বাড়তি ওজন কমায় বাতাবিলেবু
আমাদের দেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি পরিচিত ফল হলো বাতাবিলেবু, যা সাইট্রাস ফলের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় আকৃতির। ১৬৯৬ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক জাহাজের ক্যাপ্টেন এই ফল জ্যামাইকাতে প্রথম আমদানি করেন। তাঁর নামানুসারে ইংরেজিতে এর নাম রাখা হয় ‘স্যাডডক’। তবে বর্তমানে ‘পামেলো’ নামটিও বেশি প্রচলিত।
বাতাবিলেবুর বর্ণ, হালকা সবুজ থেকে হলুদ হয়। এর ভেতরের কোষ সাদা, গোলাপি বা লাল বর্ণের হয়। সাদা কোষবিশিষ্ট ফলের স্বাদ মিষ্টি এবং গোলাপি বর্ণের কোষের স্বাদ তেঁতো হয়। কাঁচা বাতাবিলেবুর কোষ খাবারের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে, লবণ ও চিনির সঙ্গে ভর্তা করে, সালাদ ও পানীয় হিসেবে খাওয়া যায়। এই ফল জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া যায়।
১০০ গ্রাম বাতাবিলেবুর কোষ থেকে ৩৮ ক্যালরি, ২১৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, এক মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম আঁশ, ০.৮ গ্রাম প্রোটিন, ১ ভাগ ম্যাগনেসিয়াম, ১০১ ভাগ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষায় তাই বাতাবি লেবুর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এর উপকারিতাগুলো দেখে নিতে পারেন
রোগ প্রতিরোধী
বাতাবিলেবু ভিটামিন সি-এর উৎকৃষ্ট উৎস। এই ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে শ্বেতকণিকার কাজে সাহায্য করে ও আমাদের দেহের মুক্ত র্যাডিক্যাল্সকে ধ্বংস করে। এভাবে যে কোনো সংক্রমণের কারণে হওয়া সর্দি, কাশি, জ্বর প্রতিরোধ করে।
খাদ্য পরিপাক
বাতাবিলেবুর আঁশ খাদ্যের সঠিক পরিপাকে সাহায্য করে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দূর করে। এর আঁশ পরিপাকতন্ত্রের ক্রিয়া সচল রাখে ও সঠিক মাত্রায় পরিপাক রস নিঃসৃত করে। ফলে খাদ্যের সর্বোচ্চ পরিপাক হয়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
বাতাবিলেবু পটাশিয়ামের ভালো উৎস। এই পটাশিয়াম আমাদের ধমনির আয়তন বৃদ্ধি করে রক্ত চলাচলের পথকে সুগম করে। ফলে দেহের বিভিন্ন প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছানো সহজ হয়, যা হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ কমায় এবং স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের আশঙ্কা হ্রাস করে।
হাড়ের সুরক্ষা
দেহে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়ামের অভাব হলে অস্টিওপোরোসিসসহ হাড়ের নানাবিধ রোগ দেখা দেয়। বাতাবিলেবুতে এই খনিজ উপাদানসমূহ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।
বার্ধক্য রোধ
বাতাবিলেবু থেকে পাওয়া ভিটামিন সি বার্ধক্য প্রতিরোধের সহায়ক। নিয়মিত বাতাবিলেবু গ্রহণে অকাল বার্ধক্যের চিহ্নসমূহ, যেমন- ত্বক কুঁচকে যাওয়া, ঝুলে যাওয়া, কালো ছোপ ইত্যাদি হতে মুক্তি পাওয়া যায়। বাতাবিলেবুর স্পারমেডিন (Spermadine) নামক একটি বিশেষ উপাদান বার্ধক্য প্রতিরোধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
ওজন হ্রাস
বাতাবিলেবু আমাদের দেহের অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত বাতাবিলেবু গ্রহণে শরীরের ওজন কমে।
ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন প্রতিরোধ
বাতাবিলেবুর ভিটামিন সি ট্রাক্ট প্রতিরোধ করে; যা ইউরিনারি সিস্টেমের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন। এ ছাড়া বাতাবিলেবুতে বিদ্যমান এসিড মূত্রনালির ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
ক্ষত সারানো
কাটা-ছেঁড়াসহ যে কোনো ক্ষত সারাতে বাতাবিলেবু উপকারী। এর ভিটামিন সি কোফ্যাক্টর এনজাইম সমৃদ্ধ হয়, যা কোলাজেনের সৃষ্টিতে সহায়ক উপাদান। এই কোলাজেন ত্বকের ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তোলে।
এনিমিয়া প্রতিরোধ
স্বাভাবিকের চেয়ে কম পরিমাণ লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতির জন্য এনিমিয়া দেখা দেয়। গবেষণায় বলা হয়, বাতাবিলেবুর ভিটামিন সি দেহে লৌহের শোষণ ত্বরান্বিত করে ফলে দেহের এনিমিক অবস্থার উন্নতি হয়। এ কারণে এনিমিয়া প্রতিরোধে লৌহের সাপলিমেন্ট গ্রহণের পরিবর্তে বাতাবিলেবুর রস গ্রহণ অধিক উপকারী।
ক্যানসার প্রতিরোধ
বাতাবিলেবুর খোসা বায়োফ্লেভোনয়েডস সমৃদ্ধ, যা ক্যানসারে বিরুদ্ধে কাজ করে এবং আন্ত্রিক, অগ্ন্যাশয় ও ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করে। এর লিমোনয়েড নামক উপকরণ ক্যানসারের জীবাণুকে ধ্বংস করে ও এর আঁশ মলাশয়ের ক্যানসার দূর করে। এসব ছাড়াও বাতাবিলেবু গর্ভবতী মহিলা, স্তন্যদানকারী মা ও সন্তান জন্মদানে ইচ্ছুক মহিলার জন্য খুবই উপকারী ফল। এ লেবু গাছের কচি পাতাও শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ।