখা আসে এবং এটি চোখের পাশে ও কপালে আসে। এই বলিরেখাগুলো ৩০ থেকে ৪০ বছরের পর সবার ক্ষেত্রে আসে। সেক্ষেত্রে কেউ তার জীবন যাপন সম্পূর্ণভাবে প্রতিপালন করলে, তার বার্ধক্যের ছাপ দেরিতে আসে। আবার কারও জীবন যাপন খারাপ হয়ে থাকলে, তার ২০ বছর কিংবা ৩০ বছরের মধ্যে বার্ধক্যের ছাপ চলে আসে।
সেক্ষেত্রে ত্বকের যত্নে ভালো ফেসওয়াস ব্যবহার করতে হবে। ত্বককে সঠিকভাবে পরিষ্কার করতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে ত্বক পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণে রাতে আমাদের ত্বকের পুনর্জন্ম হয়। ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন অর্থাৎ যেটা ত্বকের বিল্ডিং ব্লক সেটা রাতে উৎপাদন হয়। তাই সেক্ষেত্রে রাতে ত্বক পরিষ্কার রাখা, রাতে ময়েশ্চারাইজার লাগান বা স্থাপন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. ইসরাত জাহান বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় এসেছে, যারা ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রে বার্ধক্যের ছাপ অনেক দেরিতে আসে। রাতে সেরাম ব্যবহার করা এবং ময়েশ্চারাইজার যেটা ব্যবহার করবে, সেটাতে অবশ্যই রেটিনল ও ভিটামিন সি- এর কম্বিনেশন থাকতে হবে। তাই ত্বকের বাইরের যত্নের পাশাপাশি ভেতরের যে যত্ন নিতে হবে। তাই খাবারের মধ্যে ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এন্টি অক্সিডেন্ট খাবারগুলো বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট শরীর চর্চা করতে হবে। তাই এই জিনিসগুলা বজায় রেখে জীবন যাপন করলে বার্ধক্যের চিহ্নগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং ত্বকের বলিরেখা অনেক দেরিতে আসে।
কাদের ক্ষেত্রে বয়সের ছাপ আগে আসবে এবং কাদের ক্ষেত্রে বয়সের ছাপ পড়ে আসবে, এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উপরের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এনটিভি হেলথ ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং জানুন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ।