হঠাৎ কিডনি বিকল হয় কেন?

বিভিন্ন কারণে হঠাৎ কিডনি বিকল বা একিউট কিডনি ইনজুরি হয়ে থাকে। আজ ২৭ ডিসেম্বর এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৪৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ন্যাশনাল কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ।
প্রশ্ন : একিউট কিডনি ইনজুরি কী? এর পেছনের কারণগুলো কী?
উত্তর : একিউট কিডনি ইনজুরি প্রতিরোধ করতে পারেন। যদি সঠিকভাবে জানেন কী কারণে হচ্ছে তাহলে খুব সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। এটি ক্রনিক কিডনির রোগ নয় যে ধীর গতিতে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কাজেই এটি সম্বন্ধে আমাদের জানা উচিত।
আমাদের দেশে প্রথমে এর যে কারণ ছিল সেটি হলো ডায়রিয়া অথবা রক্তপাত। সেই রক্তপাত যেকোনোভাবেই শরীর থেকে হতে পারে অথবা গর্ভপাত। তবে এ কারণগুলো এখন আমাদের দেশে অনেক কমে গেছে। তবে আমাদের দেশেই নয়, এখন গোটা বিশ্বে দেখা যাচ্ছে কিডনি ৪০ ভাগ বিকল হয় ওষুধের মাধ্যমে। কী ওষুধ? এটি অ্যান্টিবায়োটিক হতে পারে, ক্যানসারের ওষুধ হতে পারে, অথবা ব্যথানাশক ওষুধও হতে পারে।
আরেকটি জিনিস হলো ডাই। এটি কী? আপনার হয়তো হার্টের নালীগুলো সরু হয়ে গেছে। এ সময় এনজিওগ্রাম হয়তো করা হয়। নালীর ভেতরে ডাইটা দিলেন, দেখে এই সরু হওয়াটা বুঝতে পারলেন। তারপরও তো আপনি চিকিৎসা করবেন। এই যে ডাইটা দিচ্ছেন, এর কারণে একিউট রেনাল ফেইলিউর হতে পারে। এই বিষয়ে বুঝতে হবে। এই ডাই কতটুকু দেওয়া উচিত? কাদের দেওয়া উচিত নয়?urgentPhoto
আরেকটি মজার জিনিস বলি, হার্টের জন্য দুটো বিষয় ঝুঁকিপূর্ণ। ডায়াবেটিস এবং ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগ। এগলো ঝুঁকির কেন? যাদের বয়স বেশি তাদের হার্টের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখনই জানতে হবে আপনার হার্টে ব্লক আছে কি না। তখনই আপনি ডাই দেবেন। এই ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে এই সমস্যা না হয়। কারণ তারা ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
বয়সের সাথে সাথে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। সেই ক্ষেত্রে, ডাই কি দিবেন? কখন ডাই দিবেন? এবং কতটুকু পরিমাণ হবে?- এটা জানতে হবে। এটা সম্বন্ধে বলি, যেই ডাইগুলো নন আয়োনিক এবং আইসোঅসমোলার অথবা হাইপোঅসমোলার এসব ডাই ব্যবহার করতে হবে। যেসব ডাইয়ের ভেতর আয়োডিন থাকে, সেগুলো কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটা রোগীর বোঝার কোনো উপায় নেই। তবে চিকিৎসকরাই কাজটি করবে।
তবুও আমি আলোচনার জন্য বলি, এই ডাইগুলো যখনই দেওয়া হয়, স্পাজম হয়। অর্থাৎ কিডনির নালীগুলো সরু হয়ে যায়। সরু হয়ে গেলে এর ভেতরে রক্ত যেতে পারবে না। তখনই হঠাৎ কিডনি ইনজুরি হয়। এই জন্য ডাই পরিমিত দেওয়া উচিত এবং কাকে কতটুকু ডাই দিতে হবে, সেটা ঠিকমতো জানা উচিত। আর আরেকটি যেটি করা দরকার, এই সময় বেশি পানি খাইয়ে দিয়ে প্রস্রাবটা বেশি করে করানো উচিত। যেন ওই জিনিসটা বেড়িয়ে যায়।
প্রশ্ন : দর্শকরা এ বিষয়ে কীভাবে সাবধান হবে?
উত্তর : যারা ডাই ব্যবহার করছেন, তাদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ রয়েছে, তারা যখন ডাই ব্যবহার করবেন সতর্ক থাকতে হবে প্রস্রাব ভালো হচ্ছে কি না। বিশেষ করে যাদের বয়স বেশি, যাদের শরীরে পানি কম, আবার বেশি পানি- এসব অবস্থায় বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
আরেকটি বিষয় হলো যেই ওষুধগুলো কিডনির ক্ষতি করে, সেগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি নিজেদেরও একটু সচেতন থাকতে হবে।
প্রশ্ন : হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে ব্যবস্থাপনা করেন?
উত্তর : যদি আপনার ডায়রিয়া হয়, আপনি যদি চিকিৎসা না করেন। একটি বিষয় হলো ডায়রিয়া বা বমি হলে আপনি ফ্লুইড দেবেন। এখানে একটি সতর্কতা রয়েছে। আপনি শুধু পানি ব্যবহার করবেন না। সবসময় আপনাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং পানি ব্যবহার করতে হবে। মানে এর মধ্যে লবণ ক্লোরাইড থাকতে হবে। আর যদি বেশি ডায়রিয়া হয়, সেই্ সাথে লবণ, সোডিয়াম, ক্লোরাইড এবং পটাশিয়াম দিতে হবে। আরো বেশি হলে হারসমেন সলিউশন দিতে হবে। এই জিনিসটি চিকিৎসকের ব্যাপার। তবে আমি দর্শকদের জন্য বলতে চাই, ডায়ারিয়ায় বমি হলে শুধু পানি খাওয়াবেন না। পারলে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ান। অথবা লবণ দিয়ে পানি গুলিয়ে খাওয়ান।
আরেকটি হলো ডায়রিয়ায় বমি হলে তাৎক্ষণিক আপনি ফ্লুইড দেন। তাহলে প্রস্রাব ঠিকমতো হবে। যদি এই অবস্থায় রোগী শকে চলে যায়, রক্তচাপ কমে যায়, এই অবস্থায় দুই তিন দিন রেখে দেন, কিডনির কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই কিডনি আর ঠিক করতে পারবেন না।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এসময় ডায়ালাইসিস করা হয়। এ ক্ষেত্রেও একটি বিষয় রয়েছে দুই দিন আগে এলে ভালো, সাতদিন পরে এলে অসুবিধা। ওই কিডনিটা ঠিক করাটা কঠিন হয়ে যায়। তাই তৎক্ষণাৎ আসা উচিত। যদি দুই তিন দিন ধরে প্রস্রাব না হয়, তখন চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। আরেকটি হলো ক্রিয়েটিনিনে মাত্রা যদি ক্রমান্বয়ে বেড়ে যায়, তখনই আপনার আসতে হবে। তখন চিকিৎসকের কাছে এলে ডায়ালাইসিস করে কিডনিটা ভালো করে দিতে পারি।
আরেকটি হলো যদি রক্ত চলে যায়, সেক্ষেত্রে রক্তই দিতে হবে। সেপটিক অ্যাবোশন বা স্যাপটিক ইনফেকশন, তখন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। আর যেই রোগীগুলো শকে থাকে আইসিইউতে, তাদের সতর্ক হয়ে ওষুধ দেওয়া উচিত। সমীক্ষাতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ একিউট কিডনি ফেইলিউর হাসপাতালের রোগীদের হয় এবং ওষুধের মাত্রা ঠিকমতো হচ্ছে না বলে এই সমস্যা হয়। আমরা যেহেতু কিডনি বিশেষজ্ঞ তাই এই বিষয়গুলোতে এখন বেশি জোর দিচ্ছি।