কীভাবে বুঝবেন জরায়ুতে ক্যানসার?
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/08/10/photo-1439188309.jpg)
জরায়ুমুখের ক্যানসার বেশ প্রচলিত একটি সমস্যা এখনকার সময়ে। তবে কিছু ব্যবস্থা নিলে আগে থেকে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আজ ১০ আগস্ট এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১১৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার পারুল জাহান।
প্রশ্ন : নারীর জরায়ুর মুখের ক্যানসার কী এবং এর পেছনের কারণগুলো কী?
উত্তর : এই ক্যানসার জরায়ু মুখেই প্রথম শুরু হয়। এর প্রধান কারণ হলো ভাইরাস। এসপিভি ভাইরাস বা হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস বলে একটি ভাইরাস আছে যেটা প্রায় ৯৯ শতাংশেই পজিটিভ হিসেবে কাজ করে। তা ছাড়া ঝুঁকির কারণ তো অবশ্যই আছে। যাদের অল্প বয়সে বিয়ে হয় অথবা যাদের অসংখ্য যৌন সঙ্গী থাকে অথবা ঘন ঘন যাদের বাচ্চা হয়- মোট কথা যারা একদম কম বয়সে যাদের যৌন সম্পর্ক হয়, তাদের এই ঝুঁকি অনেক বেশি। এরপরও সব ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হলো ভাইরাস।
প্রশ্ন : এই রোগে কোন কোন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়?
উত্তর : যখন ক্যানসার হয়ে যায়, তখন কিছু লক্ষণ আসে। প্রথম দিকে জরায়ু মুখ থেকে ডিসচার্জ বেড়ে যায়। গন্ধযুক্ত ডিসচার্জও হতে পারে। হঠাৎ হঠাৎ রক্তপাত হতে পারে। এমনকি স্বামীর সঙ্গে মেলামেশার পর একটু রক্তপাত হতে পারে। প্রথম রোগীরা এই ধরনের লক্ষণ নিয়ে আসে। অনেকে অভিযোগ করে ডিসচার্জ সাদা চুনের পানির মতো যাচ্ছে। প্রত্যেকের উচিত জরায়ুমুখ পরীক্ষা করা।
প্রশ্ন : আমরা কিন্তু দেখি বেশির ভাগ সময় রোগ বেশি হয়ে গেলে রোগী আসে। সেটি রোধ করার জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে? কেন না প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগ ভালো করা সম্ভব।
উত্তর : এ রকম লক্ষণ নিয়ে যখন আসে, তখন রোগটি অনেকটা হয়ে যায়। তার আগের পর্যায়টিতে লক্ষণ কম থাকে। সেটা ধরা পড়ে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে। সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুরক্ষার জন্য দুটো বিষয় রয়েছে। যেটা ভাইরাস দিয়ে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নিতে পারি। পাশাপাশি যারা ঝুঁকিতে আছে, যেমন- বয়োসন্ধি মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে, অনেক যৌনসঙ্গী থাকার বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে হবে।
প্রশ্ন : স্ক্রিনিংটা আসলে কখন করা দরকার?
উত্তর : আজকাল ভ্যাকসিনটা ১১ বছর থেকেই দেওয়া যায়, যখন মেয়েটা কিশোরী হবে, তখনই তাকে ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি তাকে যৌনসচেতন করতে হবে। এটা তো প্রাথমিক প্রোটেকশন। দ্বিতীয় সুরক্ষা তাকে কীভাবে দেব? তখন তাকে নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। বিশেষ করে ৩৫ হয়ে গেলে আমরা অন্তত তাকে জরায়ুর মুখ থেকে একটা রস নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে বলি। সেটাকে পেপটিক্স বলি। যদি কোনো সমস্যা নাও থাকে, এই বয়সটায় আসলে প্রতিটি নারীর উচিত হবে চেকআপ করার। ওই খানে যদি সন্দেহজনক কিছু থাকে তবে বায়োপসি করে বা অন্যান্য পরীক্ষা করে রোগটা নির্ণয় করতে হবে। রোগটি যদি ধরা পড়ে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে চলে যেতে হবে। আগে রোগ নির্ণয় করতে পারলে ভালো। কিন্তু যদি রোগটা ছড়িয়ে যায়, তখন চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে। যদি এক বা দুই এই পর্যায়ে আসে, তখন সার্জারি দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। সার্জারি করে ক্যানসার যেখানে হলো জায়গাটা ফেলে দেওয়া যায়। পাশাপাশি যেটা দূরে হলো সেখানে রেডিওথেরাপি করা হয়ে থাকে। কিন্তু যদি তিন বা চার পর্যায়ে আসে তখন অনেক কিছু করার থাকে না। তখন রেডিওথেরাপি দেওয়া যায়। কেমোথেরাপি দেওয়া যায়।
কেমোরেডিয়েশন একসঙ্গে করা যায়। কিন্তু যত দেরি হবে, তত ফলাফল খারাপ হবে।
এখন আমরা রোগীদের বলি আপনার মেয়ের যদি ১১ বছর হয়ে যায় তাহলে ভ্যাকসিন দিয়ে দেবেন। যদিও ভ্যাকসিন নেওয়া একটু ব্যয়বহুল। তবে আমরা আশা করছি সরকার একে কম খরচের আওতায় আনতে পারবে। তিনটা ভ্যাকসিন দিতে হয়। প্রথম একটা, এক মাস পরে একটা , ছয় মাস পরে একটা।
প্রশ্ন : এই রোগে কারা বেশি ঝুঁকিপ্রবণ?
উত্তর : এই ভাইরাসে অনেকে আক্রান্ত হলেও যাদের শরীর থেকে এটা চলে যাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু যাদের শরীরে থেকে যাবে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রশ্ন : সেটি বোঝার কী উপায়?
উত্তর : সেটি বোঝার এমনিতে কোনো উপায় নেই। তবে পেপটিক টেস্টে যখন কোনো ধরনের অস্বাভাবিক কিছু আসে তখন এসপিভি ডিএনএ টেস্ট করতে বলি। যদি দেখা যায় সেটা থাকে তবে চিকিৎসা করে যেতে হবে।
প্রশ্ন : মেয়ের মায়েদের ক্ষেত্রে কিংবা মায়েদের ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী হবে এত জটিল রোগ থেকে রক্ষার?
উত্তর : এটা নিয়ে আসলে খুব পরামর্শ দিতে হয় না। কারণ ক্যানসারকে সবাই ভয় পায়। হয়তো ব্যয়বহুল বলে দরিদ্র লোকজন এর সুবিধা নিতে পারে না। তবে আমরা কাছে যেসব রোগীরা আসে তাদের যদি দিতে বলি, অনেক সময় দেখা যায় মা এবং মেয়ে একসঙ্গে দিচ্ছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে এই ক্যানসারের অবস্থাটা এখন কী?
উত্তর : আগে কিন্তু এত সচেতনতা ছিল না। এত ভ্যাকসিনও ছিল না। আগে একধরনের ভ্যাকসিন ছিল। এখন দুটো ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে সার্ভারিক্স এবং গার্ডাসিল। আগে ভ্যাকসিন ছিল না বলে দেওয়া যেত না। এখন বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানার পর, চিকিৎসকের মাধ্যমে জানার পর রোগীরা নিজেরাই সচেতন হয় এই বিষয়ে। সবচেয়ে আশার কথা হলো, রোগীরা নিজেরা এসে বলে আমরা এই টিকা নেব। তারা এই বিষয়ে বেশ সচেতন এখন।