শিশুর কি জ্বর হচ্ছে?

শিশুর জ্বর, ডায়রিয়া খুব সাধারণ সমস্যা এ সময়ে। শিশুর এসব সমস্যা হলে কী করতে হবে—এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। আজ ২২ জানুয়ারি, এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২২৭৪তম পর্বটি প্রচারিত হয়।
urgentPhoto
প্রশ্ন : আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। এ সময়ে শিশুদের সাধারণত কী কী রোগব্যাধি হয়?
উত্তর : এখন বাচ্চাদের জ্বর হচ্ছে। এটা প্রথম অবস্থায় ভাইরাল ইনফেকশনের জন্য হয়। অনেক সময় এর সঙ্গে র্যাশ হয়। র্যাশ দেখা দিলে মা-বাবারা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। জ্বরের সঙ্গে র্যাশ থাকে। হাতে ও পায়ের তালুতে এই র্যাশ বেশি হয়। এর পর পেটে হয়। একে আমরা হ্যান্ড ফুড মাউথ রোগ বলি।
প্রশ্ন : এটি যে ডেঙ্গু নয়, অন্য কোনো কারণে এই র্যাশ হচ্ছে, সেটি বোঝার উপায় কী?
উত্তর : র্যাশটা পানি পানি হচ্ছে, একে ভেসিকুলার ইরাপশন বলে। আর এটা লালচে হয়ে যাচ্ছে। ডেঙ্গুর র্যাশ হচ্ছে খুব ছোট ছোট। পুরো শরীরে হয়ে যায় এবং লালচে ভাব হয়ে যায়।
প্রশ্ন : ডেঙ্গুর র্যাশ কি জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়?
উত্তর : ডেঙ্গু জ্বরের দুই-তিন দিন পর থেকে র্যাশ শুরু হয়। আর এই র্যাশ জ্বরের সঙ্গে শুরু হয়।
প্রশ্ন : আর কী কী ধরনের সমস্যা রয়েছে শিশুদের?
উত্তর : এখন বাচ্চাদের ডায়রিয়া বেশি হচ্ছে। অনেক সময় বাসি খাবার খাওয়ার জন্য হচ্ছে। এখন মশা-মাছির প্রকোপ বেড়ে গেছে। এগুলো খোলা খাবারে বসছে। এসব খাবার খাওয়া, বাসি খাবার খাওয়া—এসব কারণে শিশুদের ডায়রিয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন : আপনি বলছিলেন, ইদানীং শিশুদের মধ্যে খুব জ্বর বেড়ে যাচ্ছে। এই জ্বর কী ধরনের, সেটি মা-বাবারা কীভাবে বুঝবেন? এবং কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন?
উত্তর : আসলে আমি মনে করি, যখনই বাচ্চার অনেক জ্বর হয় এবং র্যাশ হতে থাকে, বাচ্চারা খেতে চায় না, টক্সিক হয়ে থাকে, তখনই আসলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তখন চিকিৎসকরা উনাদের একটি দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
প্রশ্ন : যখন আপনাদের কাছে শিশুদের মা-বাবারা এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আসেন, আপনারা কী ধরনের চিকিৎসা দেন?
উত্তর : আসলে প্রথম অবস্থায় বাচ্চারা যখন জ্বর নিয়ে আসে, একদিন, দুদিন, তিন দিন হলে তখন আমরা সাধারণত কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করি না। যদি দেখি ঠান্ডা-কাশি রয়েছে, তখন লক্ষণ দেখে চিকিৎসা দিই। শীত থেকে গরমে যাওয়া মানে শ্বাসকষ্ট হওয়া। মা-বাবাকে বলি, যদি জ্বর বাড়তে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে চলে আসবেন। তখন আমরা অ্যান্টিবায়োটিক দিই।
প্রশ্ন : অনেক মা-বাবা চান, শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হোক। তাঁরা চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করেন, ‘কেন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলো না?’
উত্তর : সব সময় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। এ জন্য মা-বাবাকে বুঝিয়ে দিতে হবে বিষয়টি। প্রথম পাঁচ দিনের জ্বরের মধ্যে যদি বাচ্চার সে রকম টক্সিক না হয়, বাচ্চার অন্য কোনো উপসর্গ না থাকে, তখন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় না। যদি বাচ্চার প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া থাকে, টাইফয়েডের উপসর্গ থাকে, তখনই অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। এ ছাড়া আমার মনে হয়, প্রথম পাঁচ দিনের জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন : ডেঙ্গু হয়েছে কি-না এটি আপনারা নিশ্চিত হোন কীভাবে?
উত্তর : আগে ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে পাঁচ দিন পর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখা যেত। এখন প্রথম দিন থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা যায়।
প্রশ্ন : ডায়রিয়া হলে মা-বাবাদের প্রাথমিক অবস্থায় কী করণীয়?
উত্তর : আসলে পাতলা পায়খানার জন্য ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া কিন্তু আর উপায় নেই। নয়তো বাচ্চা একদম নির্জীব হয়ে যাবে, নিস্তেজ হয়ে যাবে। এবং বাচ্চার পানিশূন্যতা বৃদ্ধি পেলে, সে শকে চলে যেতে পারে। এটি অনেক সময় কিডনিকে আক্রান্ত করে। পানি ও লবণ দুটোরই প্রতিস্থাপন দরকার, যেটি স্যালাইনের মাধ্যমে সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে এখানে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন : অনেক সময় মা-বাবারা ধারণা করেন, শীতের সময় স্যালাইনজাতীয় খাবার খেলে ঠান্ডা লেগে যাবে। এটি কি ঠিক?
উত্তর : এটা ঠিক নয়। যখন যেটা দিতে হবে, তখন সেটা দিতে হবে। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা।
প্রশ্ন : যেসব শিশু বুকের দুধ খায়, তাদের ডায়রিয়া হলে কি দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে? তাদের খাবারের বিষয়টি কী হবে?
উত্তর : যে বাচ্চারা ছয় মাস বয়সের নিচে থাকে, তাদের ডায়রিয়া হলে বুকের দুধ নিয়মিত খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিই। মায়ের দুধের পরিবর্তে আর কোনো দুধ খাওয়াবেন না। মায়ের দুধ থেকে ডায়রিয়া হয় না; বরং এটি প্রতিরোধ হয়। ডায়রিয়া হলে উপসর্গ অনুযায়ী স্যালাইন খাওয়ালে, এটি পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
প্রশ্ন : ডায়রিয়াজনিত সমস্যাগুলো কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে?
উত্তর : আসলে ডায়রিয়া তো খুব স্বাভাবিক জিনিস। একটি বাচ্চার ডায়রিয়া হলো, সেটি ঠিক হয়ে যাবে। তবে এতে যদি পানিশূন্যতা রোধ করা না যায়, তাহলে অনেক কিছুর সমস্যা হতে পারে। যেমন : শরীর থেকে পানি চলে গেলে শকে চলে যায়। এই পানিশূন্যতার জন্য অনেক বাচ্চার কিডনি আক্রান্ত হয়। কিডনি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। সেই কিডনিকে যদি একবার আক্রান্ত করে, তাহলে অনেক বেশি সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন : শিশুর সাধারণ জ্বরে মা-বাবার কী করণীয়?
উত্তর : মা-বাবারা জ্বর হলে অনেক কাপড়চোপড় পরিয়ে দেন। সে জন্য আমরা বলি, বাচ্চার যদি জ্বর একশর ওপরে হয়, তখন প্যারাসিটামল সিরাপ দিতে হবে। অনেক কাপড়চোপড় পরিয়ে না রেখে একটু খোলামেলা জায়গায় রাখতে বলি। আর জ্বর ১০২-এর ওপরে হলে শরীরে স্পঞ্জ করাতে বলি।
প্রশ্ন : শিশুর শরীরে স্পঞ্জ কীভাবে করলে ভালো হয়?
উত্তর : একটি তোয়ালে ভিজিয়ে শরীর স্পঞ্জ করতে হবে। পানি হবে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার মতো। ঠান্ডা পানি দেওয়া যাবে না।