রঙিন নয়, ইফতারে রাখুন মৌসুমি ফলের শরবত
রমজান রহমত, বরকত ও ফজিলতের মাস। প্রতি বছর সারা বিশ্বের মুসলমানেরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে এই রমজান মাসে বিরত থাকে। তেমনই আমাদের দেশে এই গ্রীষ্মকালে ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকার পর আমাদের রোজাদারেরা বিভিন্ন রকম খাবার ও পানীয় দিয়ে তাদের রোজা ভাঙে। সাথে নানারকম ইফতারি তারা গ্রহণ করে থাকে।
এনটিভির নিয়মিত এক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে ইফতারে ফলের শরবত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ ছাঈদা লিয়াকত। তিনি আরও বলেন, রোজার এই সময়টিতে অবশ্যই পুষ্টিকর সকল খাবারের প্রতি আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির পুষ্টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে তরল পানিজাতীয় খাবার শরীরের ওপর অনেক প্রভাব ফেলে। যদি এ সময় পর্যাপ্ত পানি বা তরলজাতীয় খাবার না খাওয়া হয়, তাহলে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেবে।
পুষ্টিবিদ ছাঈদা লিয়াকত বলেন, ইফতারিতে এ সময় আমরা বিভিন্ন রকম পানীয় গ্রহণ করে থাকি। বিশেষ করে বিভিন্ন রকম ফলের শরবত। মৌসুম অনুযায়ী যে ফলগুলো পাওয়া যায়, সে সকল ফলের শরবত, ইসপগুল ও তকমার শরবত আমরা খেয়ে থাকি। খেয়ে থাকি বেলের শরবত। এমনকি আখের গুড়ের শরবতও এ সময় আমরা খেয়ে থাকি। বিভিন্ন রকম পানীয় দিয়ে আমরা আমাদের শরীরে যে তরলের চাহিদা রয়েছে, তা পূরণ করার চেষ্টা করি। শুধু শরবতই নয়, বিভিন্ন রকম দুধ এবং দুধের তৈরি লাচ্ছি, মিল্কশেক, বিভিন্ন কিছু দিয়ে আমরা আমাদের তরলের চাহিদা পূরণ করে থাকি। তবে একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষণীয়, আমরা যে বিভিন্ন রকম ফলের রস খেয়ে থাকি, এ ক্ষেত্রে যাঁরা ওজনাধিক্যে ভুগছেন, তাঁরা অবশ্য চিনি মেশাবেন না। চিনি যদি খেতেই হয়, আমি বলব, চিনির পরিবর্তে তাঁরা আখের গুড় খেতে পারেন। অথবা মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। আর যে সকল রোজাদার, যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁরা ফলের রসে চিনি মেশাবেন না। এবং ইসপগুলের শরবত, তকমার শরবত; এ শরবতগুলো কিন্তু হৃদরোগীর জন্য অনেক উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী। এবং যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন, তাঁরা কিন্তু এই শরবতগুলো রোজার সময় খেতে পারেন। কারণ, রোজার সময় ইসপগুল ও তকমার শরবত আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচাবে।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, রোজার সময় অনেকে কী করেন, ইফতারিতে বিভিন্ন ধরনের রঙিন পানীয় বা ফলের শরবত, প্যাকেটজাত জুস ব্যবহার করে থাকেন। এ বিষয়গুলো আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। এগুলো আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। শুধু তরলজাতীয় খাবারে, শুধু শরবত বা ফলের রসে নয়, অথবা অন্য কোনো চিনিমিশ্রিত শরবতই নয়, আমরা আরও খেতে পারি। বিভিন্ন রকমের স্যুপ দিয়েও আমরা তরলের চাহিদা পূরণ করতে পারি। সেটা সবজি হতে পারে, বিভিন্ন রকমের সবজি; আবার হতে পারে মাশরুম দিয়েও বিভিন্ন ধরনের স্যুপ তৈরি করে তরলের চাহিদা পূরণ করতে পারি। তবে পানি এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যদি এ সময় আমরা পর্যাপ্ত পানি না খাই, তাহলে দেখা যাবে যে আমাদের বিভিন্ন রকম শোষণের সমস্যা হচ্ছে। আমাদের পুষ্টি উপাদানের শোষণের সমস্যা হচ্ছে। আমাদের বিপাকের সমস্যা হচ্ছে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেবে। তবে পানির পরিমাণটা আমাদের খেয়াল করতে হবে যে আমরা ইফতারের পর থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত পানিটা যদি পর্যায়ক্রমে খেয়ে থাকি তাহলে কিন্তু এটা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার হবে। এ বিষয়টি খেয়াল রেখে অবশ্যই ইফতারের সময় থেকে শুরু করে আমরা যদি সেহরি পর্যন্ত দুই থেকে তিন লিটার পানি গ্রহণ করি, তাহলে কিন্তু আমাদের পানির চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ হয়ে যাবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, রঙিন পানীয়, রঙিন জুস, কার্বোহাইড্রেট ওয়াটার, আমরা যে বিভিন্ন রকম কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে থাকি, তা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।
পুষ্টিবিদ ছাঈদা লিয়াকত আরও বলেন, কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ফলের রস খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে এবং কিডনিবান্ধব যে ফলগুলো, তা দিয়ে যেন কিডনি রোগীরা ফলের রস তৈরি করে খান, সেদিকে আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কাজেই তরলের চাহিদা মেটাতে আমরা যদি তরল পানীয়সহ দুধজাতীয় খাবার, বিশেষ করে দুধ আমরা যদি খাই, তাহলে দেখা যাবে যে পানিসহ এসব তরল খাবার দিয়ে আমরা আমাদের চাহিদা মিটিয়ে এই রোজার সময় সুস্থ থাকতে পারব।