অ্যান্টিবায়োটিক যখন তখন নয়
সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন জাতীয় রোগে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা হয়। ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ ‘অ্যান্টি’ ও ‘বায়োস’ থেকে। অ্যান্টি অর্থ বিপরীত ও বায়োস অর্থ প্রাণ। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে যেসব রোগ হয়, সেগুলো নিরাময়ের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। তাই ভাইরাসের কারণে হওয়া রোগের বিপরীতে অ্যান্টিবায়োটিক বেশ ভালো কাজ করে। অ্যান্টিবায়োটিক দেহে প্রবেশ করলে বিভিন্ন জীবাণু এটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। জীবাণুগুলো সাময়িকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে আমাদের দেহ সুস্থ হতে শুরু করে।
আদর্শগতভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীরা অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খায়। তবে অনেক সময় দেখা যায়, রোগীরা একটু ঠান্ডা বা কাশি হলে না বুঝেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলে। আবার অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি সেবন করা শুরু করলেও মাঝপথে গিয়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয় বা কোর্স পূর্ণ করে না। এ বিষয়গুলো বেশ ক্ষতিকর। এর ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিটেন্স হয়ে পড়ে বা তার কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই অ্যান্টিবায়োটিক যখন তখন সেবন করা যাবে না।
অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরমর্শ নিতে হবে। ফার্মেসি বা দোকানদার বললেও ওষুধ খাওয়া যাবে না। এ ছাড়া রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার আগে চিকিৎসককে বুঝতে হবে, আসলেই রোগীর শরীরে এর প্রয়োজন আছে কি না। সেখানেও পূর্ণ মাত্রা এবং কত দিন খাবে উল্লেখ করে দিতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার আগে চিকিৎসককে খেয়াল রাখতে হবে রোগীর বয়স, ওজন ইত্যাদির দিকে। এ ছাড়া বৃদ্ধ, শিশু ও সন্তানসম্ভবা মায়ের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার আগে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রোগীর কাছে চিকিৎসক জেনে নেবেন তার অন্য কোনো রোগ আছে কি না। যদি রোগীর এমন কোনো রোগ থাকে যেখানে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না এবং চিকিৎসক যদি বিষয়টি না জানেন, তাহলে ওষুধ সেবনের ফলে রোগীর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
সাধারণত সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বরে (ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা) এসব রোগে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না। সব রোগে একই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় না। রোগভেদে বিভিন্ন রকম অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে। তাই রোগী যদি না বুঝে নিজে নিজে ওষুধ কিনে খায়, তখন রোগ তো সারবেই না, উল্টো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে এবং রোগ দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। যার চিকিৎসা করা জটিল হয়ে যাবে। সম্ভব হলে জরুরি পরীক্ষা করার পর অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া ভালো।
অনেক সময় যেকোনো ওষুধের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। এ রকম যদি কোনো ওষুধের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তখন রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তাই যখন তখন নিজের ইচ্ছামতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
এ বি এম আবদুল্লাহ : অধ্যাপক, ডিন, মেডিসিন বিভাগ, বিএসএমএমইউ