হেপাটাইটিস ‘বি’র আধুনিক চিকিৎসা কী?
হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস লিভারকে আক্রান্ত করে। বর্তমানে এর বেশ আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৭৩তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ফাওয়াজ হোসেইন শুভ। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : হেপাটাইটিস বি ও সি কী?
উত্তর : লিভারের বেশ কিছু রোগ রয়েছে। এর মধ্যে একটি অন্যতম রোগ হচ্ছে হেপাটাইটিস। এটি মূলত দুটো ভাইরাস দিয়ে হয়। আরো অনেক ভাইরাস দিয়ে হচ্ছে। তবে বি ও সি ভাইরাসগুলো দিয়ে যে আক্রমণগুলো হয়ে থাকে, সেগুলো পরে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই ক্ষেত্রে বি ও সি ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকলে আমরা দুটো ভাগে ভাগ করে থাকি। একটি হতে পারে একিউট হেপাটাইটিস, আর হলো ক্রনিক হেপাটাইটিস। বি ভাইরাস যদি আপনার শরীরে ঢুকে এবং সেটি যদি তিন মাস থাকে, তাহলে আমরা একে বলি একিউট হেপাটাইটিস। তবে এটি যদি ছয় মাসের বেশি থাকে, তাহলে একে বলা হয় ক্রনিক হেপাটাইটিস। এই ক্রনিক হেপাটাইটিসগুলো একের পর এক বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে। যেমন লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার ইত্যাদি। বি ভাইরাস, ডিনএনএ ভাইরাস দুই ধরনের হেপাটাইটিস করে একিউট হেপাটাইটিস, যেটা পরে ভালো হয়ে যেতে পারে। আর এটি যদি ছয় মাসের বেশি থাকে, তাহলে ক্রনিক হেপাটাইটিস হয়। এই বি ভাইরাস বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরে হতে পারে, কখনো কখনো সুঁইয়ের মাধ্যমে, অপরিশোধিত সুঁইয়ের মাধ্যমে, অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অপরিশোধিত সরঞ্জাম যদি ব্যবহার করি, বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে গেলে যদি অপরিশোধিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে, নবজাতকের ক্ষেত্রে অনেক সময় গর্ভধারিণী মায়ের কাছ থেকে এটি আসতে পারে। যৌন মিলনের মাধ্যমে আসতে পারে, রক্তগ্রহণের মাধ্যমেও আসতে পারে।
তবে এখন আশার আলো যেটি সেটি হলো, বি ভাইরাসের চিকিৎসা বাংলাদেশে বেশ ভালোভাবে হচ্ছে।
বি ভাইরাসকে আমরা প্রথমে দুটো ভাগে দেখতে পারি। প্রথমত যখন বি ভাইরাসের রোগী আসে, আমরা তখন দেখব এই ভাইরাস কি সক্রিয়, না কি নিক্রিয়। অর্থাৎ লিভারের কি ক্ষতি করছে, না কি ক্ষতি করছে না, সেটি আমরা আগে দেখি। তার জন্য আমরা কিছু লিভার ফাংশন পরীক্ষা করি। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে ডিএনএ করে দেখি যে ভাইরাসের সংখ্যা কতটুকু রয়েছে। এইবিইএজি দেখি। অর্থাৎ ভাইরাস কি সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে, না কি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এই কয়েকটা পরীক্ষার পর আমরা ফাইব্রোস্কেন করি। আগে লিভার বায়োপসি করা হতো। এখন এটি না করে আমরা ফাইব্রোস্কেন করি। আমরা দেখি যে লিভারের স্টিফনেস কী রকম। আমরা দেখি বি ভাইরাসটা লিভারকে কতটুকু ক্ষতি করছে। ফাইব্রোস্কেনের স্কোরিং যদি বেশি হয়,তখন আমরা অ্যান্ডোস্কোপি করে দেখি যে কোনো সমস্যা রয়েছে কি না, রক্তনালিগুলো বড় রয়েছে কি না। সব ডাটা ব্যবহার করার পর আল্ট্রাসোনোগ্রামে আমরা দেখি, পেটে কোনো পানি রয়েছে কি না। এসব কিছু দেখার পর আমরা বি ভাইরাসের দুটো ক্লাসিফিকেশন করে ফেলি। এরপর আমরা রোগীর ব্যবস্থাপনা শুরু করি। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পেগ ইন্টারশন একটি বড় ভূমিকা পালন করে। তবে এখন মুখে খাওয়ার জন্য বেশ কিছু ওষুধ চলে আসছে।
সম্প্রতি যে ব্যবস্থাপনা চলে এসেছে, মুখে খাওয়ার ওষুধের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে। টেনোফোবিল যদি ব্যবহার করি ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে রক্তে যায়, তাই রক্তে গেলে অস্থিমজ্জা ও কিডনিতে কিছুটা জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে বেকন ফার্মাসিটিউকলসের আনা ট্যাফ ওষুধটি রক্ত, অস্থিমজ্জা, কিডনির জটিলতা করার সুযোগ পাচ্ছে না। এতে ফলাফল অনেক ভালো পাচ্ছে।
আমরা এখন যারা লিভার বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছি, তাদের কাছে কথা হচ্ছে, এসব ভাইরাসে আক্রান্ত লিভারের রোগীদের চিকিৎসা যথেষ্ট ভালোভাবে দিতে পারছি আমরা। এখান থেকে রোগীরা যথেষ্ট ভালো করছে।
তবে একটি কথা হচ্ছে যদি চিকিৎসা দেরি হয়ে যায়, রোগী যদি একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে আসে, তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না। আমরা কেবল কিছু সাপোর্টিভ ব্যবস্থাপনা করতে পারি। শেষ পর্যন্ত লিভার যদি সিরোসিস হয়ে একেবারে শেষ হয়ে যায়, তখন একমাত্র চিকিৎসা লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট। এটি হলো বি ভাইরাসের ক্ষেত্রে।