এমপক্স রোগের ঝুঁকি কাদের বেশি? চিকিৎসা কি?
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ থেকে আফ্রিকার কিছু অংশে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আগে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত অত্যন্ত সংক্রামক এই রোগে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর বিবিসির
এ রোগের জটিলতাগুলো কী হতে পারে?
প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায়। তবে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের (যেমন- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি রোগী, ক্যান্সারের রোগী, এইডসের রোগী, নবজাতক শিশু, গর্ভবতী নারী) ক্ষেত্রে এটা শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে।
শারীরিক জটিলতাগুলো
– ত্বকে সংক্রমণ
– নিউমোনিয়া
– মানসিক বিভ্রান্তি
– চোখে প্রদাহ, দৃষ্টি শক্তি লোপ পেতে পারে। সুতরাং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিগণ আক্রান্ত হবার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
যেসব প্রাণী থেকে এ রোগ ছড়ায়
–এমপক্সে আক্রান্ত বানর থেকে
– ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, খরগোশ বর্গের পোষকের মাধ্যমে। তবে সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী (যেমন– গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগী, মহিষ) থেকে এ রোগ ছড়ায় না।
যাদের মধ্যে এ রোগের ঝুঁকি বেশি
– নবজাতক শিশু
– গর্ভবতী নারী
– দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি (যেমন–অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি রোগী, ক্যান্সারের রোগী, এইডস-এর রোগী)।
যেভাবে এ রোগ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রামিত হয়
– সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শে
– ফুসকুড়ির রস-এর সংস্পর্শে
– শরীরের নিঃসরণ -এর সংস্পর্শে
– হাঁচি, কাশির মাধ্যমে (দীর্ঘ সময় সংস্পর্শে থাকলে)
– ব্যবহার্য্য সামগ্রীর সংস্পর্শে থাকলে
যেভাবে এ রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারি
– আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকা।
– আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সেবা প্রদানকারীদের মাক্স ব্যবহার করা।
– সাবান পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া (৩০ সেকেন্ড ধরে)।
– হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।
– আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি সাবান/ জীবাণুনাশক/ডিটারজেন্ট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা।
– আক্রান্ত জীবিত/মৃত বন্য প্রাণী অথবা প্রাকৃতিক পোষক (যেমন- ইদুর কাঠবিড়াল, খরগোশ) থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা।
এ রোগ কি বাচ্চাদের হতে পারে?
বয়স্কদের তুলনায়, বাচ্চাদের সংক্রমিত হওয়া আশঙ্কা বেশি।
এ রোগের কি টিকা আছে?
গুটিবসন্তের টিকা, এমপক্সের প্রতিষেধক হিসেবে অনেকাংশেই কার্যকর। তবে বিশ্বব্যাপী এ টিকা এখন সহজলভ্য নয়। উল্লেখ্য যে, যারা ইতোপূর্বে গুটিবসন্তের টিকা গ্রহণ করেছেন (১৯৮০ সালে সর্বশেষ গুটিবসন্তের টিকা দেয়া হয়), তারা এমপক্স সংক্রামণ থেকে অনেকাংশে সুরক্ষিত।
এমপক্সের চিকিৎসা
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলো আপনা আপনি উপশম হয়ে যায় বলে নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। তবে উপসর্গ নিরাময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। যেমন- জ্বর হলে প্যারাসিটমল, ফুসকুড়ি শুকনো রাখা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পরিমিত বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ, ইত্যাদি। জটিলতা দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।
আক্রান্ত ব্যক্তি অসুস্থতার কোন পর্যায়ে এ রোগ ছড়ায়?
দৃশ্যমান ফুসকুড়ি থেকে শুরু করে ফুসকুড়ির খোসা পড়ে যাওয়া পর্যন্ত- আক্রান্ত ব্যক্তি হতে রোগ ছড়াতে পারে।
এ রোগটি কি যৌনবাহিত?
আক্রান্ত ব্যক্তি সাথে নিবিড় দৈহিক সম্পর্ক/ যৌন মিলনে এ রোগ ছড়াতে পারে।
বিশ্বের যেসব দেশে এই রোগ শনাক্ত হয়েছে
সর্বশেষ তথ্যমতে ১০১টি দেশে এ রোগের নতুন প্রাদুর্ভাবের তথ্য পাওয়া গেছে (২৯-০৮-২০২২ পর্যন্ত)। উল্লেখ্য, ১৯৭০ সাল থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ১১টি দেশে এমপক্সের পুরোনো প্রাদুর্ভাব রয়েছে।
আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে অথবা আক্রান্ত দেশ থেকে ফের আসার ২১ দিনের মধ্যে জ্বর আসলে এবং ফুসকুড়ি দেখা দিলে আপনার দেহে এমপক্স ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি অতিসত্ত্বর আইইডিসিআর-এর এ হটলাইনে যোগাযোগ করুন। ১০৬৫৫