তরুণদের হার্ট অ্যাটাক বাড়ছে কেন?
বর্তমানে কেবল প্রবীণদের নয়, তরুণদেরও হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ হতে দেখা যায়। এর কারণ কী। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬৪৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. এম এ বাকী। বর্তমানে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আগে দেখা যেত হার্ট অ্যাটাক প্রবীণদের হতো। এখন কি তরুণদের ক্ষেত্রেও পাচ্ছেন?
উত্তর : আগে হয়তো বেশি বয়সে সমস্যা হতো। আমরা যখন চিকিৎসা শাস্ত্রের পড়েছি, আমাদের বইয়ে লেখা ছিল হার্টের রক্তনালির রোগগুলো পঞ্চাশ দশকের রোগ। তবে এখন বিভিন্ন পরিবেশগত কারণে, খাদ্যাভ্যাসের কারণে, অত্যধিক পরিশ্রমে এটি হয়।
করনারি আর্টারি ডিজিস বা ইসকেমিক টার্ম ডিজিস অনেকের কাছে পরিচিত। এই রোগগুলো কিন্তু একদিনে হয় না। এবং এই রোগগুলোর পেছনে যে কারণগুলো আছে, একে আমরা করনারি আর্টারি ডিজিসের ঝুঁকি বলি। এই ঝুঁকির পেছনে কিন্তু প্রেসার, ডায়াবেটিস, ধূমপান, কোলেস্টেরল, জেনেটিক কিছু কারণ এবং যখন কোলেস্টেরলের প্রশ্ন আসবে তখন সেডেন্টারি জীবনযাপন, দৈহিক কাজকর্ম কম, হাঁটাচলা কম, ওজন- এই বিষয়গুলো খুব বেশি জড়িত হার্টের রক্তনালি ব্লকের পেছনে। এখন আপনি চিন্তা করেন আমাদের সভ্যতা, শিল্পায়ন, সমৃদ্ধি এসবের সবকিছুরই কিছু অভিশাপ আছে। শহরের যে আধুনিক জীবন-যাপন সেটা হৃদবান্ধব নয়।
সে জন্য আপনি খেয়াল করে দেখেন নগরায়নের জন্য শারীরিক কার্যক্রম পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আগে যেমন স্কুলে যেতে হলে একজন ছাত্রকে অন্তত এক মাইল হেঁটে যেতে হতো। এখন তো হাঁটার সুযোগ নেই। গাড়িতে চড়ে যাচ্ছে। এখন পাড়া-মহল্লায় সে রকম মাঠ নেই। নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন কারণে সন্তানদের আমরা সেভাবে মাঠে দিচ্ছি না। সেভাবে কোনো পার্ক নেই যে আপনি বিকেলে গিয়ে খেলাধুলা করবেন। সুতরাং ছোটবেলা থেকে শারীরিক কার্যক্রম কিন্তু অনেক কমে যাচ্ছে। বাচ্চারা তাদের অবসর সময় মাঠে ব্যবহার হতো সেটা এখন হচ্ছে না। কিন্তু এই যে মাঠে ঘাটে ঘোরাঘুরি, রাস্তায় হাঁটাহাঁটি এগুলোর শারীরিক কিছু উপকারিতা ছিল। শিশুরা কিন্তু এগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর কিন্তু স্বাস্থ্যগত উপকার আছে। এখন কিন্তু খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের প্রভাব শিশুর ওপর গিয়ে পড়ছে, কিশোরের ওপর গিয়ে পড়ছে। শেষ পর্যন্ত যুবকের ওপর গিয়ে পড়ছে। আগে যেমন শাকসবজি, মাছ এর ওপর একটি চাপ ছিল, এখন রান্না করার সময়ের অভাবে হয়তো কম খাওয়া হচ্ছে। সহজ লভ্য খাবারগুলো খাওয়া হয়। মুরগি বা গরুর মাংসের ওপরে আমরা বেশি বেশি ঝুঁকে যাচ্ছি। এমনকি বাইরের ফাস্টফুডের দিকেও আমাদের ঝোঁক বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের বাচ্চাদের আমরা ছুটির দিনে বলি চলো বাইরে খাই। এতে আমরা এমনিতেই ফাস্টফুডের দিকে ঝুঁকে পড়ছি।
এই খাদ্যাভ্যাসগুলোতে কিন্তু ধীরে ধীরে হার্টের রক্তনালিতে ব্লক হওয়ার যে উপাদানগুলো, কোলেস্টেরল উচ্চ পরিমাণ হওয়ার, শারীরিক ব্যায়াম কমে যাওয়া- এগুলোর যে আধিক্য শরীরের ওপর পড়ছে, ধীরে ধীরে ব্লকের যে একটি উদ্দীপক সেটা কিন্তু ছোটবেলা থেকে শুরু হচ্ছে। পরে দেখা যাচ্ছে ২৫-৩০ বছর বয়সে সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় ত্রিশের নিচে হার্ট অ্যাটাকের রোগী পাচ্ছি। যেটি আগে থাকত না। এত অল্প বয়সে আমরা পেতাম না।