উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খেজুর
প্রায় ৬০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে খেজুরের চাষ শুরু হয়েছে। খেজুর সুমিষ্ট ফলের মধ্যে অন্যতম। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একটি খেজুর গ্রহণ স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যের জন্য প্রয়োজন। এক কিলোগ্রাম খেজুর থেকে প্রায় ৩০০০ ক্যালরি পাওয়া যায়; যা আমাদের দৈনিক ক্যালরি চাহিদা পূরণে যথেষ্ট। খেজুরে উচ্চমাত্রায় প্রাকৃতিক চিনি, যথা- গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ পাওয়া যায়। তাই শক্তি আকস্মিকভাবে কমে গেলে সেটা দ্রুত পূরণে খেজুরের জুড়ি নেই। খেজুরের মাধ্যমে রোজা ইফতার করলে ইফতারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের বাজে অভ্যাস ত্যাগ করা সহজ হয়। কারণ দেহ যখন খেজুরের উচ্চমানের পুষ্টি উপাদান শোষণ করা শুরু করে, তখন ক্ষুধার ভাব দ্রুত প্রশমিত হয়। খেজুরে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম আছে, যা অর্ধবেলা উপোস থাকার পর আমাদের স্নায়ুর পদ্ধতিকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
বাজারে বিভিন্ন প্রকার খেজুর পাওয়া যায়। খেজুর শুকনো অথবা তাজা ফল হিসেবে গ্রহণ করা হয়। যেভাবেই গ্রহণ করা হোক না কেন, এর উপকারিতার কোনো তারতম্য হয় না। দুধ, দই, পাউরুটি, মাখনের সঙ্গে খেজুরের পেস্ট মিশিয়ে গ্রহণ করা যায় যা প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু উভয়ের জন্য উপকারী। অসুস্থতা হতে আরোগ্য লাভের সময় অথবা যে কোনো ক্ষত সারাতে এই পেস্ট বিশেষভাবে কাজ করে।
খেজুর আশ, পটাসিয়াম ও কপারসমৃদ্ধ ফল। এই ফলটি যদিও গুরুত্বপূর্ণ সব পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ, তবু এর ক্ষুদ্রাকৃতির জন্য যথাযথ পুষ্টিলাভে বেশি খেজুর গ্রহণ করা প্রয়োজন। ১০০ গ্রাম খেজুর থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদানগুলো হলো :
খাদ্য আঁশ - ৬.৭ গ্রাম
পটাশিয়াম - ৬৯৬ মিলিগ্রাম
কপার - ০.৪ মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ - ০.৩ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম - ৫৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬ - ০.২ মিলিগ্রাম
চিনি - ৬৬.৫ গ্রাম।
আমাদের দেহের সুস্থতা রক্ষার জন্য এই পুষ্টি উপাদানগুলো বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে। খেজুর থেকে প্রাপ্ত অদ্রবণীয় ও দ্রবণীয় আঁশ আমাদের পরিপাকতন্ত্র ও মলাশয়ের সুস্থতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন। মলাশয়কে সর্বোচ্চ মাত্রায় কাজ করতে এই আঁশ সাহায্য করে। মলাশয়ের ক্যানসার, কোলাইটিস ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে খাদ্য আঁশ বিশেষ উপকারী। খেজুর থেকে প্রাপ্ত আঁশ হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষাও করে।
খেজুরকে লাক্সাটিভ হিসেবে গণ্য করা হয়। খেজুরকে রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে সিরাপ হিসেবে গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের বিরুদ্ধে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
খেজুর খনিজ উপাদানসমৃদ্ধ ফল। ম্যাগনেসিয়ামের অ্যান্টিইনফ্লাম্যাটরি ভূমিকার জন্য এটি ধমনিগাত্রের প্রদাহ রোধ করতে সক্ষম। তাই নিয়মিত খেজুর গ্রহণে হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস ও আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও খেজুর উপকারী।
ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও খেজুর হতে প্রাপ্ত সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও কপার হাড়ের যথাযথ বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই খনিজ উপাদানগুলো হাড়কে মজবুত করে অস্টিওপোরোসিসকে প্রতিরোধ করে। বয়স্ক ব্যক্তিদের দুর্বল, ভঙ্গুর হাড়ের সুরক্ষায় খেজুর বিশেষভাবে উপকারী।
খেজুরে বিদ্যমান লৌহের জন্য একে রক্তাল্পতার বিরুদ্ধে পরিপূরক খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। খেজুর জন্মগত লৌহের ঘাটতি পূরণ করে রক্তাল্পতা দূর করে।
খেজুরের জৈব সালফার নানা রকম অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া দূর করে।
গর্ভকালীন শেষ চার সপ্তাহ খেজুর নিয়মিত গ্রহণ করা হলে প্রসব বেদনা হ্রাস পায় ও ঝুঁকিমুক্ত প্রসব সম্ভব হয়। বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণেও খেজুরের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
দৈনিক একটি খেজুর গ্রহণে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। রাতকানার বিরুদ্ধে খেজুর খুব উপকারী একটি ফল।
সৈয়দা তাবাসসুম আজিজ : সহকারী অধ্যাপক, খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ।