কোন ধরনের দাঁতের ফিলিং আপনার জন্য উপযোগী?

দাঁত ক্ষয়ের চিকিৎসায় ফিলিং করা হয়। ফিলিং অনেক ধরনের রয়েছে। একটি সময় ছিল যখন মার্কারি ফিলিং করা হতো। তবে বর্তমানে অনেক আধুনিক ফিলিং রয়েছে।
কোন ধরনের দাঁত ক্ষয়ের জন্য কোন ধরনের ফিলিং জরুরি, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৪৫৬তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সৈয়দ তমিজুল আহসান রতন। বর্তমানে রতন’স ডেন্টালের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : একজন মানুষের দাঁতে ফিলিংয়ের প্রয়োজন হয় কখন?
উত্তর : নিয়মিত চেকআপের মধ্যে যদি আমরা থাকি, আমাদের কোনো ফিলিংয়ের প্রয়োজন নেই। নিয়মিত চেকআপ বলতে কী বোঝায়? ছয় মাস পর পর যদি আমরা দন্ত্য চিকিৎসকের কাছে যাই, চেকআপ করলে ধরা পড়ে যাবে, ব্যক্তির কোন দাঁতে কতটুকু ছিদ্র রয়েছে। বাচ্চাদের কথাই বলি না কেন, যখন বাচ্চার তীব্র ব্যথা হয়, তখন মায়েরা নিয়ে আসে। বাচ্চাদের এক ধরনের ফিলিং রয়েছে। তাদের দাঁতগুলো ছিদ্র হয়ে যায়। আমরা কম্পোজিট ফিলিং দিয়ে দুধের দাঁতগুলো ফিল করে রাখতে পারি।
বড়দের কথাই বলি, প্রথমে তো রোগীরা আসে না। সাধারণত আসে ব্যথা নিয়ে। দাঁতে হয়তো তার ছিদ্র হয়ে গেছে। ব্যথা তো বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। দাঁতের ক্যারিজের জন্য আমরা যদি বলি, তাহলে দেখা যাবে কোনো একটি দাঁত ছিদ্র হয়ে গেছে। ছিদ্রটা খুব ছোট। কিন্তু দেখা যায়, ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে অনেক দূর চলে গেছে। আমরা জানি, দাঁতের কয়েকটা লেয়ার রয়েছে। দাঁতের প্রথম লেয়ারে যখন খাদ্যকণাগুলো একটু লেগে থাকে, এগুলো ভালোভাবে ব্রাশ করলে পরিষ্কার হয়ে যায়। আঠালো খাবার যখন লেগে থাকে, তখন আস্তে আস্তে কিছু ক্যারিজও বৃদ্ধি পায়। ক্ষয়গুলো যখন তৈরি করে, তখন আস্তে আস্তে করে। যখন এ ধরনের অবস্থায় আসে, তখন খুব সাধারণ একটি ফিলিং রয়েছে, ফিসার, এটি করি। এটি তরল ধরনের। এটি ক্ষয়গুলো পরিষ্কার করে দিয়ে সিলান্ট হিসেবে ওগুলো সিল করে দেয়। এটা আর গভীর হয় না। যদি আস্তে আস্তে গভীরে চলে গেল, অ্যানামেল পর্যন্ত চলে গেল, তখনো যদি আসে, তাহলেও তার সাধারণ ফিলিং আমরা করে দিতে পারি। সেখানে ফিলিংয়ের দরকার রয়েছে।
প্রশ্ন : দাঁতের আরো কিছু ক্ষয় রয়েছে, সেগুলো কী?
উত্তর : নিজের তৈরি করা কিছু ক্ষয় রয়েছে। ভুল পদ্ধতিতে যদি ব্রাশ করি, দুই দাঁতের দুই দিকে যদি আমরা ঘষি অথবা শক্ত ব্রিটসেল ব্যবহার করি, আধা ঘণ্টা ধরে ব্রাশ করি, দিনে তিনবার বা চারবার ব্রাশ করি, তাহলে দেখা যায় ক্ষয় হয়ে যায়। ওপরের তিনটি দাঁত, নিচের তিনটি দাঁত দেখা যায় ক্ষয় হয়ে যায়। ডেন্টাল সার্জনরা দেখলেই বুঝতে পারেন, এই ক্ষয়টা কিসের কারণে হচ্ছে। কারো কারো দেখা যায় সম্পূর্ণ মুখের মধ্যে ক্ষয় হয়। এ ছাড়া অন্যান্য কারণে হতে পারে। কেউ যদি মাদক নেয় তখন হতে পারে। কেউ যদি মদ্যপান করে সেই জন্য হতে পারে। কারো পাশে ক্ষয় হয়, কারো উপরে ক্ষয় হয়। উপরে ক্ষয় হলে কেউ দেখা যায় ঘুমের ঘোরে দাঁত কামরায়।
অনেক সময় দেখা যায়, কামড়টা স্বাভাবিক নয়, এসটুএস বাইট হচ্ছে। সরাসরি লাগছে। ওপরের দাঁত আর নিচের দাঁত মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। রাতের বেলা যখন ঘর্ষণ হয়, দেখা যায়, আরো বেশি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ের জন্য তার এই বিষয়গুলো হয়।
প্রশ্ন : ব্যাকটেরিয়ার কারণে ক্ষয়রোগ হলে, কোন পর্যায়ে গেলে ফিলিং দিয়ে থাকেন? এই ফিলিংয়ের ক্ষেত্রে আগে কোন ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হতো? এখন কোন ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : মজার বিষয় হলো, প্রতিটি ডেন্টাল সার্জনের কাছে গিয়ে দেখবেন ইন্টারভরাল ক্যামেরা রয়েছে। আপনাকে সবই ডকুমেন্টরি করে দেখিয়ে দিতে পারবে। আপনি নিজেই দেখতে পারবেন, ক্ষয়টা কতটা গভীর। কতটুকু গভীর হলে কোন ফিলিংটা দেওয়া যেতে পারে।
ফিলিংয়ের ক্ষেত্রে স্থায়ী কোনো বিষয় নেই। মূল হলো, শক্ত একটি ফিলিং। দেখতে হবে টেস্ট ফিলিং হবে, নাকি দীর্ঘস্থায়ী ফিলিং হবে।
এখন কথা হলো কোন ধরনের ফিলিং ব্যবহার করা যাবে? আমরা যেটি আগে করতাম, সেটি হলো মার্কারি ফিলিং। মার্কারি ফিলিংয়ে কী হয়? মার্কারি আর অ্যালোয় দুটো মিলিয়ে ফিলিংটা তৈরি করা হতো। স্কুইজ করে যেই জিনিসটা পাওয়া যেত সেটি আমরা ক্যাভিটির মধ্যে দিয়ে দিতাম। এটা আস্তে আস্তে সেট হয়ে যেত। আসলে দুই বা তিন ঘণ্টা নয়, এটি কোনোদিনই সেট হয় না। কারণ, বলতে গেলে এই মার্কারি হলো লিকুইড মার্কারি। এর কারণে সেট হলেও এর একটি ক্রিয়া থেকে যায়। গবেষণা করে দেখা গেছে, ফিলিংটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই জন্য এ ফিলিংটা করা ঠিক নয়। আগে তো দুই পাশে পাঁচটা ফিলিং করলে হা করলেই কালো দেখা যেত। এখন তো সে ধরনের কোনো সুযোগই নেই। এখন কথা হলো হাঁ করলেও বোঝা যাবে না, তার মুখের মধ্যে কোনো ফিলিং রয়েছে।
প্রশ্ন : ফিলিং করার ক্ষেত্রে অনেকে এসে বলে আমি লেজার ফিলিং করতে চাই। এই বিষয়টি কী?
উত্তর : আসলে ফিলিং করার বিষয়ে লেজারের কোনো কথা নেই। আমরা আলট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে ফিলিং করছি। এলইডিএ এখন চলে আসছে। আমরা একটি আলো দিতাম, আলট্রাভায়োলেট আলো, দিলে ফিলিংয়ের উপাদানটা তখনই শক্ত হয়ে যেত। এখন আরো শক্ত হয়। এখন আট সেকেন্ডের মধ্যে আলোটা দিলে ফিলিংটা সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়ে যাচ্ছে। এলইডি লাইট চলে আসছে। দিন দিন উন্নত হচ্ছে। তবে মেশিন বিক্রির ক্ষেত্রে বিক্রেতাদের বলে দেওয়া দরকার যে কতবার এটি দিয়ে ফিলিং করা যাবে। দেখা যায়, কোনো একটি পর্যায়ে হয়তো নিরাময় হয় না, কিন্তু শক্ত হয়ে যায়। এমন যেন না হয় যে রোগী অভিযোগ নিয়ে আসে আপনার ফিলিংটা উঠে গেছে। আসলে ফিলিংটা পরীক্ষা করার একটি যন্ত্রপাতি রয়েছে।
প্রশ্ন : যাঁরা দাঁতের ফিলিং করে থাকেন, সাধারণত তাঁরা বলে থাকেন, এটি কত বছর টিকবে। কী বলে থাকেন এই ক্ষেত্রে?
উত্তর : আসলে এটি খুবই মজার বিষয়। আমি মনে করি, তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রত্যেকটি ফিলিং পরিবর্তন করে নেওয়া ভালো। আর যেহেতু অগ্রবর্তী চিকিৎসা আসছে, কেন আমি তাকে এ অবস্থায় রাখব।
প্রশ্ন : ফিলিংয়ের পরে কেউ কেউ অভিযোগ করে দাঁত শিরশির করছে। এটি দূর করার জন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : উপাদানের কিছু বিষয় রয়েছে। অনেক অনেক উপাদান রয়েছে, যেগুলোতে একটি স্পর্শকাতরতা তৈরি হয়। আমরা দেখেছি পেস্ট ধরনের কিছু কম্পোজিট ফিলিং রয়েছে, যেগুলো স্পর্শকাতর হয়। তবে যদি ক্ষয়টা খুব গভীর হয়ে যায়, সেকেন্ড লেয়ারে চলে যায়, তখন দেখা যায়, তার সঠিক ফিলিং যদি না হয়ে থাকে, যেমন আমরা লাইনিং দিই, যদি এটি ঠিকমতো না হয়, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি স্পর্শকাতর হয়। যদি আমরা উপাদানটা পরিবর্তন করে দিই, দেখা গেল, তার স্পর্শকাতরতা নেই। এরপরও যদি শিরশির অনুভূতি না যায়, আমরা যদি দেখি সাধারণ ফিলিং দিয়ে আর রাখতে পারছি না; কারণ রোগীকে তো আর কষ্ট দেওয়া যাবে না, আস্তে আস্তে দেখা যায় ব্যথায় পরিবর্তন হয়, তখন বিকল্প হিসেবে আমরা রুট ক্যানেল করতে পারি।