মস্তিষ্কের টিউমারের চিকিৎসা কী?

মস্তিষ্কের টিউমারের ভালো চিকিৎসা এখন এ দেশে হচ্ছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬০২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. জিল্লুর রহমান। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : মস্তিষ্কের টিউমার আছে নিশ্চিত হওয়ার পর আপনাদের পদক্ষেপ কী থাকে?
উত্তর : মস্তিষ্কের টিউমারের মধ্যে কতগুলো আছে বিনাইন টিউমার। এটা ভালো ধরনের মস্তিষ্কের টিউমার। কম ক্ষতিকর। আরেকটি হলো ম্যালিগনেন্ট টিউমার। এগুলো বেশ ক্ষতিকর। বিনাইন টিউমারগুলোর সুবিধা হলো যদি আমি অস্ত্রোপচার করতে পারি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে যদি ধরা পড়ে, তাহলে ১০০ ভাগ নিরাময় হয়ে যায়। আর ম্যালিগনেন্ট টিউমার যদি হয়, তখন অস্ত্রোপচার করে যতটুকু বের করা সম্ভব করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ের জন্য বায়োপসি করি। এটি করলে ম্যালিগনেন্সির গ্রেডিং বা পর্যায় বোঝা যায়। পর্যায় অনুযায়ী তখন আমরা রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি দিই। এর পর পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু করতে হয়।
প্রশ্ন : যখন নিশ্চিত হন যে বিনাইন টিউমার হয়েছে, এর পর রোগীকে কীভাবে চিকিৎসা দেন এবং তাকে আশ্বস্ত করতে কী করেন? কেননা, মস্তিষ্কের টিউমার হয়েছে শুনলে অনেকে ভেঙে পড়েন।
উত্তর : আসলে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আসলে মস্তিষ্কের টিউমার ধরা পড়লে রোগী নিজে এবং পাশাপাশি তার আত্মীয়স্বজন খুব ভয় পায়।
মেয়েদের মেনিনজিওমা বলে একটি টিউমার হয়, ছেলেদেরও হতে পারে, তবে মেয়েদের বেশি হতে পারে—এ ধরনের টিউমার হলে সাধারণত মস্তিষ্কের ক্ষতি খুব বেশি হয় না। এই টিউমার যদি আমরা অস্ত্রোপচার করি দেখা যায় ১০০ ভাগ ঠিক হয়।
সুখের কথা হলো, এই সব মস্তিষ্কের টিউমারই কিন্তু খারাপ নয়। বিনাইন টিউমার অস্ত্রোপচার করলে ১০০ ভাগ ঠিক হয়। আমাদের দেশে এটা করা সম্ভব। আমরা সব নিউরোসার্জন এটা করছি। এর জন্য ভয় না পেয়ে ছোটাছুটি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন : অস্ত্রোপচারের পরে আপনাদের কী পরামর্শ থাকে?
উত্তর : বিনাইন টিউমার হওয়ার তিন মাস পর পর আমরা সাধারণত রোগীকে ফলোআপ করি। সাধারণত এই সব টিউমার অস্ত্রোপচার করার পর খিঁচুনি রোগ হয়। আমরা বলি কনভালশন। ওই জন্যই সাধারণত অ্যান্টিকনভালশন দেওয়া হয়। এটি দিয়ে আমরা রোগীর ফলোআপ করি। তারপর যখন প্রতি তিন মাস পর ফলোআপে আসে একটি এমআরআই বা সিটিস্ক্যান করে দেখতে হয় যে পুনরায় হলো কি না। অনেক সময় দেখা যায়, বিনাইন টিউমার অস্ত্রোপচার করার পরেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার হতে পারে। সেই জন্য যদি বছরে একবার ফলোআপ করা যায়, তাহলে আমরা আগেভাগে বিষয়টি ধরতে পারি। সেটিও তখন নিরাময় করা সম্ভব। আর দেরি হয়ে গেলে দেখা যায় অনেক বড় হয়ে গেল, তখন জটিলতা বেড়ে যায়। সে জন্য ফলোআপে থাকতে হবে।
প্রশ্ন : ফলোআপ কত দিন পর্যন্ত করতে হয়?
উত্তর : প্রথম অবস্থায় আমরা প্রতি তিন মাস পর্যন্ত ফলোআপ করি। এরপর দ্বিতীয় বছর আমরা সাধারণত ছয় মাস পরে বলি। তৃতীয় বছর থেকে আমরা বছরে একবার অন্তত ফলোআপ করতে বলি।
প্রশ্ন : ম্যালিগনেন্ট টিউমারের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেন?
উত্তর : ম্যালিগনেন্ট টিউমারের আবার অনেক ধরন রয়েছে। গ্রেড ওয়ান (পর্যায়-১) থেকে গ্রেড ফোর (পর্যায়-৪) পর্যন্ত হয়। সাধারণত গ্রেড ওয়ানগুলো ভালো। বিনাইনের কাছাকাছি হয়। আর গ্রেড ফোর হলো সবচেয়ে খারাপ। গ্রেড ওয়ান টিউমার অস্ত্রোপচার করার পর আমরা ফলোআপ করি। ফলোআপ করলে দেখা যায় রোগীর সমস্যাটি অনেকটা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু গ্রেড টু (পর্যায়-২) বা এরপরে যদি হয়, তাহলে দেখা যায় উন্নতির হার তেমন ভালো নয়। সাধারণত গ্রেড ওয়ানের ওপরে হলে আমরা রেডিও বা কেমোথেরাপি চিকিৎসা দিই। চিকিৎসা দিলে দেখা যায় রোগী কিছুদিন ভালো থাকেন। গ্রেড ফোর হয়ে গেলে আসলে কিছু করার থাকে না। দেখা যায়, এগুলো সাধারণত অস্ত্রোপচার করার পরেও রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি দিলেও এগুলোর উন্নতি তেমন হয় না। সারা বিশ্বেই বিষয়টি প্রায় একই রকম।